চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে টেলিপাড়ায়। এবার একজোট হল আর্টিস্ট ফোরাম (West Bengal Motion Picture Artist Forum) ও প্রোডিউসার্স গিল্ডের (Welfare Association Of Television Producers) মধ্যে। তাদের মধ্যে ঐতিহাসিক মৌ-চুক্তি (Memorandum of Understanding) স্বাক্ষরিত হল আগামী ৩ বছরের জন্য।
গত ১২ অগাস্ট ছিল আর্টিস্ট ফোরামের ২৪ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। আর এদিনই একেবারে খাতায়-কলমে চুক্তি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা হল। এতদিন সদস্যরা শুধুমাত্র মৌখিক এবং কিছু আংশিকভাবে স্বীকৃত নিয়মবিধি অনুসরণ করে বিভিন্ন টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করছিলেন। এই প্রথমবার একটি সার্বিক এবং লিখিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হল।
এদিন চুক্তিতে সই করলেন প্রোডিউসার্স গিল্ডের সভাপতি শ্রী শৈবাল ব্যানার্জী এবং সম্পাদক শ্রী সানি ঘোষ রায়। ফোরামের পক্ষ থেকে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন শান্তিলাল মুখার্জী ও শঙ্কর চক্রবর্তী। সাক্ষী হিসাবে চুক্তিতে সই করলেন দিগন্ত বাগচী ও সোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। এই চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে সমস্ত ধারাবাহিকে কাজ করবেন ফোরামের সদস্যরা।
আর্টিস্ট ফোরামের তরফ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে যুগ্ম সম্পাদক শান্তিলাল মুখার্জী জানান, " এই ঐতিহাসিক মৌ-চুক্তিকে সার্থক রূপ দেওয়ার জন্য ফোরাম আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি। তাঁর নির্দেশে এবং মাননীয় মন্ত্রী শ্রী অরূপ বিশ্বাস, বিশিষ্ট পরিচালক শ্রী রাজ চক্রবর্তী ও স্বনামধন্য অভিনেতা শ্রী পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় পুরো বিষয়টি ত্বরান্বিত হয়। টেলিভিশন প্রযোজকদের সংস্থা WATP এবং তার প্রতিটি সদস্যের সক্রিয় সহযোগিতা এবং ফোরামের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল এই চুক্তি। এছাড়া ফোরামের বেশ কিছু দায়িত্বশীল সদস্য এই বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সুপরামর্শ দিয়েছেন। বহু মানুষের সমষ্টিগত প্রচেষ্টার ফসল, এই মৌ-চুক্তি, আগামীদিনে সকল ফোরাম সদস্যকে এগিয়ে চলার পথে দিকনির্দেশ করবে বলে আমরা বিশ্বাস রাখি। ফোরামের সকল সদস্যকে খুব শীঘ্রই এই মৌ-চুক্তি সম্পর্কে বিশদে অবহিত করা হবে। আপাতত, এই সুখবরটি পরিবেশিত হল।"
নতুন এই ১৩ পাতার চুক্তিতে শিল্পীদের কাজের নির্ধারিত সময়সীমা বেধে দেওয়া, নির্দিষ্ট সময় পারিশ্রমিক দেওয়া ও অযথা দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে না রাখার মতো কথাগুলি রয়েছে। তবে এটি ফেডারেশন (Federation of Cine Technicians & Workers of Eastern India) -র চুক্তির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
প্রসঙ্গত, টেলিপাড়ার শ্যুটিংয়ের সমস্যা কিছুতেই কাটছিল না। কার্যত লকডাউনের বিধি নিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ার পর মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়দের প্রতিনিধিত্বে ফেডারেশন, আর্টিস্ট ফোরাম এবং প্রোডিউসার্স গিল্ডের মিলিত বৈঠক হয়। সেখানে পুনরায় শ্যুটিং চালুর সিদ্ধান্ত হয়। তবে সেই সময় নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়, ফেডারেশনের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর। নতুন সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, পুরনো ধারাবাহিকের কাজ চালু থাকলেও যতক্ষণ না মউ স্বাক্ষরিত হচ্ছে, ততক্ষণ নতুন ধারাবাহিকের কাজ বন্ধ থাকবে। আর এরপরই ফের নতুন করে বিপাকে পড়েছিল প্রযোজক মহল থেকে শিল্পীরা।
এরপর স্বরূপ বিশ্বাস, অরুপ বিশ্বাস, রাজ চক্রবর্তী এবং প্রযোজক মহলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে নিজেদের মধ্যে সমস্ত সমস্যা মিটিয়ে নেন সকলে। শুরু হয় স্থগিত থাকা নতুন ধারাবাহিকগুলির শ্যুটিং। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ২০ জুলাইয়ের মধ্যে নয়া গাইডলাইন তৈরি হয়ে, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত ভাবে তা কার্যকর করা হবে। শোনা যাচ্ছিল গত তিন বছর ধরে মউ স্বাক্ষর আটকে রয়েছে এবং স্বাক্ষরে থাকা অনেক বিষয় নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল ফেডারেশন ও প্রোডিউসার্স গিল্ডের মধ্যে। তবে যতদিন না নতুন গাইডলাইন আসছিল, পুরনো মউ -র নিয়মবিধি মেনেই টেলিপাড়ায় শ্যুটিং চলছিল।