করোনাকালে গতমাসে বাঁকুড়া সফরে গিয়ে জনসভা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই সভা থেকেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সিপিএম-বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ করেছিলেন মমতা। দাবি করেছিলেন, তাঁকে চক্রান্ত করে জেলে ঢোকানো হলেও দলকে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে জেতাবেন। কিন্তু সেই সভার থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে এদিন তৃণমূলনেত্রীর সভার গুরুত্ব আলাদা। শুভেন্দু অধিকারীর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা রাজ্য। তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহলও। কারণ শুভেন্দু নিয়ে যে তিনি আর নমনীয় হবেন না তা গত সপ্তাহেই হাবে-ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রী। এমনকি নন্দীগ্রাম এলাকায় দলবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে খোদ শুভেন্দুর বাবা তথা দলের বর্ষীয়াণ সাংসদ শিশির অধিকারীকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে মমতার এদিনের ঐতিহাসিক সভার অধিকারীর পরিবারের উপস্থিতি নয়েই। কারণ জানা যাচ্ছে মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে এদিনের সভায় প্রতিনিধিত্ব থাকবে না অধিকারীর পরিবারের কোনও সদস্যরেই।
শুভেন্দু মন্ত্রীত্ব ছাড়লেও এখনও দল থেকে ইস্তফা দেননি। এর মধ্যেই জল্পনা জিইয়ে রেখে রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনও বাতিল করে দিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। খাতায় কলমে এখনও তৃণমূলেরই সদস্য একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহু লড়াইয়ের সহকর্মী শুভেন্দু। তবে এদিনের সভায় যে তিনি উপস্থিত থাকছেন না তা আগেই পরিষ্কার ছিল। তবে প্রশ্ন উঠছে শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারীর অনুপস্থিতি নিয়ে। জানা যাচ্ছে রবিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতির সঙ্গে ফোনে কথা হয় শিশির অধিকারীর। সেখানেই শিশিরবাবু জানিয়েছেন, তাঁর পায়ে চোট রয়েছে। সেই কারণে এদিনের সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
অধিকারী পরিবারের আরেক সদস্য তাই শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দুও গরহাজির থাকছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায়। তৃণমূল সাংসদ দিল্লিতে থাকার কারণে সভায় অংশ নিতে পারবেন না বলেই জানা যাচ্ছে। এদিকে তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব থেকে খবর পাওয়া গিয়েছে, দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার সব বিধায়ক-সাংসদকে মেদিনীপুরের সভায় যেতে বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে নিজে না উপস্থিত থাকতে পারলেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বাকি বিধায়করা যাতে মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় থাকেন তেমন আশ্বাসই নাকি দলীয় নেতৃত্বের কাছে দিয়েছেন জেলা সভাপতি তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী।
এর আগে গত মার্চে নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের সভায় গরহাজির ছিল গোটা অধিকারী পরিবার। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই সভায় দেখা যায়নি শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারীকেও। গত ২৭ নভেম্বর শুভেন্দু মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিতেই মেদিনীপুরে সভার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে অবশ্য ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর সভার পাল্টা সভা করেছিল তৃণমূল। মেদিনীপুরে তৃণমূলের বাড়বাড়ন্তের পেছনে যে অধিকারী পরিবারের অবদান রয়েছে তা অস্বীকার করার নয়। সেই মেদিনীপুরের মাটিতে এবার তৃণমূলনেত্রীর জনসভায় অধিকারী পরিবারের অনুপস্থিতি তাই নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এই মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন বার্তা দেন সেদিকেই তাকিয়ে এখন সকলে।