কয়েক বছর আগেও ডুয়ার্সের নদীগুলোতে দেদার মিলত, প্রচুর নদীয়ালি মাছ। বাটা, চাঁদা, পুঁটি, বোয়াল, খলসে, বেলে, খয়রা, বাম, গুলশা আরও কত মাছের বাহার।
তিস্তা, মহানন্দা, তোর্ষা, রায়ডাক, সঙ্কোশ, কালজানি, করলা, ধরলা, মূর্তি, কুর্তি, নেওড়া, বালাসন, বুড়ি বালাসন নদীর বুকে হাত ঢুকালেই মিলত কিছু না কিছু মাছ। বিশেষ করে বর্ষায়।
বোরোলি যেমন উত্তরবঙ্গের ইলিশ বলে পরিচিত, তেমনই বোরোলি ছাড়াও প্রচুর মাছ রয়েছে যেগুলি প্রতিটি স্বাদে ইউনিক। আলদা। এখন জলের রুপোলি শস্যের আকাল দেখা দিয়েছে।
রাতভর জাল ফেলে কেউ এক কেজি কখনো দুই কেজির বেশি মাছ ধরতে পারছেননা বলে জানান কুমারগ্রাম ব্লকের লস্করপাড়া, রাধানগর , চেংমারী, নারারথলি সহ বিভিন্ন এলাকার মমৎস্যজীবিরা।
মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। চার পাঁচ জন মিলে রাতভর নৌকা চালিয়ে নদীতে জাল ফেলে সামান্য পরিমান মাছ ওঠে। তা বাজারে বিক্রি করে ভাগে যে টাকা পাওয়া যায় তাতে সংসার চালানো কষ্টকর। তাঁরা আরও বলেন নদীয়ালি মাছের আকাল দেখে নবীন প্রজন্ম মাছ ধরার বংশগত পেশায় আসতে চাইছেনা।
কিন্তু কেন এই মাছের আকাল ! প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলি পড়ে নদীখাত ভরে যাওয়া। নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় মাছেদের স্বাভাবিক প্রজনন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এরপর রয়েছে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার, জমি ধৌত কীটনাশক নদীর জলে মিশে জলদূষণ ঘটানোয় মাছেরা মারা যাচ্ছে।
পাশাপাশি নদীতে বিষ প্রয়োগ ও ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে মাছ মারা এবং মশারির জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা ও নদীয়ালি মাছেদের বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। তিনি জানান প্রতিনিয়ত প্রচারের জেরে এখন মশারি জালের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। আগে সারা বছর মিললেও এখন বর্ষায় সামান্য পরিমণ পাওয়া যায়। বাকিরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।
বিকল্প হিসেবে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছগুলিকে পুকুরে চাষ করে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তা খোলা স্রোতের মাছের সঙ্গে স্বাদে ও মানে ধারে কাছে আসে না।