ম্যাকবেথ, তাঁর বউ লেডি ম্যাকবেথ, তিনজন উইচ বা ডাইনি এবং রাজা ডানকান- এই চরিত্রগুলো এখন বাঙালির ঘরের চরিত্র হয়ে উঠেছে। ম্যাকবেথকে বিষয়বস্তুকে তৈরি হওয়া জনপ্রিয় সিরিজটির পর কিছুদিনের মধ্যেই আসতে চলেছে পরিচালক রাজর্ষি দে-র সিনেমা 'মায়া'।
এই ছবিতেই এপার বাংলায় আত্মপ্রকাশ হবে সৃজিত-ঘরনী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার। তিনি 'মায়া' (লেডি ম্যাকবেথ)-র চরিত্রে। এর পাশাপাশি এই ছবি দিয়ে বাংলা কমার্শিয়াল ছবির জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলেছে আরও একজনের, লেখক এবং ঈপ্সিতার।
কাজের অভিজ্ঞতা
কেমন লেগেছে কাজ করতে? এবং ঈপ্সিতা বলেন, "ছোটবেলায় যখন ম্যাকবেথ পড়ি, তখনই মনে হয়েছিল এই কাহিনি শুধু স্কটল্যান্ডের নয়, হতে পারে না। এই কাহিনি মানুষের জীবনের, সর্বকালের। যদিও তখন অত ভাল করে বুঝতে পারিনি। পরে পড়তে গিয়ে এবং পড়াতে গিয়ে ধীরে-ধীরে অনেক পরিষ্কার ভাবে মনস্তত্ত্বে ধরা দেয় ম্যাকবেথ। রাজর্ষি দা (পরিচালক রাজর্ষি দে) যখন লেখার দায়িত্ব দেন, তখন আবার নতুন করে ভাবতে বসি। নির্দেশক নিজেই তুখোড় লেখক। ফ্যাতাড়ুর নাট্যরূপ যিনি দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পারাটাই আমার মতো নতুন লেখকের কাছে একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। বলা যায় খানিকটা সাহস করেই ইন্টারপ্রিটেশন করতে শুরু করি।
উৎসাহ দিয়েছেন পরিচালক
এই কাজে নির্দেশক সাহস জুগিয়েছেন। তাই কাজ এগিয়ে তরতর করে। জানাচ্ছেন তিনি। বলেন, "কল্পনা করার সাপোর্ট না দিলে, কখনই সেই সাহস পেতাম না। পরবর্তী সময়ে নির্দেশক টেকওভার করেন লেখাটি। 'মায়া'য় তিনজন উইচের ক্যারেক্টার ভিন্ন ভিন্ন নারী চরিত্রের মধ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং ম্যাকবেথের চরিত্রের অনেকটা অংশই মিলেমিশে গিয়েছে লেডি ম্যাকবেথের সঙ্গে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা এখনই সম্ভব নয়। ছবিটা রিলিজ করলে দর্শক এক্সপিরিয়েন্স করবেন নিজের মতো।"
আরও পড়ুন: নবদ্বীপের চরকি, সবংয়ের গাছবোমা-জলবোমা, কোন এলাকায় কোন বাজি বিখ্য়াত?
