প্রয়াত হলেন ভারতের বিজ্ঞাপন দুনিয়ার কিংবদন্তি পীযূষ পাণ্ডে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজের মাধ্যমে ভারতের বিজ্ঞাপনের ভাষা, ভঙ্গি ও ভাবনা বদলে দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৫৫ সালে জয়পুরে জন্ম পীযূষের। নয় ভাইবোন। দাদা প্রসূন পাণ্ডে খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা। বোন ইলা অরুণ জনপ্রিয় গায়িকা। ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেছেন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে। রঞ্জি ট্রফির ক্রিকেটারও ছিলেন।
২৭ বছর বয়সে, ১৯৮২ সালে ওগিলভিতে যোগ দেন। তখন বিজ্ঞাপন মানেই ছিল ইংরেজি, বিদেশি ভাবনা আর গ্ল্যামারাস কিছু দেখানো। কিন্তু পীযূষই প্রথম বিজ্ঞাপনে মাটির ছোঁয়া আনতে শুরু করেন। মাটির ভাষা, সাধারণ জীবনের গল্প আর সহজ সংলাপই ছিল তাঁর USP।
ফেভিকল: ‘ফেভিকল কা মজবুত জোড়’: এক বাস ভর্তি যাত্রী, কিন্তু কেউ পড়ছে না। একটাও কথা ছাড়াই যে গল্প বলা যায়, সেই বিশ্বাসই গড়ে দিয়েছিলেন পীযূষ।
ক্যাডবেরি: ১৯৯৩ সাল। ক্যাডবেরি তখন রীতিমতো সঙ্কটে। তখনই এল পীযূষের কোম্পানি তাঁকে ডেকে পাঠাল। ‘কুছ খাস হ্যায়’ তৈরি করলেন তিনি। অনেকেরই সেই মনে আছে। খেলা জিততেই একটি মেয়ে মাঠে নেমে নাচছে, আনন্দে ভরে যাচ্ছে মাঠ। সেই এক মুহূর্তেই বদলে গিয়েছিল ভারতের বিজ্ঞাপন জগতের দৃষ্টিভঙ্গি।
এশিয়ান পেইন্টস:‘হর ঘর কুছ কেহতা হ্যায়’, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিনি দেখালেন, বাড়ি মানেই শুধু ইট-পাথরের দেওয়াল নয়, একটি অনুভূতির জায়গা। পরিবারের হাসি, রঙ, ভালোবাসা, সব মিশে থাকে সেখানে। সেটাই বিজ্ঞাপনে তুলে ধরেন।
হাচের পাগ: ‘ইউ অ্যান্ড আই ইন দিস বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড’, ছোট্ট পাগ কুকুরটির কথা মনে আছে? সরল, মিষ্টি একটি গল্প। আর সেটাই সবার মন জয় করে নিয়েছিল।
ভোডাফোনের জুজু: ২০০৯ সালের আইপিএলে ভোডাফোন জুজু আনে। মুহূর্তেই তারা মন জয় করে। পীযূষ বলেছিলেন, 'আমি জীবনে এর চেয়ে সহজ অথচ সৃষ্টিশীল কমিউনিকেশন দেখিনি।'
‘দো বুন্দ জিন্দগি কে’: পোলিও নির্মূল অভিযানের এই বিজ্ঞাপনে অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল ‘ধিক্কার হ্যায় হম পর’। বলেছিলেন, 'দো বুন্দ, জিন্দেগি কে'। সেই বার্তাই দেশের হাজার হাজার মাকে ছুটে যেতে বাধ্য করেছিল টিকাকেন্দ্রে। বিজ্ঞাপনের শক্তিই তখন সমাজকে বদলে দিয়েছিল।
‘মিলে সুর মেরা তোমহারা’: ১৯৮৮ সালে লেখা এই গানে ১৪টি ভাষায় ছিল এক সুর। স্বাধীনতার দিন প্রচারিত সেই গান হয়ে উঠেছিল জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। পীযূষ পাণ্ডে দেখিয়েছিলেন, বিজ্ঞাপন মানে শুধু ব্যবসা নয়, এ এক গল্প বলার শিল্প।