বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মঞ্চে গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য এবং উত্তরবঙ্গে স্বায়ত্বশাসনের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বারলার বাংলা ভাগের চক্রান্তকে কার্যত সিলমোহর দিল তৃণমূলের রাজ্য এসটি সেলের সাধারণ সম্পাদক তথা বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী রাজেশ লাকড়া এবং তৃনমূলপন্থী গ্রেটার কোচবিহার নেতা বংশীবদন বর্মন।
এই মঞ্চেই গ্রেটার নেতা বংশীবদন বর্মন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর নাম না করেই হুংকার দেন আমরা দিদিও বুঝিনা, দাদাও বুঝি না। যে আমাদের দাবি পূরণ করবে তার সাথেই আমরা থাকবো। এদিনের মঞ্চ থেকে রাজেশ এবং বংশীবদন দুই জনেই বলেন রাজবংশী, আদিবাসী ভাইভাই।
দলে নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে এবং মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই কি রাজেশ এবং বংশীবদন বর্মন ফের কি জনজাতি ভিত্তিক রাজনৈতিক তাস খেলা শুরু করলো। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূল কংগ্রেসের আদিবাসী নেতা রাজেশ লাকড়া ওরফে টাইগার উত্তরবঙ্গকে স্বায়ত্বশাসন ও শাসক দলের আর এক নেতা বংশীবদন বর্মন আলাদা গ্রেটার কোচবিহার রাজ্যের দাবি তোলায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বারলা উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত বা পৃথক রাজ্য করার পর তৃণমূলের পক্ষ থেকে থানায় থানায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। রাস্তায় নেমে তৃণমূল কর্মীরা এর প্রতিবাদও করেছিল। পাল্টা তোপ দেগে বিজেপিও প্রশ্ন তুলেছে, এবার তৃণমূল রাজেশ লাকড়া বা বংশীবদন বর্মনের নামে থানায় থানায় এফআইআর করবে তো?
গেরুয়া শিবিরের নেতারা বলেন, এবার দেখব তৃণমূল কি করে? রাজেশবাবু তৃণমূলের রাজ্য এসটি সেলের সাধারণ সম্পাদক। গত বিধানসভা ভোটে মাদারিহাট আসনে তিনি দলের প্রার্থীও ছিলেন। কিন্তু জিততে পারেননি। বিজেপি’র মনোজ টিগ্গার কাছে তিনি ২৯ হাজারেরও বেশী ভোটে হেরে যান। তৃণমূল নেতা বংশীবদনবাবু রাজবংশি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলনেরও নেতা।
ওই মঞ্চে চাঁচাছোলা ভাষায় রাজেশ লাকড়া বলেন, উত্তরবঙ্গে এবার থেকে শেষ কথা বলবে রাজেশ লাকড়া ও বংশীবদন বর্মন।স্বায়ত্বশাসন পেলে উত্তরবঙ্গের সব সম্প্রদায়ের মানুষেরই মঙ্গল হবে। মঞ্চে বংশীবদনবাবু বলেন, রাজবংশী ও আদিবাসীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে সব রাজনৈতিক দল আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। আমাদের জনগোষ্ঠীর যাঁরা ভালো করবে আমরা তাঁদের দিকেই থাকব। ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে বংশীবদনবাবু বলেন, আমাদের দাবি কোচবিহার রাজ্যের ভারতভুক্তি চুক্তি অনুসারে গ্রেটার কোচবিহার ‘গ’ শ্রেণিভূক্ত রাজ্য।
বংশীবদনবাবু বলেন, উত্তরবঙ্গের মাটির মালিক আদিবাসী ও রাজবংশী সম্প্রদায়। এই মাটির মালিক হওয়া সত্বেও আমরা দুই সম্প্রদায়ই দিশেহারা। আমরা যোগ্য মান সম্মানও পাচ্ছি না। বীরপাড়া থেকে এদিন বংশীবদন বর্মন ও রাজেশ লাকড়ার এই দাবির কথা ছড়িয়ে পড়তেই নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজেশ লাকড়া ও বংশীবদন বর্মনের দাবি লুফে নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি।
বিধানসভায় বিজেপি’র পরিষদীয় দলনেতা মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বলেন, জন বারলার পৃথক রাজ্যের দাবিকে আমাদের দল সমর্থন করে না। কিন্তু জন বারলা এই দাবি তোলায় তৃণমূল তাঁর বিরুদ্ধে থানায় থানায় এফআইআর করেছিল। এবার একই দাবি তোলায় তৃণমূল কি রাজেশ লাকড়া বা বংশীবদনবাবুর নামে পুলিসের কাছে এফআইআর করবে?
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, কে কি বলছে জানি না। রাজেশের সভা নিয়ে দলের কাছে কোন খবর নেই। আমাদের দল যে কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে মদত দেওয়ার বিরোধী। আমি বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাচ্ছি।