বিশ্বের একাধিক দেশে শুরু হয়ে গিয়েছে করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল। খুব শীঘ্রই করোনা যুদ্ধ জয়ের পথে ভারতও। প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগেই ঘোষণা করেছিলেন চলতি বছরের শেষে অথবা নতুন বছরের শুরুতেই দেশে এসে যাবে মারণ করোনার প্রতিষেধক। সূত্রের খবর চলতি সপ্তাহেই অক্সফোর্ডের কোভিড ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিতে চলেছে কেন্দ্র। আশা করে হচ্ছে খুব শীঘ্রই এই মারণ ভাইরাসকে জয় করতে পারা যাবে তখনি দেশে দেখা দিয়েছে নতুন বিতর্ক। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ধর্মীয় ভাবাবেগ। যা মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৮৫৭ সালের সেই সিপাহী বিদ্রোহের ঘটনাকে।
১৮৫৭ সালে এদেশে ঘটা সিপাহী বিদ্রোহ বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই মহাবিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল ভারতীয় সেনাবিহীনতে এনফিল্ড রাইফেলের প্রচলন। গরু ও শূকরের চর্বি মেশানো কার্তুজ দাঁতে কেটে ভারতে হত, ফলে হিন্দু ও মুসলমান সিপাহীদের ধর্মানাশের গুজব রটে যায়। সেই সিপাহী বিদ্রোহের ১৬৩ বছর পার করে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে তৈরি হয়েছে একই রকম উদ্বেগ।
সম্প্রতি করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন হিন্দু মহাসভার স্বামী চক্রপানি। তাঁর দাবি, গরুর রক্ত মেশানো আছে ভ্যাকসিনে। আর তাই এই ভ্যাকসিন না নেওয়ার নিদান দিয়েছেন তিনি। এখানেই থেমে থাকেননি চক্রপানি, টিকাকরণ যাতে দেশে না হয়, এই আবেদন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে চিঠিও লিখেছেন তিনি। চক্রপানির দাবি, কীভাবে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, তা জানাতে হবে। তারপরই টিকাকরণ শুরু করতে হবে দেশে। তিনি মানছেন, করোনা ভ্যাকসিন দ্রুত প্রয়োগ করা উচিত। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে কোনওভাবেই যেন ভ্যাকসিনের জন্য জনজীবন ব্যাহত না হয়। চক্রপানির প্রশ্ন, ভ্যাকসিন কী দিয়ে বানানো হয়েছে, তা জানা যাবে না কেন? আমরা জানতে পেরেছি, আমেরিকায় ভ্যাকসিন তৈরির জন্য গরুর রক্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
চক্রপানির স্বষ্ট কথা সব প্রশ্নের উত্তর পেলেই যেন টিকাকরণ শুরু হয়। তাঁর বক্তব্য, শুধু আমেরিকায় তৈরি ভ্যাকসিন বলে নয়, যে কোনও দেশে তৈরি ভ্যাকসিনের তথ্যই জানাতে হবে। চক্রপানি সাফ দাবি, প্রথমত, এটা নিশ্চিত হওয়া দরকার যে ভ্যাকসিনে গরুর রক্ত নেই। তারপর নিয়ম মেনে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হোক। প্রাণ চলেও গেলেও ধর্মের ক্ষতি হতে দেওয়া যায় না।
এদিকে চিনে উৎপাদিত করোনা ভ্যাকসিন ভারতীয় মুসলিমদের উপর প্রয়োগ করা যাবে না। সাফ জানিয়ে দিয়েছে দেশের নটি মুসলিম সংগঠন। করোনা ভ্যাকসিনে শুয়োরের চর্বি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই এই ভ্যাকসিন মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য হারাম। এমনই দাবি তুলেছে দেশের একাধিক মুসলিম সংগঠন। ভ্যাকসিনে পর্ক জিলেটিন ব্যবহারের রেওয়াজ বহুদিনের। আসলে যে কোনও ভ্যাকসিন যাতে মজুত রাখার সময় ঠিকঠাক অবস্থায় থাকে, তার জন্য পর্ক জিলেটিন ব্যবহার করা হয়। এই পর্ক জিলেটিন তৈরি হয় শুয়োরের শরীরের চর্বি থেকে।
বেশ কিছু ভ্যাকসিন তৈরীর ক্ষেত্রে পর্ক জিলেটিন ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ভ্যাকসিন মজুত ও দীর্ঘদিন কার্যকর রাখার জন্য শুয়োরের মাংসের ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে ফাইজার, মোদার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা-র মতো সংস্থাগুলির অবশ্য দাবি, তারা ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুয়োরের মাংসের কোনও রকম ব্যবহার করেনি। কিন্তু এখনো বহু এমন সংস্থা আছে যারা ভ্যাকসিন তৈরীর ক্ষেত্রে শুয়োরের মাংস ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা সেই সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রকাশ করছে না। ফলে বেশ কিছু মুসলিম দেশে ইতিমধ্যে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়ে গেছে। মুসলিম ধর্মগুরুদের একাংশ বলছেন, শুয়োরের মাংসের ব্যবহার হলে এই ভ্যাকসিন মুসলিমদের জন্য অপবিত্র। সেই হাওয়া লেগেছে ভারতেও। চিনে উৎপাদিত করোনা ভ্যাকসিন ভারতীয় মুসলিমদের উপর প্রয়োগ করা যাবে না। সাফ জানিয়ে দিয়েছে দেশের নটি মুসলিম সংগঠন।