করোনায় থমকে গিয়েছিল পর্যটন। তার সঙ্গে থমকে গিয়েছিল উত্তরের বিভিন্ন বন বাংলোর জীবনযাত্রাও। দীর্ঘদিন পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পর্যটনকেন্দ্রগুলি।
একইভাবে এক সময় পর্যটন ডেস্টিনেশনের শীর্ষে থাকা কেন্দ্রগুলিও ধীরে ধীরে পর্যটক ফিরে পাচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হল জলদাপাড়া পর্যটন কেন্দ্র।
দীর্ঘদিন বাদে ফের পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ছে জলদাপাড়া হলং বাংলোতে। হলং বনবাংলোর টানেই দুর্গাপুজায় বেড়াতে উত্তরবঙ্গে আসতেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
এই হলং বনবাংলোর সামনেই নীরবে বয়ে চলেছে ছোট্ট হলং নদী। এই নদীর ছোট বোরোলি মাছ ছিল জ্যোতিবাবুর পছন্দের খাবার।
জ্যোতি বাবুর ভ্রমন কালে দুপুর কিংবা রাতের আহারে এই নদীর বোরোলি মাছের পাতলা ঝোল, কাঁচা চচ্চড়ি রাঁধতে নিয়োগ করা হতো বিশেষ রাঁধুনি।
এই হলং বাংলো থেকেই গভীর অরন্যের নীরবতা উপভোগ করতেন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী। শুনতেন হরেক পাখির সমবেত কলতান।
তিনি কখনও নদীর ধারে, আবার কখনও লজের জানালা দিয়েই উঁকি দিয়ে উপভোগ করতেন বাংলোর সামনে থাকা লবনের ঢিবিতে লবন খেতে আসা গন্ডারের দল, বাইসন, হাতি, হরিণের পাল।
শুধু প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুই নয় এই বনবাংলোর টানে কয়েকবার ঘুরে গেছেন আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
তিনিও এখানে কয়েকবার নৈশ যাপন করেছেন। চেখে গেছেন হলং নদীর বোরোলি মাছ। যা নাকি তাঁদের কাছে স্বাদে মনমোহিত করে দেয়।
বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘুরে গিয়েছেন এই হলং বনবাংলোতে। তিনিও এখানকার সৌন্দর্যকে তারিয়ে উপভোগ করে গিয়েছেন।
ষাট এবং সত্তরের দশকের মাঝামাঝি জলদাপাড়া জঙলের কোর এলাকায় এই বনবাংলোটি নির্মান করা হয়।সে সময় জলদাপাড়া ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি হিসেবে পরিচিত ছিলো।
সে সময় থেকেই এই বাংলোটি পর্যটকদের কাছে অতি প্রিয় হয়ে উঠে।২০১২ সালে জলদাপাড়া ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি থেকে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা লাভ করে।
কাঠের তৈরি দ্বিতল বাংলোটিতে মোট আটটি সুসজ্জিত থাকার ঘর রয়েছে। তার মধ্যে দুইটি ঘর বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিশেষ অতিথিদের জন্য।
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তরের অধীনে এই ঐতিহাসিক বনবাংলোটি অনলাইনে বুক করতে হয়। যদিও বুকিং পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার বলেই মনে করে সবাই।
যদিও করোনা সংক্রমণের জেরে এই বনবাংলোটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালের ১৪ মার্চ এই বাংলোতে শেষ পর্যটদের দলটি এসেছিলেন।
তারপর দীর্ঘ বিরতির পর ফের পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সবচেয়ে প্রিয় এই হলং বনবাংলো।
হলং বন বাংলোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, এখানে জানালা থেকে বসে সারাদিনই জংলি জন্তু-জানোয়ারের আনাগোণা দেখা যায়।
সামনের এক চিলতে মাঠে ঘাস, লবণ খেতে আসে একশৃঙ্গ গণ্ডার, গাউর, হরিণ, সম্বর সহ নানা রকম প্রাণী। কখনও কখনও চিতাও আসে।
ফলে ওই ঘাসজমিমুখী ঘরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি পূর্ণিমার রাতে ওই ঘরের বুকিং পাওয়াই যায় না। সকলেরই পাখির চোখ তখন ওই দিকে।