হাতে টানা রিকশা আজকাল প্রায় দেখা যা না বললেই চলে। কলকাতা শহরের ঐতিহ্য বলে মনে করা হলেও, হাতে টানতে টানতে রিকশা নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য অমানবিক ঠেকে বেশিরভাগ মানুষের চোখে। শহরের আনাচে কানাচে এখন নতুন আমদানি, ই-রিকশা। গ্রামে-গঞ্জে এবং শহরতলী এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় এই যান। অল্প দূরত্ব যাওয়ার জন্য বহু মানুষই আজকাল ই-রিকশায় চাপেন। মাত্র ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে চটজলদি গন্তব্যে পৌঁছতে এর জুড়ি মেলা ভার।
কিন্তু শহরে যেমন বাড়ছি ই-রিকশার সংখ্যা, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাদের 'দাদাগিরি'। জীবনযাত্রা সহজ করলেও গলিগালায় প্রচুর সংখ্যক ই-রিকশা যানজট তৈরি করছে। যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যযাত্রীদের জন্য।
কখনও খুচরো নিয়ে সমস্যা তো কখনও আবার বেপরোয়া গতি, কলকাতার রাস্তায় দৌরাত্ম্য বাড়িয়েছে ই-রিকশা, টোটোর দৌরাত্ম্য বেড়েছে। চটজলদি কাছাকাছি গন্তব্যে পৌঁছতে সেগুলি সহজ অপশন হলেও তাদেরও দৌরাত্ম্যেও জেরবার নিত্যযাত্রীরা। এই নিয়ে এবার বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য সরকার।
পরিবহণমন্ত্রীর কথায়, 'যে সমস্ত রাস্তা-গলিতে বড় যানবাহন চলে বনা, সেখানে মানুষকে বাড়ি থেকে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয় এই টোটো বা ই-রিকশা।' তবে ই-রিকশার কোনও পারমিট পরিবহণ দফতরের হাতে নেই ফলে কতগুলি গাড়ি চলছে তার সংখ্যা নেই।
ই-রিকশা চালানোর জন্য আলাদা করে রাজ্য সরকারের থেকে পারমিটের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে ই-রিকশা কিনে চালানো সহজতর। ফলে যানজটের সৃষ্টি হলেও সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে ই-রিকশা চালকদের পাকড়াও করাও ততটা সহজ নয়। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী বলেন, 'লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক ই-রিকশা কিনেছে এবং যেহেতু পারমিট নিতে হয় না তাই যত্রতত্র চালাচ্ছে। কিন্তু ধরপাকড় করে বন্ধ করার অধিকার নেই।'
কীভাবে টোটো, ই-রিকশার দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে? কী ভাবছে পরিবহণ দফতর? স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, 'আমরা এদের একটি নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে আনতে চলেছি। কোন এলাকায়, কোন রাস্তায়, কোন পর্যন্ত গেলে যানজট তৈরি হবে না, তা পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা বসে আলোচনা করে নির্ধারিত করবে। ফলে মানুষ অনেকটা স্বস্তি পাবে।'
অর্থাৎ রুজিরুটিতে টান না ফেলে টোটো এবং ই-রিকশা রুট বেঁধে দিতে স্থানীয় পুরসভা, মিউনিসিপ্যালিটি এবং পঞ্চায়েত আধিকারিকরা পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই মতো নির্দেশিকা দিয়ে দেওয়া হবে টোটো ও ই-রিকশা চালকদের।
বছরকয়েক আগে নিউটাউনের বিশ্ববাংলা সরণিতে টোটো, রিকশা, ই-রিকশা, সাইকেল চলাচল নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু ইদানীং বহু চালক পুলিশের সেই নিষেধাজ্ঞাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরের ব্যস্ত মেন রোডে রমরমিয়ে চালাচ্ছে ই-রিকশা।
ই-রিকশার কোনও রেজিস্ট্রেশন হয় না। তাই বিশ্ব বাংলা সরণির ব্যস্ত রাস্তায় আইন ভঙ্গকারী রিকশা চালকদের দাপাদাপি ঠেকাতে প্রয়োজনে পথে নেমেও অভিযান চালানো হবে বলে কড়া ভাবে জানিয়েছিল বিধাননগর কমিশনারেট।
মোটামুটিভাবে এই টোটো বা ই-রিকশার দাম শুরু হয় ১ লাখ টাকা থেকে। মানুষের বসার সুবিধেও আছে এই অত্যাধুনিক যানগুলি। একবার সম্পূর্ণ চার্জ দিলে ৮০ কিমি পর্যন্ত যাওয়া যায় ই-রিকশায়। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২৪.৫ কিমি এবং এতে সম্পূর্ণ চার্জ হতে ২.৩০ ঘণ্টা সময় লাগে যার খরচ পরে ৬ পয়সা প্রতি কিমি।
যদি ধরে নেওয়া যায় এই ই-রিকশাতে দিনে ৭০ কিমি পথ যাওয়া যায়, তাহলে দিনে ১৫০ টাকা চার্জিং কস্ট অর্থাৎ মাসে মোট ৪৫০০ টাকা চার্জিং কস্ট লাগে।