কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার রাজধানীতে। তাতে এ বার প্রাণ গেল এক কৃষকের। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চলাকালীন ট্র্যাক্টরটি উল্টে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানা গিয়েছে। তবে কৃষকদের অভিযোগ, দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে ঢোকার মুখে তাঁদের পথ আটকায় পুলিশ। এমনকি গুলিও চালানো হয় বলে অভিযোগ।
কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত দু মাসের বেশি সময় ধরে দিল্লি ঘিরে লক্ষ লক্ষ কৃষক। সরকারের সঙ্গে একাধিক আলোচনা ভেস্তেছে। কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, আইন বাতিল করতে হবে। সরকার চায় সংশোধনী। এমনই টানাটানির মাঝে ২৬ জানুয়ারি দিনটি দিল্লি বিশেষ সামরিক কুচকাওয়াজের পাশাপাশি কৃষকদের ট্রাকটর মিছিল ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়াল।
দিল্লি পুলিশ দিশেহারা। লক্ষাধিক কৃষকের সামনে তাদের ব্যারিকেড ভাঙতে শুরু করেছে। সশস্ত্র কৃষকদের একাংশ হামলা চালিয়েছেন বাসে, পুলিশের উপরেও হামলার অভিযোগ এসেছে। দেখুন মঙ্গলবার সারাদিন কীভাবে উত্তপ্ত থেকেছে দেশের রাজধানী।
সকাল ৮.৩০ মিনিট - সিঙ্ঘু সীমান্তে প্রথম সংঘর্ষ ঘটে। প্রতিবাদ কৃষকরা ব্যারিকেড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীরা গাজীপুর এবং টিকরি সীমান্তেও জড়ো হতে শুরু করে।
সকাল ৮.৪৫ মিনিট - দিল্লি-হরিয়ানা টিকরি সীমান্তে পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারী প্যারেড শুরু করেন।
সকাল ৯.৩০ মিনিট - সিঙ্ঘু সীমান্ত থেকে ট্রাক্টর ব়্যালি সঞ্জয় গান্ধী ট্রান্সপোর্ট নগরে পৌঁছল।
সকাল ১০.১৫ মিনিট - গাজীপুর সীমান্তে বিশৃঙ্খলা। কৃষকরা ট্রাক্টর ব়্যালির জন্য তৈপি। কৃষকরা ব্যারিকেড ভাঙে, পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
বেলা ১১টা - সঞ্জয় গান্ধী ট্রান্সপোর্ট নগরে বিক্ষোভ সামাব দিতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারীরা পুলিশের জল কামানের গাড়ি দখলের চেষ্টা করে।
বেলা ১১.৩০ - দিল্লির পাণ্ডব নগরে দিল্লি-মীরাট এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিবাদকারীরা ব্যারিকেড ভাঙলেন। উত্তর দিল্লির মুকারবা চৌকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হওয়ায় পুলিশ কৃষকদের উপর টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ল। কর্ণাল বাইপাসে প্রতিবাদকারীরা ব্যারিকেড ভাঙে।
বেলা ১১.৪৫ - গাজীপুর, সিঙ্ঘু ও টিকরি সীমানায় ব্যারিকেড খুলে দেওয়া হয়।
বেলা ১২.১৫- গাজীপুর থেকে বিক্ষোভকারীরা অক্ষরধামের দিকে ট্র্যাক্টর ব়্যালি করেন। পরিকল্পিত রুটটি ছিল ইউ-টার্ন নেওয়া। পরিবর্তে, তারা ডান দিকে ঘুরে আইটিওতে পৌঁছন। যমুনা ব্রিজটি পেরিয়ে দিল্লি পুলিশ সদর দফতরের সামনে ব্যারিকেড ভাঙে।
বেলা ১২.২০ - নয়ড়ায় সংঘর্ষ ছড়ায় , কিছু প্রতিবাদকারী তরোয়াল খুলে রাস্তায় বের হন।
বেলা ১২:৫০ - গাজীপুর সীমান্তের নিকটবর্তী শাহদারার চিন্তামণি চৌকে দিল্লি পুলিশ লাঠিচার্জ করে, কারণ কৃষকরা ট্রাক্টর দিয়ে ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। পুলিশ ন্যাংলাইয়ে প্রতিবাদকারীদের অবরুদ্ধ করে। নাংলইতে বিক্ষোভকারীদের অবরুদ্ধ করে পুলিশ।
বেলা ১টা - আইটিওতে, কৃষকরা বাস ভাঙচুর করে, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয় এবং লালকেল্লায় যাওয়ার চেষ্টা করে। ট্রাক্টর পুলিশের উপর দিয়ে চালানোর চেষ্টাও করে। পুলিশ লাঠিচার্জ এবং টিয়ার-গ্যাস ছোড়ে প্রতিবাদদের ওপর । একটি ট্র্যাক্টর উল্টে যাওয়ায় একজন প্রতিবাদী মারা যান। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে তাকে গুলি করা হয়েছে।
দুপুর ২টো - এক ঘন্টা দীর্ঘ অবরোধেরর পরে, প্রতিবাদকারীরা আইটিও দিয়ে গাড়ি চালিয়ে লাল কেল্লায় পৌঁছায়। সিঙ্ঘু সীমান্ত থেকে বিক্ষোভকারীরা আউটার রিং রোড (নাঙ্গলাই এবং তিস হাজারী) দিয়ে লালকেল্লায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে গাড়ি চালায়। প্রতিবাদকারীরা লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকার পাশে শিখ পতাকা তুলে দেয়।
পুলিশের ঘোষিত পথে গেল না হাজার হাজার ট্র্যাক্টর। পথ পাল্টে লালকেল্লায় গিয়ে কৃষকদের মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠল ‘অকুপাই দিল্লি’। পুলিশের ঘোষণা ছিল, মঙ্গলবার সকাল ১২ টা নাগাদ কৃষকদের মিছিল নির্দিষ্ট তিনটি রুটে গিয়ে আবার উৎসস্থলে ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটল উল্টো। সকাল ৮টা থেকে লাগামছাড়া গতিতে দিল্লির দিকে ধেয়ে আসতে থাকে মিছিল। পুলিশের বাধা কেউ মানেননি। আর তাই নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছে দিল্লির নয়ডা মোড়, আইটিও মোড়, এসবিটি এলাকা।
কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েত জানিয়েছেন, ‘‘দিল্লিতে পৌঁছে গেলেও সেখানে বসে আন্দোলনের কোনও পরিকল্পনা বা লালকেল্লা যাওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওযা হয়নি। কৃষকরা দিল্লি যাবেন, আবার শান্তিপূর্ণ পথে ফিরে এসে পূর্বে যেখানে আন্দোলন করছিলেন, সেখানেই আন্দোলন করবেন।’’
বিপুল সংখ্যায় কৃষকদের উপস্থিতি থাকায় পুলিশকে রীতিমতো অসহায় দেখায় দুপুরের এই সংঘর্ষে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির মেট্রো পরিষেবা কিছু অংশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয় দিল্লির ৫ সীমানায় ইন্টারনেটও।