রুদ্রাক্ষ (Rudraksha) সকলের খুব পরিচিত একটা জিনিস। যেটি অনেকেই ধারণ করেন। তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা পুরাণের নানা কথা এবং গুরুত্ব অনেকেরই অজানা। বিপদ কাটানোর পাশাপাশি এটি শরীরকেও সুস্থ রাখতে পারে। এই রুদ্রাক্ষের নানা প্রকারভেদ রয়েছে। রইল রুদ্রাক্ষের খুঁটিনাটি সমস্ত তথ্য।
শিব পুরাণে রুদ্রাক্ষের জন্মকথার সম্পর্কে বলা আছে। হিমালয়ের ক্ষত্রিয় রাক্ষস ত্রিপুরাসুরকে নিধন করার জন্য শিবকে (Lord Shiva) অনেক বছর যাবৎ সংগ্রাম করতে হয়। সেই যুদ্ধে ব্যস্ত থাকার সময় কোনও কারণে শিবের চোখে আঘাত লাগে। ফলস্বরূপ, তাঁর চোখ থেকে অশ্রু জল পতিত হতে থাকে। এই ঘটনার পর পদ্মযোনি ব্রহ্মা (Brahma) সেই অশ্রুজলকে বৃক্ষে পরিণত হওয়ার আদেশ দেন। এরপর এই গাছটি বড় হলে তার ফল ও ফুল হতে শুরু করে। সেই ফলই রুদ্রাক্ষ নামে পরিচিত।
যে সমস্ত রুদ্রাক্ষ সাধারণত পাওয়া যায়, মনে করা হয় তার মধ্যে আমলকী আকারের রুদ্রাক্ষেই সর্বত্তম। কুলের আকারের রুদ্রাক্ষ মধ্যম শ্রেণীর এবং ছোলার আকারের একেবারে ছোট রুদ্রাক্ষ নিম্নস্তরের।
কীভাবে চিনবেন ভাল রুদ্রাক্ষ? (How to identify real Rudraksha)
যেই সমস্ত রুদ্রাক্ষ সর্বদিকে সমান, উঁচু -নীচু, আঁকা -বাঁকা নয়, সেই রুদ্রাক্ষকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। কোনও রকম ছিদ্র বিহীন, উজ্জ্বল ও ভারী রুদ্রাক্ষ খুব ভাল। রুদ্রাক্ষের ভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে।
রুদ্রাক্ষের প্রকারভেদ ও গুণাগুণ: (Types and benefits of Rudraksha)
একমুখী রুদ্রাক্ষ
এতে দৈবশক্তি থাকে। বাধা -বিপত্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এই ধরণের রুদ্রাক্ষ পরলে। মনে করা হয় একমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণের ফলে বৈষয়িক লাভ বেশি হয়।
দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ
প্রায় চ্যাপ্টা আকৃতির এই রুদ্রাক্ষ সমৃদ্ধি ও সুরক্ষার শক্তি থাকে। মহিলাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী। মনে করা হয় এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে কেউ বশ করতে পারে না।
ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ
ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ পরলে জ্বর উপশম হয়। এটি দৈবিক ক্ষমতা সম্পন্ন। এতে ত্রিলোক - আকাশ, মর্ত্য ও পাতালের যাবতীয় উপশক্তি নিহিত থাকে।
চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষ
শোনা যায় ব্রহ্মার প্রভাবেই চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষের উৎপত্তি হয়। এটি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মন বসাতে খুব ভাল কাজ দেয়। এটি গলায় ধারণ করলে শত্রু ক্ষতি করতে পারে না। সেই সঙ্গে বাস্তব জীবনেও শ্রীবৃদ্ধি হয়।
পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ
এই ধরণের রুদ্রাক্ষ পাপনাশক এবং শান্তিপ্রদানকারী। তবে এটি একসঙ্গে তিনটি ধারণ করতে হয়। তাহলে যে কোনও মনস্কামনা পূরণ হয়।
ষষ্ঠমুখী রুদ্রাক্ষ
কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে এই ধরণের রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে বলা হয়। এর ফলে বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞানের ফল প্রকাশ পায়।
সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ
এটি রোগ নিবারক ও সমৃদ্ধশালী। সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ কামরূপ। বিশেষত মণিবন্ধনে এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে সুফল প্রাপ্তি হয়।
দশমুখী রুদ্রাক্ষ
কামনা পূরণে এই ধরণের রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে বলা হয়। এটি বিপদনাশক এবং রোগ ব্যসধি নিবারক।
একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ
স্বয়ং রুদ্রাক্ষই একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ। এটি ধারণ করলে বিজয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।
দ্বাদশমুখী রুদ্রাক্ষ
এটি সহজে পাওয়া যায় না। তবে ধারণ করতে পারলে, রোগ, চিন্তা, ভয়, শোক ইত্যাদি থেকে মুক্তি মেলে।
চতুর্দশমুখী রুদ্রাক্ষ
রুদ্রদেবের নয়ন থেকে চতুর্দশমুখী রুদ্রাক্ষ সৃষ্টি হয়েছিল। তাই বলাই বাহুল্য এর গুণ অপরিসীম। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি মেলে।
আরও পড়ুন: পুজোয় ফুল আবশ্যক! জানুন এর আসল মাহাত্ম্য