মুক্তি পাওয়ার আগেই একের পর এক পালক জুড়েছে শুভ্রজিত মিত্রের (Subhrajit Mitra) ছবি 'অভিযাত্রিক'-র (Avijatrik) মুকুটে। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে স্ক্রিনিং হওয়ার পর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ছবিটি। ২৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (Kolkata International Film Festival / KIFF) -এ প্রশংসা কুড়িয়ে এবার IFFI- রওনা দেবেন টিম 'অভিযাত্রিক'। গোয়ায় যাচ্ছেন পরিচালক শুভ্রজিৎ, অর্জুন চক্রবর্তী (Arjun Chakraborty), দিতিপ্রিয়া রায় (Ditipriya Roy) ও প্রযোজক গৌরাঙ্গ জালান (Gouranga Jalan)।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা অপরাজিত উপন্যাসের শেষভাগ নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘অভিযাত্রিক’। সত্যজিৎ রায় (Satyajit Roy) যেখানে ‘অপু ট্রিলজি’ (Apu Trilogy) শেষ করেছিলেন, ১৯৫৯-র ‘অপুর সংসার’-র (Apur Sangsar) সেই দৃশ্যের ঠিক পরের থেকেই শুরু এই ছবির চিত্রনাট্য। অপরাজিত উপন্যাসের শেষ ৪০ শতাংশ নিয়ে তৈরি হয়েছে অভিযাত্রিক। সাদা-কালো ফ্রেমে বেনারস, উত্তরবঙ্গ, দুনকা, উত্তর-পূর্ব ভারত, টাকি, বোলপুর ও কলকাতাকে ৪০ দশকের প্রেক্ষাপটে দেখিয়েছেন পরিচালক। 'অভিযাত্রিক' নিয়ে আজতক বাংলার সঙ্গে কথপোকথনে শুভ্রজিত মিত্র।
দীর্ঘদিনের গবেষণা ও কঠোর পরিশ্রমের ফল 'অভিযাত্রিক'। 'অপুর ট্রিলজি' একটা জায়গায় গিয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই উপন্যাসটা শেষ করার একটা ইচ্ছে ছিল পরিচালকের। তিনি জানালেন, "বিভুতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় যতটা উপন্যাস লিখেছিলেন, আমার ছবিতে ততটা আছে। এরপর তাঁর ছেলে তারাদাশ বন্দোপাধ্যায় আবার কাজলকে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। সেই গল্পে আবার অপু মারাও যায়। সেইভাবেই ছবি আবার এগিয়ে নিয়ে যাবো নাকি এটাই বেস্ট এন্ডিং সেটা দর্শকেরা বিচার করবেন।"
শুভ্রজিতের পরের দুটো ছবির কাজ চলছে এই মুহূর্তে। 'মায়ামৃগয়া' ও ' আরণ্যক' দুটোই কালজয়ী লেখকের লেখা। এই ধরণের কাজ পরপর কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে টলি উন্ডাস্ট্রির দিকেই তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন। পরিচালক বললেন, "এগুলো আগে হয়নি কেন? আমার মনে হয় এই ছবিগুলো হওয়া দরকার। সঠিক ভাবে গবেষণা করে বাংলা সাহিত্য নিয়ে যে সব ক্লাসিকগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভাল কাজ হওয়া দরকার। বাংলা সাহিত্যে এতজন মনি মানিক্য রয়েছেন, সেখান থেকে আমরা ধার নিতে পারলে বাংলা চলচ্চিত্র সমৃদ্ধ হবে। সিনিয়ারদেরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত। আর আমাদের প্রজন্মের কাছে এখন অবশ্যই সেই দায়িত্ব বর্তায়।"
ছবিতে অপুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অর্জুন চক্রবর্তী। ছবির চিত্রনাট্যের বাঁধনে ফিরে এসেছে দুর্গা, অপর্ণা, রাণু দি এমনকি লীলাও। লীলার ভূমিকায় রয়েছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। দিতিপ্রিয়া রায় রয়েছেন অপর্ণার চরিত্রে। এছাড়াও রয়েছেন আরও অন্যান্যরা। অভিনেতাদের কী মাথায় রেখে বেছেছিলেন? শুভ্রজিত জানালেন, "লেখার সময়েই কল্পনা করছিলাম। সেই কল্পনার সঙ্গে যেগুলো মিলে গেছে, সেই হিসেবেই অভিনেতাদেরই বেছে নেওয়া হয়েছে।"
ভয় কতটা লেগেছিল এই ঝুঁকিটা নিতে? শুভ্রজিতের উত্তর, " (হেসে) নন্দনে প্রথম স্ক্রিনিংয়ের আগের দিন আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। যাঁদের দেখে কাজ শিখেছি এটা তাঁদের জন্যে আমার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। তবে আমি না চাইলেও দর্শকেরা তুলনা করবেই এবং সেটাও করবেন মাস্টারদের সঙ্গে। আমি চিরকাল দুঃসাহসী কাজ করতে ভালবাসি। তাই করে ফেললাম।"
২৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে, নন্দনে প্রথম ও চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবনে দ্বিতীয় স্ক্রিনিং হয় শুভ্রজিত মিত্রের 'অভিযাত্রিক'-র। ইতিমধ্যে প্রশংসিত বহু প্রতীক্ষিত এই ছবি। বুধবার ছবির দ্বিতীয় দিনের স্ক্রিনিংয়ে শো ছিল 'হাউজ ফুল'।
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর ইন্ট্যারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়ায় (International Film Festival / IFFI) নিজের জায়গা করে নিয়েছে 'অভিযাত্রিক'। ৫১ তম ইফির ইন্ডিয়ান প্যানোরামা বিভাগের জন্য মনোনীত হয়েছে এই ছবি। কলকাতা স্ক্রিনিংয়ের ফর এবার গোয়ার জন্য প্রস্তুত টিম।