দুর্গাপুজোর মুখে নিম্নচাপের জেরে টানা ৫ ঘণ্টা প্রবল বর্ষণ। বিপর্যস্ত কলকাতা সহ আশেপাশের এলাকা। সকাল থেকে ব্যাহত ট্রেন, মেট্রো, বিমান পরিষেবা। এদিন গড়িয়াতে সবথেকে বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। যাদবপুর, সন্তোষপুর, সেন্ট্রাল কলকাতা সহ উত্তর কলকাতা জলমগ্ন।
কালিকাপুর, গড়িয়াহাট, বেনিয়াপুকুর, একবালপুর ও নেতাজী নগরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। নেতাজী নগরে একজন সাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। জমা জলের মধ্যে সাইকেল চালাতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে বিদ্যুতের পোল ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মেট্রো পরিষেবা। মেট্রোর লাইনে জল জমে গিয়েছে। মহানায়ক উত্তম কুমার এবং রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনের মাঝে লাইনে জল জমে গিয়েছে। শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে ময়দান পর্যন্ত পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণেশ্বর থেকে ময়দান পর্যন্ত শুধু মেট্রো চলাচল করছে। পাম্প বসিয়ে জল বের করার চেষ্টা চলছে।
রাতভর টানা ৫ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টির জেরে হাওড়া ও শিয়ালদা স্টেশনের রেললাইনে জল জমেছে। এর জেরে ট্রেন পরিষেবা ব্যহত হয়েছে। রেললাইন জল জমে থাকার কারণে হাওড়া স্টেশনে ট্রেন ঢুকতে পারছে না।
মঙ্গলবার সকাল থেকে শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় লক্ষীকান্তপুর, ডায়মন্ডহারবার ও ক্যানিং শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ। পার্ক সার্কাস লাইনেও জলে ডুবে গেছে।
সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে বিমান পরিষেবা ব্যাহত হয়। রানওয়েতে জল জমে যায়। সকালে খানিকক্ষণ আগে কলকাতা এয়ারপোর্টে আপাতত বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে। সকালে বিমানবন্দরে ডিসপ্লে বোর্ড কাজ করছিল না। অনেকে বিমান ধরতেই পারেননি।
উত্তর বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থিত নিম্নচাপটি আজ ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমবঙ্গ-উত্তর ওড়িশার সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের উপর অবস্থান করছে।
রাতভর দুর্যোগে কলকাতার সিংহভাগ এলাকাই জলের তলায়। বহু বাড়ি, আবাসনের ভিতরে জল।
কোথায় কতটা বৃষ্টি হয়েছে?
কামডহরি (গড়িয়া): ৩৩২ মিলিমিটার
যোধপুর পার্ক: ২৮৫ মিলিমিটার
কালীঘাট: ২৮০.২ মিলিমিটার
তপসিয়া: ২৭৫ লিমিমিটার
বালিগঞ্জ: ২৬৪ মিলিমিটার
চেতলা: ২৬২ মিলিমিটার
মোমিনপুর: ২৩৪ মিলিমিটার
চিংড়িঘাটা: ২৩৭ মিলিমিটার
পামার বাজার: ২১৭ মিলিমিটার
ধাপা: ২১২ মিলিমিটার
সিপিটি ক্যানাল: ২০৯.৪ মিলিমিটার
উল্টোডাঙ্গা: ২০৭ মিলিমিটার
কুঁদঘাট: ২০৩.৪ মিলিমিটার
পাগলাডাঙা: (ট্যাংরা)২০১ মিলিমিটার
কুলিয়া (ট্যাংরা): ১৯৬ মিলিমিটার
ঠনঠনিয়া: ১৯৫ মিলিমিটার
মঙ্গলবার সকাল প্রায় সাড়ে ৭টা নাগাদ কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুমে গিয়ে শহরের পরিস্থিতি তদারকি করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
জানা যায়, রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত লকগেট বন্ধ ছিল। সেই সময় পর্যন্ত আড়াইশো মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ভোরে লকগেট খুলে দেওয়া হয়।
দুপুর ১২ টার পর গঙ্গায় জোয়ার আসবে। ফলে লকগেট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আজ যারা রাস্তাঘাটে বেরোচ্ছেন তাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে বলছে কলকাতা পুরসভা।
কোনওরকম বাতিস্তম্ভ না ছোঁয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বেলা বাড়লে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
জমা জলে হাসপাতালগুলিও জলমগ্ন। রোগী ও রোগীদের পরিবার বিপাকে পড়েছেন। ওপিডিতে যারা চিকিৎসার জন্য এসেছেন তারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অফিস যাত্রীদেরও নাজেহাল অবস্থা।
রাতেই ডুবে যায় রেলস্টেশন। এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ১০-১২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে।