scorecardresearch
 

Taliban Aggression: তালিবানি আগ্রাসনেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পঞ্জশের! জানুন ইতিহাস

এই উপত্যকাটিকে কোনও দিনই নিজেদের কব্জায় করতে পারেনি কেউ। সৌজন্যে পঞ্জশেরের শের আহমেদ শাহ মাসুদ(Ahmed Shah Mashood)। ৯/১১-র মার্কিন হানার দিন কয়েক আগেই যদিও তিনি আল-কায়েদা (Al Qaeda) জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে খুন হয়েছেন। কিন্তু বারংবার আক্রমণের হাত থেকে  পঞ্জশেরকে রক্ষ করে এসেছিলেন এই যোদ্ধা। বর্তমানে তাঁর সেই রেখে যাওয়া স্বপ্নকে বুক চিতিয়ে আগলে রেখেছেন ছেলে আহমেদ মাসুদ(Ahmed Masood)।

Advertisement
কাবুলে তালিবান বাহিনীর সদস্য কাবুলে তালিবান বাহিনীর সদস্য
হাইলাইটস
  • এই উপত্যকাটিকে কোনও দিনই নিজেদের কব্জায় করতে পারেনি কেউ
  • সৌজন্যে পঞ্জশেরের শের আহমেদ শাহ মাসুদ
  • বর্তমানে তাঁর সেই রেখে যাওয়া স্বপ্নকে বুক চিতিয়ে আগলে রেখেছেন ছেলে আহমেদ মাসুদ

ভয়াবহতার মাঝেই ছোট্টো একটি শান্তির প্রদেশ। অশান্ত আফগানিস্তানে(Afghanistan) এটাই যেন তালিবান(Taliban) আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গোর্জে ওঠার একমাত্র ইন্সপিরেশন। সেদেশে ১৯৮০-র রুশ আগ্রাসন থেকে ন'য়ের দশকের তালিবান ১.০ অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এই প্রদেশ। কোনও দিনই এখানে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি অশান্তির আবহ। 

হিন্দুকুশ(Hindu Kush Mountain) পর্বতের খুব কাছে, কাবুল(Kabul) থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই জনপদটি। নাম পঞ্জশের(স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ ৫টি সিংহ)(Panjshir Valley)। খাওয়াক পাস(Khawak Pass) এবং পঞ্জশের নদীর মাঝে অবস্থিত এই জনপদটি মধ্যযুগ থেকেই বাণিজ্যিক ভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। মূলত, এখানকার খনিতে উৎকৃষ্ট মানের পান্না(Emerald) পাওয়া যায়। যা বিশ্বের তাবড় দেশগুলিতে রপ্তানি করা হয়। ১৯৮৫ সালের তথ্য অনুযায়ী এখানে ১৯০ ক্যারাটের পান্নাও পাওয়া গিয়েছে, যা শুধুমাত্র কলোম্বিয়াতেই পাওয়া যায়। তাই বাণিজ্যিক লাভের আশায় আফগানিস্তানের এই ছোট্টো প্রদেশটি দখল করার চেষ্টায় প্রথমে আটের দশকে নামে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরে তালিবানরা।

Taliban_Soldier

 

কিন্তু মজার বিষয় হল, এই উপত্যকাটিকে কোনও দিনই নিজেদের কব্জায় করতে পারেনি কেউ। সৌজন্যে পঞ্জশেরের শের আহমেদ শাহ মাসুদ(Ahmed Shah Mashood)। ৯/১১-র মার্কিন হানার দিন কয়েক আগেই যদিও তিনি আল-কায়েদা (Al Qaeda) জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে খুন হয়েছেন। কিন্তু বারংবার আক্রমণের হাত থেকে  পঞ্জশেরকে রক্ষ করে এসেছিলেন এই যোদ্ধা। বর্তমানে তাঁর সেই রেখে যাওয়া স্বপ্নকে বুক চিতিয়ে আগলে রেখেছেন ছেলে আহমেদ মাসুদ(Ahmed Masood)। 

9_11_Attack_Social_Media

আফগানিস্তাকে তালিবানি আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে সেদেশের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালে ইতিমধ্যেই আহমেদ মাসুদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন। সালে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াকে ভাল ভাবে নেননি। তাই, গনির সঙ্গ ত্যাগ করে মাসুদের সাহায্য নিয়ে মরিয়া সালে সহ একাধিক প্রাক্তন নেতা। 

Advertisement
PanjShir_Valley

উল্লেখ্য,  আহমেদ শাহ মাসুদ ছিলেন একজন তাজিক কম্যান্ডার। মূলত, তাঁর নেতৃত্বেই সেখানে তৈরি হয়েছিল নর্দান অ্যালায়েন্স(Northern Alliance)। এই নর্দান অ্যালায়েন্সকেই পরবর্তী সময় ভারত সহ ইরান, তুরকি, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান সাহায্য করেছিল। তৈরি হয়েছিল শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী। সরকারি ভাবে যাকে ইউনায়টেড ইসলামিক ফ্রন্ট বলেই জানা হয়। ১৯৯৬ সালে এই ফ্রন্ট সরকারি ভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটায় এবং তৎকালীন সময় বুরহানুদ্দিন রব্বানি সরকারে যোগ দেয়। সেখানে মাসুদ স্বরাষ্টমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। শুরু থেকেই তালিবানদের বিরুদ্ধে নাছোড় মনোভাব তৈরি করে এগোতে থাকে এই ফ্রন্ট। কোনও পরিস্থিতিতেই বিনা যুদ্ধে আফগানিস্তানে তালিবানদের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তেও রাজি ছিলেন না মাসুদ। এমনকী ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বৈঠকে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করার আর্জিও জানান মাসুদ যাতে তারা(পাকিস্তান) তালিবানদের সাহায্য না করে। প্রসঙ্গত, তালিবানদের আর্থিক ও কূটনৈতিক ভাবে সাহায্য করে পাকিস্তান এবং তাদের ইন্টার সার্ভিস ইনটেলিজেন্স (ISI)। পরবর্তী সময়, তালিবান সরকার হঠিয়ে সেখানে শান্তি ফেরায় মার্কিন সেনা। তৈরি হয় অন্তর্বতী সরকার। সেই মার্কিন সেনাও একটা সময় এই নর্দান অ্যালায়েন্সের সাহায্য নিয়ে লড়েছিল তালিবানদের বিরুদ্ধে। 

তালিবান ১.০ সরকারের সময়, এই ফ্রন্ট প্রথমত ভেঙে যায়, কারণ সেই সময় কিছু নেতা বিচ্ছিন্ন হয় যান এই সংগঠন থেকে। তাঁরা পরবর্তী সময় হামিদ কার্জাই সরকারের যোগ দেন। কিন্তু, পরিস্থিতি যাই হোক কেনও তখনও পঞ্জশের দখল করতে পারেনি তালিবানরা। বর্তমান পরিস্থিতিতেও, দেশের ৯০ শতাংশ দখল করেছে এই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে অরাজকতা। খুন,জখম, অত্যাচার ও আতঙ্কের বার্তা নিয়ে এসেছে তালিবানরা। দেশছেড়ে পালাচ্ছেন নাগরিকরা। তবুও, তার মাঝেও শান্তি বিরাজ করছে এই ছোট্টো জনপদটিতে। কী তাঁদের শক্তি? কেনও পারে না কেউ এই জনপদটি দখল করতে? তা কিন্তু এখনও রহস্যই থেকে গেছে।    

    

Advertisement