১৯৭৫ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। যা নিয়ে পরবর্তীতে বহুবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল দেশের একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে। এবার ঠাকুমার নেওয়া সেই সিদ্ধান্তের বিষয়ে মুখ খুললেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ইন্দিরার জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, স্বীকার করে নিলেন তারই উত্তরসূরি নাতি রাহুল।
প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী মঙ্গলবার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভারচুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এই আলোচনাপর্বে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্নোত্তর চলছিল। অধ্যাপক কৌশিক বসুর সাথে কথোপকথনে রাহুল গান্ধী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেওয়া জরুরি অবস্থা চাপিয়ে দিওয়ার সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলনা করার সময় এই মন্তব্য করেন। তবে ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীর সিদ্ধান্তের তরফে সাফাইয়ে কিছু যুক্তিও দিতে দেখা যায় রাহুলকে।
জরুরি অবস্থা নিয়ে আফসোস ছিল ইন্দিরারও
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ২১ মাসের জন্য ভারতে জারি ছিল জরুরি অবস্থা। সেই সময় সাংঘাতিকভাবে খর্ব হয়েছিল দেশবাসীর মৌলিক অধিকার। রাহুল গান্ধীর দাবি, নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বকালে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের জন্য পরবর্তী সময়ে আফসোস করতেন ঠাকুমা ইন্দিরাও। একইসঙ্গে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি এও বলেন, সেই আমলে কোনওদিনই দেশের মৌলিক কাঠামো পালটানোর চেষ্টা করেনি কংগ্রেস সরকার। এই প্রসঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা টেনে আনেন রাহুল।
মোদী সরকারকে আক্রমণ রাহুলের
জরুরি অবস্থার সঙ্গে বর্তনমান মোদী জমানার তুলনা টেনে প্রশাসনকে আক্রমণ শানান রাহুল। দাবি করেন, সেই সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের একটা পার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা সত্ত্বেও কংগ্রেস দেশের প্রতিষ্ঠানগুলির দখল নেওয়ার চেষ্টা করেনি। কিন্তু, এখন সরকারি ভাবে জরুরি অবস্থা জারি না করেই সেটা হচ্ছে। রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, সংসদে আমাদের বক্তব্য রাখতে দেওয়া হচ্ছে ন। বিচার বিভাগ থেকেও কোনও আশা নেই। আরএসএস-বিজেপির অপরিসীম অর্থনৈতিক শক্তি রয়েছে। বড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দেওয়া হয় না। এটি গণতান্ত্রিক ধারণার উপর ইচ্ছাকৃত আক্রমণ। মণিপুরের রাজ্যপাল বিজেপিকে সাহায্য করছেন। পুদুচেরিতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনেকগুলি বিল পাস হতে দেননি, কারণ তিনি আরএসএসের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমান সরকার ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
কংগ্রেসেও গণতন্ত্র চান রাহুল
রাহুল গাঁধীর উপরে রুষ্ট কংগ্রেসের ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতারা সাংগঠনিক নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। তাঁদের বার্তা দিয়ে রাহুল বলেন, তিনি নিজেই দশ বছর ধরে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিয়ে সবথেকে বেশি সরব। রাহুল গান্ধীর কথায়, " আমি বহু বছর ধরে কংগ্রেস পার্টির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের প্রচারের কথা বলছি। আমার নিজের দলের লোকেরা এর জন্য সমালোচনা করেছে। আমি আমার দলের লোকদের বলেছিলাম যে দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র আনার বিষয়টি অবশ্যই প্রয়োজন। আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর করতে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু, সেই স্বাধীনতাকে ভারতে আক্রমণ করা হচ্ছে।"
রাহুল গান্ধী বলেন আমি কংগ্রেসে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের পক্ষে, এক দশক ধরে কংগ্রেসে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের পক্ষে সওয়াল করছি। যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলিতে নির্বাচনের প্রচার করেছি। আমি প্রথম ব্যক্তি যিনি দলে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছে। আমাদের কাছে কংগ্রেস মানে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা সংগঠন, যা ভারতকে সংবিধান দিয়েছে। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখা আমাদের পক্ষে জরুরি।