ম্যকবেথের একটি ইন্টারপ্রিটেশন ইতিমধ্যেই তুখোড় জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যদি আপনাদের কাজটা অতটা জনপ্রিয় না হয়, তখন? ভয় করছে না? আপনার কেমন লেগেছে ওঁদের কাজ? ঈপ্সিতা বলেন, "একেবারেই না। বহু বছর ধরে বিশ্ব এবং ভারতীয় সিনেমা-থিয়েটারে ম্যাকবেথ হয়ে এসেছে। আগামী সময়েও হবে। ক্লাসিক তো এই রকমই হয়। যুগোত্তীর্ণ, সময়কে ছাপিয়ে যায়। অনেকগুলো কাজের চাপে নতুন সিরিজটা দেখা হয়ে ওঠেনি। তবে দেখব তো নিশ্চয়ই। আমরা হয় তো একভাবে তাকিয়েছি, ওঁরা তাকিয়েছেন আর এক রকম ভাবে। একটা প্রকৃত 'টেক্সট'কে এত রকম ডিকনস্ট্রাকশনের প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে, আমি আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে অতটা হিসেবই করতে পারি না।"
তিনি বলেন, "অগ্রজদের কাজ আমার কাছে সব সময় শিক্ষনীয়। তাছাড়া ওখানে প্রচুর বন্ধু কাজ করেছেন। তাঁরা সব দুর্দান্ত পারফর্মার। দেখতে তো হবেই। তবে নির্দেশক হিসেবে রাজর্ষি দা-র ওপরে আমার পুরো আস্থা আছে। আমি জানি আমাদের কাজটাও একটা দারুণ কিছু হবে।"
শেক্সপিয়রের কাজ পরীক্ষা?
শেক্সপিয়র নিয়ে অদলবদলে ভয় নেই? তিনি বলেন, "ভয় তো আছেই। অনেক বড় বড় সমালোচক আছেন, যাঁদের পছন্দ না-ও হতে পারে। তাঁদের মনে হতে পারে, এটা ঠিক ভাবে দেখানো হল না। তবে আমার মনে হয়, শুধু ম্যাকবেথের গল্পটুকু মাথায় রেখে দেখলে, সঠিক বিচার করা হবে না। ওই যে বললাম প্রকৃত অর্থেই টেক্সট, তাকে বিভিন্ন ভাবে দেখা সম্ভব। তার এমন উপাদান আছে, যা নিয়ে এখনও কাজ করা যায়। তাঁদের অতিক্রম না করেও (চাইলেও করা সম্ভব না) নতুন ভাবে বিশ্লেষণ করা যায় বলে মনে হয়।
অভিনেতা থেকে লেখক
আপনি নিজে অভিনেতা। তাই কি লিখতে কোনও সুবিধা হয়? তাঁর জবাব, "হ্যাঁ, তা খানিকটা হয় বই কি। লেখার সময় মাথার মধ্যে অভিনয়-সহ ডায়লগ চলতে থাকে। স্ক্রিপ্ট তো লুক অ্যান্ড পজ় সমেত লিখি। সব চরিত্র অনেকের কাছে কাল্পনিক হতে পারে, লেখকদের কাছে মোমেন্ট অফ পজ় থেকে শুরু করে স্লো মোশনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানো পর্যন্ত ভীষণ রকম রিয়েল। যখন একটা লেখার মধ্যে থাকি, তখন বন্ধুবান্ধব, বাড়ির লোক- সবার সঙ্গে তাঁদের অজান্তেই সেই সমস্ত ডায়লগে কথা বলে দেখি অতি নাটকীয় লাগছে কি না। একটু একটু অভিনয়ও করে নি। আসলে অভিনয় করার নেশাটা এমন একটা জিনিস অস্বীকার করা মুশকিল। আমার মনে হয় লেখালিখি আমার অভিনয়কে কোথাও গিয়ে পুষ্ট করে এবং অবশ্যই ব্যাপারটা ভাইস-ভার্সা।"
নতুন লেখক হিসেবে বা 'মহিলা লেখক' হিসেবে কিছু বলতে চান? তাঁর ব্য়াখ্যা, "এই তো সবে গুটি-গুটি পায়ে হাঁটতে শুরু করেছি। এখনই কী বলব! আমি একজন অভিনেতা এবং লেখক। এখন আরও অনেক অনেক শিখতে চাই, এক্সপ্লোর করতে চাই, অনেকের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তবে আমি আলাদা করে রাজর্ষি দা-কে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমার মতো নতুন লেখককে তিনি এত বড় কাজে শামিল করেছেন, এমন ভাবে আপন করে নিয়েছেন- আমার কাছে আশাতীত। আশা করছি আমি তাঁর এক্সপেক্টেশন পূর্ণ করতে পেরেছি এবং আমাদের কাজটা দুর্দান্ত হয়েছে।