সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হানিট্র্যাপের ঘটনা প্রতিদিনই খবরে থাকে। কিন্তু গুরুগ্রামের ইউটিউবার নিজেই হানিট্র্যাপের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ওই মহিলা ইউটিউবারের বিরুদ্ধে একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত ইউটিউবারের নাম নমরা কাদির। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নমরাকে গ্রেফতার করে। যদিও তার স্বামী বিরাট বেনিওয়াল এখনও পলাতক।
২৪ নভেম্বর ২০২২ - হরিয়ানার গুরুগ্রামে বসবাসকারী একজন ব্যবসায়ী পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তারপর তিনি নিজেই গুরুগ্রামের সেক্টর-৫০ থানায় যান এবং সেখানে গিয়ে পুলিশকে ঘটনাটি জানান। ওই ব্যবসায়ী পুলিশকে জানান, এক সুন্দরীর ফাঁদে তিনি আটকা পড়েন। ওই মেয়েই প্রথমে ব্যবসায়ীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। তারপর তাকে তার প্রেমের ফাঁদে ফেলে। কিন্তু কিছুদিন পর সেই সুন্দরী মেয়েটির বাস্তবতা সামনে আসে। সে ব্যবসায়ীকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। এরপর ওই হাসিনা তার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। ব্যবসায়ীর কাছে পুরো ঘটনা শুনেছে পুলিশ। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে। এবং ওই প্রতারক তরুণীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।
সুন্দরী মেয়ে যার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিং মামলা করেছেন ব্যবসায়ী। তার নাম নমরা কাদির। যিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ বিখ্যাত। তার ইউটিউব চ্যানেলে ৬ লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। এবং ২ লাখেরও বেশি ইউজার তাকে ইনস্টাগ্রামে অনুসরণ করেন। তিনি দেখতে খুব সুন্দর। এই কারণেই যে কোনও পুরুষ সহজেই তার ফাঁদে আটকে যেতে পারে। নমরা বিবাহিত। তার স্বামীর নাম বিরাট বেনিওয়াল।
পুলিশের কাছে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী নমরার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। ব্যবসায়ীর মতে, নমরা তার কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। স্বামী বিরাট বেনিওয়ালও তাকে এই কাজে সহযোগিতা করছিলেন। দুজনেই তাকে ধর্ষণের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে টাকা আদয় করে। ওই ব্যবসায়ী পুলিশকে জানান, সোহনা রোডের রেডিসন হোটেলে কাজের সূত্রে নমরা কাদিরের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়। তিনি একজন ইউটিউবার। তার ভিডিওগুলো আগে দেখেছেন ওই ব্যবসায়ী।
একই সময়ে নমরা ব্যবসায়ীকে বিরাট বেনিওয়ালের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেছেন যে তিনি একজন ইউটিউবার এবং তার বন্ধু। এই বৈঠকে নমরা ব্যবসায়ীর ফার্মে কাজ করতে রাজি হন এবং ২ লাখ টাকা অগ্রিম চেয়েছিলেন। এরপর ওই দিনই নমরাকে দুই লাখ টাকা দেন ওই ব্যবসায়ী। কিন্তু পরে ব্যবসায়ী নমরার জন্য অ্যাডের কাজ নিয়ে এসে তাকে বুঝিয়ে বললে, এবর নমরা হ্যাঁ বলেন এবং আরও ৫০ হাজার টাকা চান যা ব্যবসায়ী তার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন। কিন্তু এর পরেও নমরা তার কাজ করেনি।
ওই ব্যবসায়ী পুলিশকে বলেন, "নামারা আমাকে বলেছিল যে কাজটা ছিল একটা অজুহাত, সে আমাকে পছন্দ করে এবং আমাকে বিয়ে করতে চায়। সে তার বোনের বিয়ের পর আমার টাকা ফেরত দেবে। আমিও তাকে পছন্দ করি এবং আমরা দুজনেই ঘোরাঘুরি শুরু করি। বিরাট সব সময় ওর সাথে থাকত।একদিন আমরা যখন ক্লাবে পার্টি করতে যাই, নমরা আর বিরাট আমাকে জোর করে মদ খেতে দেয়।
ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, আমরা তিনজনই হোটেলে রুম বুক করে ঘুমিয়েছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নমরা আমার কার্ড ও আইওয়াচ চেয়েছিল এবং আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে লাগে। বলে, আমি অস্বীকার করলে সে ধর্ষণের মামলা করবে। আমি ভয় পেয়ে তাকে অনুরোধ করেছিলাম যে আমরা বন্ধু এবং আমি কোন অন্যায় করিনি, তাই সে যেন এটা না করে। তারপর বিরাট বানিওয়াল অস্ত্র বের করে বললেন যে তিনি তার স্বামী এবং তাকে খুব ভালো করেই চেনেন। আমি তার কথা না শুনলে সে আমাকে ফাঁদে ফেলবে। এই ঘটনার পর আমি তার কথা মেনে নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৭০-৮০ লাখ টাকার সামগ্রী ও নগদ টাকা দিয়েছি, যার প্রমাণ আমার কাছে আছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী পুলিশকে বলেছেন, “নামারা আমার ফোন কেড়ে নেয় এবং সমস্ত প্রমাণ মুছে দেয় এবং ফোনটি রিসেট করে। আমার টাকা ফুরিয়ে গেলে, আমি তাদের বলেছিলাম আমাকে এখনই ছেড়ে দাও, কিন্তু তারা আমাকে হুমকি দেয়, তাই আমি আমার বাবার অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েছিলাম। তখন বাবা আমার টাকার কথা জিজ্ঞেস করলে আমি তাকে কোন উত্তর দেইনি। তারপর তারা আমার অ্যাকাউন্ট চেক করে, তারপর আমি তাদের সত্য বলেছিলাম। যারা আমাকে হানিট্র্যাপে ফেলেছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন আমার বাবা।"
বর্তমানে নমরা কাদিরকে ৫ ডিসেম্বর রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ৬ ডিসেম্বর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখান থেকে তাকে ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। এখন অভিযুক্ত তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পাশাপাশি তার স্বামী বিরাট বেনিওয়ালের খোঁজে অভিযান চালানো হচ্ছে। নমরা এবং তার স্বামী বিরাট দিল্লির শালিমার বাগ এলাকায় থাকেন।