মহাকুম্ভ (Kumbh Mela 2021) এই বছর হরিদ্বারে হতে চলেছে। অতিমারীর মধ্যেও ইতিমধ্যে জোরকদমে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। করোনা আবহে এবছরের মহাকুম্ভ হবে কিনা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যার ফলে আয়োজনেও তার প্রভাব পড়েছে। ফের শুরু হয় তোড়জোড়। হরিদ্বার ইতিমধ্যে প্রস্তুত কুম্ভ মেলার আয়োজনে। সাধারণত ১২ বছর অন্তর আয়োজন করা হয় কুম্ভমেলার। কিন্তু এবার ১১ বছর পরে আয়োজন করা হচ্ছে সেটি।
ধার্মিক শহর হরিদ্বার এবছর আশা করছে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী ও সাধুদের আগমনের। যদিও করোনা ভাইরাসের ভীতি সকলের মনেই রয়েছে। পুরো শহরে পোস্টার, হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গেছে ইতিমধ্যে। যদিও উত্তরাখণ্ড সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এরকম বড় মাপের একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা ও সেটা সুষ্ঠভাবে মেটানো এই মুহূর্তে খুব বড় একটা চ্যালেঞ্জ।
চারবার পুণ্যস্নান
হরিদ্বারের কুম্ভ মেলায় চারবার পুণ্য স্নান হবে। তারিখগুলি হল- ১১ মার্চ মহাশিবরাত্রির দিন, ১২ এপ্রিল সোমবতি অমাবস্যায়,১৪ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং ২৭ এপ্রিল বৈশাখীতে হবে।
বধূর সাজে ধর্মীয় এই শহর
বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যের রঙে সেজে উঠছে কুম্ভর শহর। নানা রকমের সুন্দর ছবি, স্লোগান ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে শহর জুড়ে দেওয়াল ও পাঁচিলে। ব্রিজ, গঙ্গার ঘাট, জলের ট্যাঙ্ক বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে উজ্জ্বল রঙে সেজেছে। হলুদ এবং গেরুয়া রং সব জায়গাতেই চোখে পড়ছে। ধর্মীয় বিশ্বাস ছাড়া উত্তরাখণ্ড লোক ঐতিহ্য এবং পরম্পরা হরিদ্বারের বিভিন্ন জায়গায় দৃশ্যমান। হরিদ্বার ধাম, কেদারনাথ ধাম, বদ্রিনাথ ধাম, গঙ্গোত্রী ধাম ও যমুনত্রি ধামের বোর্ড ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে।
প্রস্তুতি পর্ব
এই মুহূর্তে হরিদ্বার প্রশাসন সমস্ত রকমের ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত। রাস্তাঘাট চওড়া হচ্ছে, জনসাধারণের জন্যে শৌচালয়, বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশাসন আশা এই মাসের শেষেই এই কাজগুলি শেষ হয়ে যাবে।
কুম্ভ মেলার অফিসার দীপক রাওয়াত জানান, মেলার বিভিন্ন স্থায়ী নির্মাণের জন্যে প্রায় ৩২১ কোটি টাকা খরচ হবে। যার মধ্যে রয়েছে ৭ টি ব্রীজ, কাওয়ার রাস্তা ও চিল্লা রাস্তার যোগ স্থাপন করা, সিদকুল ধানোরি রাস্তার নতুনভাবে ডিজাইন করা, হরিদ্বারের রাস্তা ঠিক করা, জলের কাজ, ঘাটের পুননির্মাণ করা হচ্ছে।
দীপক রাওয়াত আরও বলেন, " ক্যাঙ্গরা ঘাটের ক্ষমতা হর কি পৌরি- তে বাড়ানো হয়েছে। নতুন দরজা নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে বেলওয়ালাতে। কুম্ভ মেলার জন্যে বিভিন্ন হিন্দুদের পুরাণের ওপর ভিত্তি করে শহর জুড়ে ছবি আঁকা হয়েছে।
করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা
একদিকে যেমন কুম্ভ মেলার জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে, তেমন অন্যদিকে করোনা অতিমারীর জন্যে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যদিও কুম্ভমেলার আগেই করোনার ভ্যাকসিন এলেও এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পুরোপুরি কমেনি। পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে যায়, তাহলে সেই মতো ব্যবস্থার পরিবর্তন করা হবে।
এই বিষয়ে দীপক রাওয়াত জানিয়েছেন, " আমরা কোভিডের সচেতনতা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে রেখেছি। পূণ্যার্থীদের স্নানের সময় সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও ১০০০ বেডের কোভিড হাসপাতাল ও ২০ বেডের সেক্টর হাসপাতালও তৈরি হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য অত্যাধুনিক ব্যবস্থা মজুদ রাখা হচ্ছে এই সমস্যার সমাধানে।
পুলিশ এবং প্যারামিলিটারি ফোর্স মোতায়েন
আইজি সঞ্জয় গুঞ্জল জানিয়েছেন, ২০২১ সালের কুম্ভ মেলার জন্যে সমস্ত রকম সুরক্ষা বিধি মেনে আয়োজন করা হচ্ছে। ২৪ টি সেক্টর তৈরি করা হয়েছে ইতিমধ্যে। মেলা প্রাঙ্গণের জন্যে পুলিশ ফোর্স ছাড়াও প্যারা মিলিটারি ফোর্স, এনএসজি কমান্ডো ইত্যাদি মোতায়েন করা হবে। সম্পূর্ণ মেলা সিসিটিভি-র আওতায় থাকবে এবং পুণ্যার্থীদেরও আবেদন করা হচ্ছে যারা স্নান করতে আসবেন তাঁরা যেন কোভিডের সমস্ত রকম নিয়মাবলী মেনে চলেন।