গ্রেফতার হয়েছেন দিল্লির ইউটিউবার নমরা কাদির (YouTuber Namra Qadir)। এক ব্যবসায়ীকে ফাঁদে ফেলে, তার থেকে ৮০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নমরার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ইউটিউবারের স্বামী বিরাট বেনিওয়াল (Virat Beniwal) পলাতক, তাকেও খুঁজছে পুলিশ। ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে নমরাকে গ্রেফতার (Namra Qadir Arrest) করা হয়। কীভাবে ব্যবসায়ীকে ফাঁদে ফেললেন এই ইউটিউবার (YouTuber)?
সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত পরিচিত নাম নমরা কাদির (Namra Qadir)। ইউটিউবে তার ৬ লক্ষের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। ২ লক্ষের বেশি ব্যবহারকারী তাকে ইনস্টাগ্রামে ফলো করেন। তার ছবি, ভিডিও, রিলস দেখে প্রশংসায় ভরান সকলে। কিন্তু বাস্তব সামনে আসে যখন গত ২৪ নভেম্বর এক ব্যবসায়ী গুরুগ্রামের সেক্টর -৫০ থানায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন।
ব্যবসায়ী পুলিশকে জানান, নমরা তার কাছ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা নিয়েছে প্রতারণা করেছে। এই কাজে যুক্ত রয়েছেন তার স্বামী বিরাট বেনিওয়ালও। দু'জনেই তার কাছ থেকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং তাকে ধর্ষণের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। পুলিশকে ব্যবসায়ী জানান, "কাজের সূত্রে সোহনা রোডের র্যাডিসন হোটেল নমরা কাদির নামে এক তরুণীর সঙ্গে দেখা হয় আমার। তিনি একজন ইউটিউবার, যার ভিডিও আমি দেখেছি। তিনি আমাকে বিরাট বেনিওয়ালের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেন, যিনিও একজন ইউটিউবার এবং তার বন্ধু। আমার ফার্মে কাজ করতে সম্মত হয়ে এবং দু' লক্ষ টাকা অগ্রিম দিতে বলেন।"
ব্যবসায়ী আরও যোগ করেন, "আমি নমরাকে আগে থেকেই কিছুটা চিনতাম বলে ওই দিনই দু' লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। পরে যখন আমি বিজ্ঞাপনের কাজটি ওর কাছে নিয়ে এসে বুঝিয়ে বলি, তখন সে আরও ৫০,০০০ টাকা দাবি করে, যা আমি তার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছিলাম। এরপর ও আমার কাজ করেনি। নমরা আমাকে বলে যে, কাজটি শুধু একটি অজুহাত ছিল, ও আমাকে পছন্দ করে এবং আমাকে বিয়ে করতে চায়। ও, ওর বোনের বিয়ের পর আমাকে আমার টাকা ফেরত দেবে। আমিও ওকে পছন্দ করতাম এবং আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করলাম। বিরাট সব সময় ওর সঙ্গে থাকত। একদিন আমরা ক্লাবে পার্টি করতে যাই, নমরা ও বিরাট আমাকে জোর করে মদ খাওয়ায়।"
ব্যবসায়ী আরও বলেন, "আমরা তিনজনই হোটেলে একটি রুম বুক করে ঘুমিয়েছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নমরা আমার কার্ড চেয়েছিল এবং ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। আমি দিতে অস্বীকার করলে, আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনার হুমকি দেয়। আমি ভয় পেয়ে ওকে অনুরোধ করি যে, আমরা বন্ধু এবং আমি কোনও অন্যায় করিনি। তখন বিরাট একটি অস্ত্র বের করে বলেন যে, তিনি নমরার স্বামী। ওদের কথা না শুনলে, আমাকে ফাঁদে ফেলবে। এই ঘটনার পর আমি ওদের কথা মেনে, এখন পর্যন্ত মোট ৭০-৮০ লক্ষ টাকার জিনিস ও নগদ দিয়েছি, যার প্রমাণ আমার কাছে আছে।"
ব্যবসায়ীর বাবা ঘটনাটি জানতে পেরে পুলিশ গোটা বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন। ব্যবসায়ী বলেন, "নমরা আমার ফোন নিয়ে সমস্ত প্রমাণ মুছে দেয় এবং ফোনটি রিসেট করে দেয়। আমার সব টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায়, আমি ওদের বলি আমায় ছেড়ে দিতে। কিন্তু ওরা আমায় এরপরও হুমকি দেয়। আমার বাবার কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা তুলে ওদের দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। বাবা আমাকে আমার টাকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় আমি কোনও উত্তর দেইনি। এরপর উনি আমার অ্যাকাউন্ট দেখেন এবং আমি সব সত্যি জানাই বাধ্য হয়ে। বাবা তখন আমায় পরামর্শ দেন যে, যারা আমায় এভাবে ফাঁদে ফেলেছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করার জন্য।"
ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে, পুলিশ নমরা কাদিরকে ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে আরেক অভিযুক্ত বিরাট বেনিওয়ালের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।