‘অপারেশন সিঁদুর’ পাকিস্তানের মাজা ভেঙে দিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের ১০০ কিলোমিটার ভিতরে প্রবেশ করে ভারত একের পর এক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে, শতাধিক সন্ত্রাসবাদীকে নিকেশ করেছিল। তার মধ্যেই পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালায়। দেশের নানা স্থানে মিসাইল ছোড়া হয়। ড্রোন পাঠায় পাকিস্তান। অভিযান শুরুর পরে ৭-৮ মে রাতে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির লক্ষ্য করে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানি সেনা। সোমবার এমনটাই জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ১৫ নম্বর ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল কার্তিক সি শেষাদ্রি। এই দাবিকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। কীভাবে সেই হামলা রুখল ভারতীয় সেনা?
সেনাবাহিনীর ১৫ নম্বর ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল কার্তিক সি শেষাদ্রি জানিয়েছেন, হামলা হতে পারে আশঙ্কায় আগে থেকেই নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় স্বর্ণমন্দির। তাই সেখানে আঁচড় পর্যন্ত কাটতে পারেনি পাকিস্তান। এএনআইকে সোমবার সেনা অফিসার মেজর জেনারেল কার্তিক সি শেষাদ্রি আরও বলেন, 'ভারতে নির্দিষ্ট কোনও নিশানা পাকিস্তানের ছিল না। তাই তারা জনবসতি এলাকা নিশানা করার চেষ্টা করেছিল। আমরা জানতাম যে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। তাই মনে করেছিলাম, তারা ভারতীয় সেনাঘাঁটি, নাগরিক এমনকী, ধর্মীয় স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে। আমরা স্বর্ণমন্দিরকে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ছাতায় ঢেকে ফেলেছিলাম।'
সেনা সূত্রে খবর, ৭ ও ৮ মে রাতে দেশের বহু শহরে হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান । তাদের টার্গেট ছিল অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরও। পাকিস্তান ভারতের বহু মানুষের প্রার্থণাস্থলে আঘাত হানতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় সেনা নিঁখুন ভাবে তাদের প্রতটি পরিকল্পনাই ব্যর্থ করে দেয়। ৮ মে পাকিস্তান প্রচুর পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলার চেষ্টা করেছিল। মেজর জেনারেল জানান, পাকিস্তান ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন পাঠাচ্ছিল। আকাশ পথে হানা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তারা। কিন্তু একটিও ড্রোনও লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারেনি। তার আগে আকাশেই ধ্বংস দেওয়া হয় সেগুলিকে। শুধু ড্রোন নয়, সঙ্গে নিক্ষেপ করা হয়েছিল দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও।
সাহসী ও সজাগ সেনাবাহিনীর বন্দুকবাজরা পাকিস্তানের শয়তানি চক্রান্ত ভেস্তে দিতে সক্ষম হন। স্বর্ণমন্দিরকে ধ্বংস করতে যতগুলি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া হয়েছিল, তার প্রত্যেকটিকে অকেজো করে দেওয়া হয়। যার ফলে পবিত্র স্বর্ণমন্দিরের গায়ে একটি আঁচড়ও লাগতে দেয়নি ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেনা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের নমুনার ছবি ইতিমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা, এল-৭০ এয়ার ডিফেন্স গান কীভাবে স্বর্ণমন্দির ও পাঞ্জাবের একটার পর একটা শহর রক্ষা করেছিল তা দেখানো হয়।
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ২৬ জনের। তার পরেই ৭ মে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে ভারতীয় সেনা। সেনা অফিসার মেজর জেনারেল বলেন, '৮ মে গভীর রাতে পাকিস্তান ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ওই হামলার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত ছিল। সেইমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল এবং প্রত্যেকটি ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র রুখে দেওয়া হয়েছে। স্বর্ণমন্দির লক্ষ্য করে যে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল পাকিস্তান, আমাদের সজাগ সেনাবাহিনী তা রুখে দিয়েছে। গুলি করে ড্রোন নামিয়েছে। আমাদের পবিত্র স্বর্ণমন্দিরে একটা আঁচড় পর্যন্ত পড়তে দেয়নি সেনাবাহিনী।'
হায়দরাবাদে বড়সড় নাশকতার ছকও বানচাল হয়েছে। রবিবার তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি। ধৃতদের নাম সিরাজ উর রেহমান (২৯), বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়নগরমে এবং সৈয়দ সমীর (২৮), বাড়ি হায়দরাবাদের বাসিন্দা। ধৃতদের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বড়সড় সন্ত্রাসবাদী কাজের পরিকল্পনা করার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রে খবর, ধৃতদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (ISIS)-এর সঙ্গে যোগ থাকতে পারে। এমনকী, সৌদি আরবে ঘাঁটি গেড়ে থাকা একটি ISIS মডিউলের সঙ্গেও তাদের নিয়মিত যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার বিজয়নগরম এবং হায়দরাবাদ থেকে ওই দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ ইতিমধ্যেই ধৃতদের থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম খতিয়ে দেখছে। ধৃতদের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে অ্যামোনিয়া, সালফার এবং অ্যালুমিনিয়াম পাউডার-সহ অন্য বিস্ফোরক পদার্থও।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃতেরা হায়দরাবাদ শহরের জনবহুল এলাকাগুলিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর ছক কষেছিল। শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে গোপনে বিস্ফোরকের পরীক্ষা চালানোরও অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, পাহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর থেকেই দেশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে ভারত-পাক সীমান্ত এলাকায়। কিছুদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে তাদের এলাকায় লুকিয়ে থাকা জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের কার্যকলাপের উপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। পাশাপাশি দেশবাসীকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
‘অপারেশন সিঁদুরের’ পর ভারতের উপর হামলার সময় পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম শাহিন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু পাক সেনার সেই হামলাও রুখে দেয় ভারত। ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এস-৪০০ সেই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছিল। এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় সেনা। ভারতীয় সেনার পশ্চিমি কমান্ড ‘অপারেশন সিঁদুরের’ একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছে। কী ভাবে শত্রুপক্ষের আঘাত প্রতিহত করা হয়েছে, তা-ই দেখানো হয়েছে ওই ভিডিয়োটিতে। ভারতীয় সেনাও কী ভাবে পাল্টা আঘাত হেনে বিপক্ষের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, তা-ও রয়েছে ওই ভিডিওতে।
পাকিস্তানের ওই শাহিন মিসাইল একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে ওই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম মহড়া চলে। অনেকের দাবি, শাহিন ক্ষেপণাস্ত্র পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম। যদিও ভারতের উপর হামলার সময় তাতে কোনও পরমাণু অস্ত্র ছিল না বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।