বলা হয়, একদা তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্বের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে কাছের লোক ছিলেন যিনি, তাঁর নাম শোভন চট্টোপাধ্যায়।
মমতা ডাকেন কানন বলে। শোভনকে প্রতিবছর ভাইফোঁটা দেন। মমতার প্রিয় সেই কাননের 'ঘর ওয়াপসি' হল। কলকাতার মেয়রের পদে শোভনকে বসিয়েছিলেন মমতা। প্রথম কোনও মেয়র, যাঁকে জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল।
সেই শোভনই একদা একরাশ ক্ষোভ, অভিমান দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন বিজেপি-তে। আবার শোভন স্বমহিমায়।
তৃণমূলে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেওয়ার আগেই NKDA (নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)এর চেয়ারম্যানের মতো পদও পেয়ে গেলেন।
কথায় বলে, রাজনীতিতে চিরদিনের বন্ধু ও বা চিরশত্রু বলে কিছু হয় না। ২০১৭ সাল থেকে শোভনের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের দূরত্বের অন্তিম পরিণতি পায় ২০১৯ সালে অগাস্টে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দেখা গিয়েছিল, গেরুয়া শিবিরে।
২০১৯ সালে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে শোভন বলেছিলেন, ' ২০১৭ র অগাস্ট নাগাদ দেখলাম এত ভাল কাজ করা সত্ত্বেও ওয়েবকুপার কমিটি ভেঙে বৈশাখীকে সরিয়ে দেওয়া হল। বলা হল আমায় শিক্ষা দিতে এটা করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে দলে অভিযোগ জানাই। আমায় কিছু বলার থাকলে সরাসরি কথা বলা যেত। দলে, মন্ত্রিসভায় যেভাবে দিদি আমাদের নামে অপপ্রচার, দোষারোপ করছিলেন, তা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। তাহলে সম্মানের সঙ্গে আপস করতে হত। প্রতিকারও হয়নি। দলে কাজ করার জায়গাও পাচ্ছিলাম না। তাই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম।'
শোভন বিজেপি-তে যোগ দিয়ে বলেছিলেন, 'রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ একদিন দেখা করে বলেন, আর কতদিন এভাবে বসে থাকবেন। এই কথাগুলো আর ফেরাতে পারিনি। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আশা করি আগামিদিনে এর ফলপ্রসূ ভূমিকা দেখতে পাবেন।'
২০১৭ সালে স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের থেকে ডিভোর্স চেয়ে মামলা করেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেই সময়ই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভনের সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসে। অনেক তৃণমূল নেতার দাবি ছিল, বৈশাখীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে দলের বিভিন্ন কাজে মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটেছিল শোভনের।
ধীরে ধীরে দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। সূত্রের খবর, শোভনের ব্যক্তিগত জীবনের এই অশান্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভাল ভাবে নেননি। বরং ক্ষুব্ধই হয়েছিলেন।
২০১১ সালে যখন পশ্চিমবঙ্গে যখন তণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এল, সেই বছর বেহালা পূর্ব বিধানসভায় জিতেছিলেন শোভন। সে বছর মন্ত্রীও হন। ২০১৫ সালে কলকাতা পুরসভায় জয়ের পর তাঁকেই মেয়র করেন মমতা।
২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত কলকাতার মেয়র ছিলেন শোভন। কংগ্রেসে ছাত্র রাজনীতি থেকে হাতেখড়ি শোভনের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই নানা আন্দোলনে সামিল ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসেবে ১৯৯৮ সালে তৈরি হওয়া তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন।