সম্প্রতি ব্রেকফাস্টে খাওয়া ডিমের স্বাদ একটু ভিন্ন ধরনের লেগেছে? হয়তো আপনার ভাবনা ভুল নয়। ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকেই অভিযোগ উঠছে, স্থানীয় পোলট্রি ফার্ম থেক কেনা ডিম তুলনামূলক ভাবে হাল্কা মনে হচ্ছে। খোসা সহজেই ভেঙে যাচ্ছে। এবং কুসুমে আগের মতো গাঢ় সোনালি রং নয়। ৩০টি ডিমের ক্রেট এখন আর কেবলমাত্র পকেট ফাঁকা করছে না বরং নষ্ট ডিমের সংখ্যাও বাড়াচ্ছে।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিম উৎপাদক দেশ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিমের মান নিঃশব্দে কমছে। ফিকে স্বাদের অমলেটই তার প্রমাণ। ডিমের খরচ বেড়েছে আর তার সঙ্গেই বাজারে ঢুকে পড়েছে নকল ডিমও।
ভারতের বাড়তি তাপমাত্রা পোলট্রির ক্ষতি করছে। অনেক ছোট খামারে নেই পর্যাপ্ত তাপমাত্রা। ফলে মুরগিরা অতিরিক্ত গরমে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ডিম পাতলা কিংবা পানসে পাড়ছে তারা। অনেক সময়ে ডিম পাড়াও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ডিম ভেজাল হওয়ার একটা বড় কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের মতো মুরগিরাও স্ট্রেসের শিকার হয়। এতে তাদের বিপাকক্রিয়া ও দেহে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়। সরাসরি প্রভাব পড়ে ডিমের গুণমানে।
২০১৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মুরগিদের খাদ্যগ্রহণ ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে এবং ডিম উৎপাদনের হার ১১ শতাংশ পড়ে গিয়চেছে। একইসঙ্গে খোসা পাতলা, কুসুমের রং ফিকে হতে শুরু করেছে ডিমগুলির।
অনেক বাজারে ডিম খোলা ট্রে-তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকে। ফ্রিজ ছাড়া ডিম দ্রুত সতেজতা হারায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিন ঠান্ডা ও শুকনো জায়গায় বা ফ্রিজে রেখে ২-৩ দিনের মধ্যেই খাওয়া উচিত।
ডিম পুরনো হলে তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। শুধু স্বাদই নষ্ট হয় না, এই ডিম খেলে অসুস্থ হওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হয়। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না থাকায় অনেকেই নকল ডিম বিক্রি শুরু করেছে। রেজিন, সোডিয়াম অ্যালজিনেট ইত্যাদি রাসায়নিক দিয়ে বানানো ডিম দেখতে আসল মনে হলেও এতে কোনও পুষ্টিগুণ নেই। বরং এগুলি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
নকল ডিমের খোসা অস্বাভাবিক মসৃণ বা রাবারের মতো হয়, ফাটালে কুসুম এবং সাদা অংশ সহজেই মিশে যায় বা জেলির মতো লাগে। আসল ডিমে স্বাভাবিক গন্ধ থাকে, নকলের গন্ধ রাসায়নিক বা গন্ধহীন হয়।
সস্তায় বেশি ডিম উৎপাদনের চাপে অনেক খামার মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোন দেয়। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ও দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করলেও, ডিমে ওষুধের অবশিষ্টাংশ থেকে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। এই অবশিষ্টাংশ শরীরে গেলে ভবিষ্যতে কোনও সংক্রমণে ওষুধ কার্যকর না-ও হতে পারে।
পচা বা দূষিত ডিম খেলে স্যালমোনেলা সংক্রমণ হতে পারে। লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় বমি, জ্বর, ডায়রিয়া। বিশেষত গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্কদের জন্য এটি বিপজ্জনক।