আজ অর্থাৎ শুক্রবার ঘোষণা হল ৬৮ তম জাতীয় চলচ্চিত্র (68th National Film Awards) পুরস্কারের বিজয়ীদের নাম। করোনা অতিমারীর জন্য গত বছর, প্রায় বছর খানেক পিছিয়ে গিয়েছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের দিন। এবছরও নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু'মাস পরে, নয়াদিল্লির জাতীয় মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে সামনে আনা হল বিজয়ীদের তালিকা। এদিন কারা পেলেন সেরার সেরা পুরস্কারগুলি (68th National Film Awards Winners)?
৬৮ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা বাংলা ছবি (Best Bengali film) শুভ্রজিৎ মিত্রের (Subhrajit Mitra) 'অভিযাত্রিক' (Avijatrik)। এই ছবির ঝুলিতে এসেছে আরও একটি পুরস্কার। সেরা সিনেমাটোগ্রাফির (Best Cinematography) পুরস্কারও পেয়েছে এছবি। সুপ্রতীম ভোল (Supratim Bhol) পেলেন এই পুরস্কার।
গত ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পায় 'অভিযাত্রিক'। মুক্তির আগে দীর্ঘদিন আলোচনায় ছিল এই ছবি। গোটা বিশ্বের একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার ও প্রশংসা কুড়িয়েছে 'অভিযাত্রিক'। ছবিতে অভিনয় করেছেন অর্জুন চক্রবর্তী, দিতিপ্রিয়া রায়, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, সব্যসাচী চক্রবর্তী, তনুশ্রী শংকর, সোহাগ সেন, বরুন চন্দ ও অন্যান্যরা। ছবির সঙ্গীত আয়োজন করেছেন, পারকাশনিস্ট বিক্রম ঘোষ। 'পথের পাঁচালী'-র থিম মিউজিকটি নিজের মতো করে তৈরি করেছেন অনুষ্কা শংকর।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'অপরাজিত' (Aparajito) উপন্যাসের শেষভাগ নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘অভিযাত্রিক’। সত্যজিৎ রায় ‘অপু ট্রিলজি’ (Apu Trilogy) যেখানে শেষ করেছিলেন, ১৯৫৯-র ‘অপুর সংসার’ (Apur Sangsar) -এর সেই দৃশ্যের ঠিক পরের থেকেই শুরু এই ছবির চিত্রনাট্য।
সুপ্রতীম ভোল জানালেন, "এটা আমার স্বপ্নের থেকেও আমার বাবার স্বপ্নপূরণ। বাবা ভাবতেন যে, আমি কোনও না কোনও দিন জাতীয় পুরস্কার পাবো। সেটা 'অভিযাত্রিক'-র জন্য হয়েছে এটাতে আমি খুব খুশি। অনেক কষ্ট করে ছবিটা শ্যুট করা, খুব অল্প দিনের মধ্যে। আমার দুটো ছবি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে, আমি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি, এটা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের একটা বড় প্রাপ্তি। আমার পরিবারের সকলে দারুণ খুশি। তবে এটায় দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। আমি যে ছবিতেই কাজ করব, সেটার ক্ষেত্রে আরও বেশি দায়িত্ববান ও সাবধানী হয়ে যাতে শ্যুট করতে পারি সেই চেষ্টা করব। আগামী দিনে অবশ্যই চেষ্টা করব, যে ভাষাতেই কোনও ছবি করি না কেন, যেন যথাযথ মর্যাদা দিতে পারি।"
শুভ্রজিৎ মিত্রের কথায়, "আমি ক্লাউড নাইনে। দেশের সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়া, আমার ও আমার টিমের সদস্যদের জন্য যেমন গর্বের। সেরকম বাঙালিদের জন্যও গর্বের। এই সম্মানটি আমি ডেডিকেট করছি আমার বাবার উদ্দেশ্যে, যেহেতু বাবা দেখে যেতে পারেননি। উনি জানতেন আমি ছবিটা করছি। ভাল ছবি বানানোর চেষ্টা আমরা সবাই করেছি। কিন্তু এটা অবশ্যই সম্ভব হয়েছে এই ছবির প্রযোজকদের জন্য। খবরটা যেমন খুব আনন্দের, সেরকম কিছু মানুষকে খুব মিসও করছি। সম্পূর্ণ বিষয়টা সামলাতে কিছুটা সময় লাগবে। সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।"
উচ্ছ্বসিত পরিচালক সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করে লিখেছেন, "আমরা শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র এবং শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফির জাতীয় পুরস্কার জিতেছি...।"
তাঁর অভিনীত ছবি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এই মুহূর্তে দারুণ খুশি অভিনেতা অর্জুন চক্রবর্তী। তিনি জানালেন, "অসম্ভব ভাল লাগছে, সবাই খুব কষ্ট করে ছবিটা বানিয়েছি। এখন এই স্বীকৃতি পেয়ে ভীষণ ভাল লাগছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জ্যুরি সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই। এছাড়াও আমাদের পরিচালক ও প্রযোজকদেরও অনেক ধন্যবাদ, আমার উপর বিশ্বাস রেখে 'অপু' চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেওয়ার জন্য। আমাদের সিনেমাটোগ্রাফার সুপ্রতীম ভোলকে অনেক শুভেচ্ছা। এই পুরস্কার দুটো আমাদের সম্পূর্ণ টিমের। সেই সঙ্গে দর্শকদেরও অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই।"
এছারাও সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন অপর্ণা বালামুরালি (Aparrna Balamurali)। সুরিয়া (Suriya) ও অজয় দেবগন (Ajay Devgn) যৌথভাবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন। সেরা ছবি- সচ্চিদানন্দন কে আর পরিচালিত মালয়ালম ছবি 'এ কে আয়াপ্পানম' (AK Ayyappanum Koshiyum)। সেরা ফিচার ছবি সুধা কোঙ্গারা পরিচালিত 'সুরারই পট্টরু' (Soorarai Pottru)।' সেরা সুরকার- 'সাইনা'র জন্য মনোজ মালয়ালম। সেরা সঙ্গীত পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ ('১২৩২ কিলোমিটার মারেঙ্গে তো ওহি জাকর' গানটির জন্য)। সেরা সামাজিক বিষয় নিয়ে তৈরি ছবি -'জাস্টিস ডিলেইড বাট ডেলিভারড' এবং 'থ্রি সিস্টার্স'। সেরা বিনোদনমূলক ছবির সম্মান পেল ‘তানাজি: দি আনসাং ওয়ারিয়র’ (Tanhaji: The Unsung Warrior)।
এবছর, ৩০টি ভিন্ন ভাষায় ৩০৫টি ফিচার ফিল্ম এসেছিল। নন-ফিচার ফিল্ম বিভাগে, ২৮ টি ভাষায় ১৪৮ টি চলচ্চিত্র এন্ট্রি হিসাবে গৃহীত হয়। সংবিধানের অষ্টম তফসিলে উল্লেখ করা ছাড়া ১৫ টি ভাষার ছবি এন্ট্রি হিসাবে গৃহীত হয়েছিল।