অমিত শাহের মেদিনীপুরের জনসভার ৭২ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বিজেপি সাংসদের বউকে নিজেদের শিবিরে তুলে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। যা নিয়ে এখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি। দলবদলের কারণ হিসাবে কার্যত শুভেন্দু অধিকারীকে টার্গেট করেছিলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি বিধায়ক সৌমিত্র খাঁর স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ। মূলত শুভেন্দুর কারণেই তিনি বিজেপি সঙ্গ ত্যাগ করেছেন তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সুজাতা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের নেতা হিসাবে দাবি করেছিলেন। এবার প্রকাশ্যে শুভেন্দু অধিকারীর দিকেই সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুজাতা। তাঁর দাবি, ২০২১ সালের ভোটে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তিনি বাংলার যেকোন আসন থেকে ভোটে দাঁড়াতে প্রস্তুত। আর তাতে নাকি একেবারে জামানত জব্দ হবে নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্রের।
বুধবার শুভেন্দুর নিজের গড় কাঁথিতে জনসভা করে তৃণমূল নেতৃত্ব একের পর এক তোপ দেগেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার তারই পাল্টা জবাব দিতে মেগা রোড শো ও জনসভা করেন শুভেন্দু। যেখানে আগাগোড়া শুভেন্দুর সঙ্গী ছিলেন সুজাতার স্বামী তথা বিজেপির বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। সৌমিত্রকে পাশে নিয়েই ২০২১ সালের ভোট নিয়ে কার্যত তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন শুভেন্দু। হুঁশিয়ারি দেন বাংলায় পদ্ম ফুটিয়েই তিনি ঘুমোতে যাবেন। দুই মেদিনীপুরের ৩৫টি আসনেই জেতাবেন বিজেপিকে। শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জ থেকে রেহাই পাননি স্বয়ং তৃণমূলনেত্রীও। আর সেই সময়ই নন্দীগ্রারে ভূমিপুত্রকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন সুজাতা মণ্ডল খাঁ।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের কালনার পূর্বস্থলীতে প্রথম জনসভায় অংশ নেন শুভেন্দু সেখানে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে পাশে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ করে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। পূর্বস্থলীর জনসভাতে প্রকাশ্যেই তাঁতে বলতে শোনা যায়, আসন্ন বিধানসভা ভোটে লড়ার ইচ্ছে নেই। বরং শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, ‘পার্টিকে বলব, আমাকে এমএলএ টিকিট দেওয়ার দরকার নেই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা খাটব। যেখানে বলবে, সেখানে যাব। এদের ( তৃণমূল) বিসর্জন দিতে, যা করার করব।’’ আজ সেই পূর্বস্থলীতে দাঁড়িয়েই শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ করেন সুজাতা।
কাঁথি থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর ছাতনার অদূরে বিশ্বরম্ভা ফুটবল মাঠে জনসভায় সুজাতা চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, 'যে কোনও আসনে শুভেন্দু অধিকারী দাঁড়ান, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি পেলে আমি সেখানেই দাঁড়াব। জামানত জব্দ করে তবে ছাড়ব। না দাঁড়ালে ভাবব শুভেন্দু অধিকারী ভয় পেয়েছে!' একইসঙ্গে বিজেপিকে নিশানা করেও সুজাতা বলেন, 'বিজেপিতে দলিতদের, মহিলাদের কোনও সম্মান নেই। আমিও সম্মান পাইনি। আমাকে সীতার অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে।' এদিকে সুজাতা দলবদল করতেই সৌমিত্র খাঁ তাঁকে ডিভোর্সের আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। যাতে বিজেপি সাংসদ স্ত্রীর বিরুদ্ধে মারাত্মক সব অভিযোগ এনেছেন। স্বামী বিজেপির চাপেই ডিভোর্স নোটিস পাঠিয়েছেন বলে আগেই দাবি করেছিলেন সুজাতা। তাই সৌমিত্রর পাঠানো ডিভোর্স নোটিস পেয়ে সুজাতা মণ্ডল বলেন, 'আমি পতিব্রতা স্ত্রী, ডিভোর্সের কথা ভাবিই না, সৌমিত্রর দেওয়া সিঁদুর, নোয়া পরেই বেরিয়েছি। কাজেই সুজাতা যে কোনও ভাবেই সৌমিত্রকে ডিভোর্স দেবেন না সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।