বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বারবার। রাজ্যের বিজেপি, নেতা কর্মীরা দিল্লিকে অভিযোগ করছেন, কর্মীদের একের পর এক খুন করা হচ্ছে। আজ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, আজ থেকে তিন দশক আগে এই একই অভিযোগ করেছিলেন আরও এক প্রধানমন্ত্রী। তিনি রাজীব গান্ধী। মোদীর মতো রাজীবও বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে উদ্বেগস করে বলেছিলেন, 'বাংলায় কারও জীবন সুরক্ষিত নয়।' এই প্রতিবেদনটি India Today ম্যাগাজিনে ১৯৮৯ সালের ১৫ মে প্রকাশিত হয়েছিল।
মোদীর মতো রাজীবও বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে উদ্বেগস করে বলেছিলেন, 'বাংলায় কারও জীবন সুরক্ষিত নয়।' এই প্রতিবেদনটি India Today ম্যাগাজিনে ১৯৮৯ সালের ১৫ মে প্রকাশিত হয়েছিল।
সালটা ১৯৮৯। তারিখ ৫ এপ্রিল। অকুস্থল ব্যারাকপুর। তত্কা৯লীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সেই সন্ধ্যায় রাজ্যে আসছেন। কংগ্রেস কর্মীরা অত্যুত্সাটহী। বাম সরকারের 'অপশাসনের' বিরুদ্ধে একাধিক র্যা লির আয়োজন করেছে প্রদেশ কংগ্রেস। স্থানীয় সিপিআইএম নেতা শক্তিপদ দত্তের নেতৃত্বে সিপিআইএম কর্মী সমর্থকদের একটি দল চড়াও হল কংগ্রেস নেতা ও পুরপ্রধান রাজেন্দ্র যাদবের বাড়িতে। রাজেন্দ্র যাদব যদিও পালিয়ে বেঁচেছিলেন, কিন্তু তাঁর দুই ভাই খুন হলেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হিংসার ইতিহাসে ব্যারাকপুর হিংসা অন্যতম ছিল সেই সময়। তারপর শুরু হয় কংগ্রেস ও বামেদের একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের পালা। ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ঘোষণা করলেন, 'বাংলায় কারও জীবন সুরক্ষিত নয়।' তত্কাএলীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেব ঘটনাস্থলে যান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানালেন তিনি। তত্কা লীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু পাল্টা বললেন, সিপিআইএম-এর সভায় কংগ্রেসের কর্মীরা প্রথমে হামলা করে। সেখান থেকেই অশান্তির সৃষ্টি হয়। তাতে দুই অপরাধীর মৃত্যু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে রক্ত কম ঝরেনি। ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি মাসে কম করে ৮ জন কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছিলেন। তত্কাতলীন যুব কংগ্রেসের প্রধান রাজীব গান্ধীকে একটি রিপোর্ট পেশ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে। তাতে তিনি জানান, বাম কর্মীদের হাতে খুন হচ্ছেন কংগ্রেস কর্মীরা। সে বছরই জানুয়ারিতে খুন হন হাবিবপুর যুব কংগ্রেসের সভাপতি দীপ্তিময় সরকার। ২২ জানুয়ারি তাঁর লাশ মেলে মালদার পাগলাদিঘিতে। ওই একই দিনে নদিয়ায় দিনের আলোয় খুন হন কংগ্রেস কর্মী দুই ভাই মুকেশ বিশ্বাস ও নরেশ বিশ্বাস। হাওড়া পুরভোটে খুন হন যুব কংগ্রেস নেতা গৌতম বসু। খুন হন দক্ষিণ দমদম পুরসভার কমিশনার শ্রিস মুখোপাধ্যায়। তিনি যুব কংগ্রেসের অন্যতম নেতাও ছিলেন।
কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা দিল্লিতে অভিযোগ জানান, বামেরা একে একে সব কংগ্রেস কর্মীদের খুন করে রাজ্য থেকে কংগ্রেসকে ধুয়ে মুছে দিতে চাইছে। কংগ্রেস বিধায়ক (বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক) সাধন পান্ডে অভিযোগ করেন, ১৯৭৭ সালে বামেরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১ হাজারের বেশি কংগ্রেস কর্মীকে খুন করা হয়েছে বাংলায়। রাষ্ট্রপতির কাছে একের পর এক স্মারকলিপি দিতে থাকেন কংগ্রেস নেতারা।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা আরও এক অভিযোগ করেন, রাজ্য পুলিশ সিপিআইএম-এর হয়ে কাজ করছে। তাঁরা বলেন, রাজ্যে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, কংগ্রেসকর্মীরা যদি বামেদের হাত থেকে বেঁচে যায়, তা হলে তাঁদের মেরে দিচ্ছে পুলিশ। বাংল
কেন্দ্রের চাপে সেই বছরই বিধানসভায় তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু একটি রিপোর্ট পেশ করেন রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে। তিনি জানান, ১৯৮৮ থেকে ৮৯ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৮৬ জন রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছেন অন্তর্দ্বন্দ্বে। তারমধ্যে ৩৪ জন সিপিআইএম-এর, ১৯ জন কংগ্রেসের, দু জন ফরোয়ার্ড ব্লকের ও ৭ জন আরএসপি-র। বাকিরা অন্যান্য দলের। জ্যোতি বসুর এই পরিসংখ্যানের তীব্র বিরোধিতা করে কংগ্রেস। তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করেন।
কাট টু ২০২০। একের পর এক রাজনৈতিক হিংসা দেখছে রাজ্য। রাজ্য বিজেপি বারবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছে, ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানাচ্ছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। বিহার নির্বাচনের পরেও প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের নাম না-করে রাজ্যের রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মোদী বলেন, 'রাজনৈতিক হিংসা করে মানুষের সমর্থন পাওয়া যায় না। দেওয়াল লিখন পড়ে নিন।' রাজ্য সফরে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও জানান, ১০০-র বেশি বিজেপি কর্মীকে খুন করা হয়েছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চ্য়ালেঞ্জ করেন, কত জন রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছে, কত জনের নামে এফআইআর হয়েছে, কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন রাজ্য সরকার।