বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার মালদার চাঁচলের নাবালিকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নিখোঁজ হয়ে যায় ওই নাবালিকা। বিয়ের প্রলোভন দিয়ে এক যুবক ওই নাবালিকাকে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ঘটনা লিখিত অভিযোগ হতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে কোচবিহার দিয়ে ওই নাবালিকাকে বাংলাদেশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে মালদা জেলা পুলিশ।
অবশেষে বাংলাদেশে উদ্ধার করা হয় ওই নাবালিকাকে। পেট্রাপোল সীমান্তে ওই নাবালিকাকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশ পুলিশ। গোপন জবানবন্দি দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার ওই নাবালিকাকে চাঁচল মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকার বাড়ি চাঁচল ১ নম্বর ব্লকের মকদুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি গ্রামে। বাবা পেশায় টোটোচালক। মা গৃহবধূ। মেয়েটি এলাকারই একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে মেয়েটি এলাকারই এক যুবকের পাতা প্রেমের ফাঁদে পা দেয়। ওই যুবক যে বিবাহিত, তা সে জানতে পারেনি। কিছুদিন প্রেম করার পর যুবকটি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেয়। প্রেমে অন্ধ হয়ে মেয়েটি প্রেমিকের কথায় ভরসা করে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একদিন সে ছেলেটির হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে পালায়। চারদিকে খোঁজাখুঁজি করেও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চাঁচল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির বাবা।
দীর্ঘ তদন্তের পর অবশেষে গতকাল বাংলাদেশ পুলিশ পেট্রাপোল সীমান্তে মেয়েটিকে চাঁচল থানার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। চাঁচল থানার এএসআই ওবাইদুর রহমান মেয়েটিকে বুধবার চাঁচল থানায় নিয়ে আসে। তারপর তাকে তুলে দেওয়া হবে শিশু কল্যান বিভাগের হাতে।গোপন জবানবন্দি দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার ওই নাবালিকাকে চাঁচল মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। এই খবর চাউর হতেই চাঁচল থানার পুলিশকে প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন এলাকাবাসী।
চাঁচল থানার আইসি সুকুমার ঘোষ জানাচ্ছেন,২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে পালায় এক যুবক। তদন্তে নেমে আমরা মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে জানতে পারি, মেয়েটিকে প্রথমে কাটিহার, সেখান থেকে কোচবিহার, দিনহাটা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারপর আর ফোনের টাওয়ার লোকেশন জানা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত দিনহাটা গিয়ে জানা যায়, ওই যুবক মেয়েটিকে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় নিয়ে গিয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপারের পরামর্শে আমরা সিআইডি, ভারতীয় হাইকমিশন ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি। মেয়েটিকে উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা নেয় বাংলাদেশ পুলিশও। তারাই মেয়েটিকে উদ্ধার করে কক্সবাজার শেলটার হোমে পাঠায়। গ্রেফতার করে ওই যুবকটিকেও। এরপর সেদেশের আদালতের নির্দেশে গতকাল রাতে বাংলাদেশ পুলিশ বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে মেয়েটিকে চাঁচল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দেওয়ানোর জন্য বৃহস্পতিবার মেয়েটিকে আমরা আদালতে পেশ করছি। তবে মেয়েটির কাউন্সেলিং প্রয়োজন। আমরা আইন মেনে মেয়েটিকে জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে তুলে দেব। পুলিশের এমন তৎপরতায় খুশি গোটা চাঁচলবাসী।