দৈনিক সংক্রমণে ভারত বিশ্বরেকর্ড গড়েছে। পর পর তিন দিন দেশের দৈনির সংক্রমণ দেড় লক্ষের উপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৩৬ জন। আর এর মাঝেই চলছে হরিদ্বারে মহাকুম্ভের শাহী স্নান। দেশের নানা প্রান্ত থেকে জড়ো হয়েছেন পুণ্যার্থীরা। সংখ্যাটা লক্ষাধিক। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে এই সমাগমের মধ্যে দিয়ে করোনা আবার মারাত্মক আকার নেবে। তবে সেই আশঙ্কাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তীরথ সিং রাওয়াত। তীরথের দাবি, মা গঙ্গার আশীর্বাদে করোনা মোটেই ছড়াবে না।
গত বছর ঠিক এই সময়েই দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজে করোনা সংক্রমণের দায়ে তবলিঘি জামাত সদস্যদের কাঠগড়ায় তুলেছিল গোটা দেশ। পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন জামাতের প্রধান মৌলানা সাদ। ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঘিরে সংক্রমণ ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। এবার দেশে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে সেই সময়ে হরিদ্বারের মহাকুম্ভ মেলায় পুণ্যার্থীদের সমাগম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী রাওয়াত কুম্ভকে মারকাজের সঙ্গে তুলনা করতে রাজি নন। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, মারকাজ থেকে করো ছড়িয়েছিল কারণ মানুষ বন্ধ ঘরে ছিল। আর কুম্ভ হচ্ছে খোলা জায়গায়, তাই করোনা ছড়াবে না। তিনি বলেন, মা গঙ্গা একটি অবিচ্ছিন্ন ধারা, আমরা মা গঙ্গার আশীর্বাদ নিলে করোনার বিস্তার হবে না।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হতেই দিল্লি, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব এমনকী উত্তরপ্রদেশও ধর্মীয় স্থানে জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে হরিদ্বারে লাখ লাখ পুণ্যার্থী জমায়েত হয়েছেন। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গিয়েছে গুটিকয়েক পুণ্যার্থীকে। বেশিরভাগই মাস্কহীন। এই পরিস্থিতিতে করোনা বৃদ্ধির একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে এখানে প্রবেশ করতে গেলে আরটি–পিসিআরের নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
সোমবার হরিদ্বারে মহাকুম্ভের দ্বাদশতম দিন ছিল। গোটা দেশে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল সব রাজ্য, তখনই লাখ লাখ পুণ্যার্থীর জমায়েত হরিদ্বারে। সোমবার সন্ধেয় ২৮ লক্ষ পুণ্যার্থী শাহী স্নানের জন্য উপস্থিত হন হরিদ্বারে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের মতে, রবিবার রাত ১১.৩০ থেকে সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মাত্র ১৮,১৬৯ জনের কোভিড টেস্ট সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে ১০২ জন সংক্রমিত পাওয়া গিয়েছে।
প্রতি ১২ বছর অন্তর কুম্ভমেলা হয়। লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী শাহি স্নানের জন্য আসেন হরিদ্বারে। কিন্তু এ বারের কুম্ভমেলা অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে হচ্ছে। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। গঙ্গার সমস্ত ঘাটে কোভিড বিধি মেনে চলার নির্দেশিকা জারি করেছে প্রশাসন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বড় জমায়েত এড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
উত্তরাখণ্ডে করোনা পরিস্থিতি
গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাখণ্ডে ১৩৩৪ জনের করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। যার ফলে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১,০১,৪৬। বুলেটিনে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, সোমবার সাত রোগীর মৃত্যুর পপ রাজ্যের করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে১,৭৬৭। দেরাদুন, হরিদ্বার, নৈনিতাল, উধম সিং নগর, পৌর, তেহরিতে সবচেয়ে বেশি করোনার ঘটনা ঘটেছে।