উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম স্থলবন্দর থেকে চালু হল রেলপথে রপ্তানি, প্রথম দিন মোষ, মাংস বোঝাই ১২ টি কন্টেনার রওনা দিল আইসল্যান্ডে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের এক মাত্র স্থলবন্দর শিলিগুড়ি নিউ জলপাইগুড়ি এলাকার স্থলবন্দর থেকে চালু হল রেলপথে পণ্য রপ্তানি পরিষেবা।
বৃহস্পতিবার কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোনরকম জাঁকজমক অনুষ্ঠান ছাড়াই এই পরিষেবা চালু করল বেসরকারি সংস্থা।
জানা গেছে এই স্থলবন্দর থেকে সপ্তাহে তিনটি ট্রেনের মাধ্যমে পণ্য সামগ্রী রেলপথে রপ্তানি করা হবে।
সব মিলিয়ে এই পরিষেবা চালু হওয়ায় পণ্য সামগ্রী রপ্তানির ক্ষেত্রে খরচ এবং সময় বাঁচবে বলে আশা লজিস্টিক সংস্থার।
উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে শিলিগুড়ি নিউ জলপাইগুড়ি এলাকার ডাবগ্রামে স্থলবন্দর তৈরি করা হয়।
এই স্থলবন্দর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পণ্য সামগ্রী গুলি দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি করা হয়।
তবে এতদিন পর্যন্ত সড়ক পথে পণ্য সামগ্রী বিশেষ কন্টেনারের মাধ্যমে রপ্তানি করা হতো। যা অনেকটাই সময় সাপেক্ষ ছিল।
তবে এবার এই স্থলবন্দরে রেলপথে পণ্য সামগ্রী রপ্তানি পরিষেবা চালু করল একটি বেসরকারি কোম্পানি।
জানা গিয়েছে এদিন প্রথম দিন স্থলবন্দরের ভেতর থেকেই রেলের বিশেষ রেকের মাধ্যমে মহিষের মাংস বোঝাই ১২ টি কন্টেনার নিয়ে আইসল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এই বিশেষ ট্রেন।
আপাতত সপ্তাহে তিনটি ট্রেনের মাধ্যমে এই রপ্তানি করা হবে। এতদিন পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের কোন পণ্য রপ্তানি করতে হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে প্রথমে কলকাতায় পাঠাতে হতো।
তারপর সেটি জাহাজ বন্দরে পাঠিয়ে তারপরেই বিভিন্ন দেশে পণ্য পৌঁছে যেত।
তবে এই স্থলবন্দরে রেলপথে রপ্তানি চালু হওয়ায় এখন উত্তর-পূর্ব ভারতের যে কোনও পণ্য সামগ্রীকে সহজেই এখান থেকে সরাসরি যে কোন দেশ কিংবা বিদেশে পাঠানো যাবে।
নিউ জলপাইগুড়ি স্থলবন্দরের বেসরকারি লজিস্টিক কোম্পানির টার্মিনাল ম্যানেজার মহাম্মদ আলম খান জানান,
গতকাল কাস্টম বিভাগের মাধ্যমে ১২ টি পণ্য বোঝাই কন্টেইনারের রপ্তানিতে ছাড়পত্র মেলার পর আজ রেলের বিশেষ রেকের মাধ্যমে কন্টেনারগুলিকে নিয়ে রওনা দেয়।
উত্তরবঙ্গে এই প্রথম স্থলবন্দর থেকে পণ্য সামগ্রী সরাসরি রপ্তানি করা হচ্ছে।
যা এতদিন পর্যন্ত কলকাতা কিংবা হলদিয়া বন্দর থেকে করা হতো।
এই স্থলবন্দরের ফলে পণ্য সামগ্রী রপ্তানির ক্ষেত্রে সময় এবং খরচ দুটোই কমবে।
পাশাপাশি রাজ্য়ের উত্তর অংশ থেকে মাল পরিবহণের মাত্রা বাড়বে। তাতে স্থানীয় অর্থনীতি অনেকটা চাঙ্গা হবে।
ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্সের তরফে জানানো হয়েছে, এটি দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল। অবশেষে মিটে যাওয়ায় আমরা খুশি।
উত্তরবঙ্গের আনারস, ধান, পাট, গম সহ অন্যান্য শস্য যেগুলি অনেক সময় সঠিক সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়, সেগুলি দিশা পাবে।
এর আগে বাম আমলে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী থাকার সময় অশোক ভট্টাচার্য এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
প্রাথমিক পরিকাঠামোও তৈরি হয়। কিছুটা জমি অধিগ্রণ করে কাজ শুরু হয়। কিন্তু কিছু জমি নিয়ে সমস্যা ছিল।
যা নিয়ে সমস্যার জেরে আটকে থাকে ড্রাই পোর্টের কাজ। এরপর তৃণমূল আমলেও দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে জমি জট মেটে।
এরপরও টেন্ডার ডাকা হলে অনেকে অংশ নেয়নি। ফলে ফের পরিকাঠামো প্রস্তুত থাকলেও কার্যকারিতা শূণ্য হয়ে দাঁড়ায়।
তবে অবশেষে চলতি সপ্তাহ থেকে রপ্তানি শুরু হওয়ায় অবশেষে খুশির হাওয়া। বিপুল কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নতি হবে বলে আশাবাদী সকলেই।