উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ অব্যাহত। টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় ধস নেমেছে। পাহাড়ে জলমগ্ন উত্তরবঙ্গের একাধিক এলাকা। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জলপাইগুড়ি থেকে শুরু করে মালদা। বিভিন্ন এলাকায় নদীতে জারি করা হয়েছে লাল-কমলা-হলুদ সর্তকতা।
এদিকে সিকিমে ধস নেমে একাধিক মৃত্যুর খবর সামনে আসছে। তবে তাদের পরিচয় এখনও পরিষ্কার নয়। তবে জানা গিয়েছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ভিজিটে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। উত্তরবঙ্গ সংবাদ-এর খবর অনুযায়ী, ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ধসে।
এ ছাড়া পাহাড়ে আটকে রয়েছেন বহু পর্যটক। সিকিমের বিভিন্ন এলাকায় যারা আটকে পড়েছেন তাদের আরও দিন তিনেক সময় লাগবে এখান থেকে ফিরে সমতলে আসতে।
ধস সরাতে তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। তবে তা সময় সাপেক্ষ বলে মনে করা হচ্ছে। একে দুর্যোগ চলছেই। তার ওপর নতুন করে বিভিন্ন এলাকায় ধস নামছে। ফলে কাজ অত্যন্ত কঠিন।
কালিম্পং এর বেশ কিছু জায়গায় ছোট ছোট ধস নামার খবর এসেছে। তবে তার জন্য পর্যটক আটকে থাকার খবর নেই। প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানিয়েছেন, যে এই মুহূর্তে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পাহাড়ে ঘুরতে না যাওয়াই ভাল।
অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের সমতলেও বিভিন্ন নদীতে জলস্ফীতি ঘটেছে। তোর্সা, কালজানি, তিস্তা, মহানন্দা, বালাসন, রায়ডাক, সংকোশ, আত্রেয়ী, করলা, করতোয়া, শিলতোর্ষা, গঙ্গা সহ বিভিন্ন নদীতে প্রবল জলোচ্ছাসে অশনিসংকেত দেখছেন আশপাশের বাসিন্দারা।
উত্তরবঙ্গের একাধিক নীচু জায়গা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। দুদিন থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। রোদের দেখা নেই। ফলে কতদিন জলবন্দি হয়ে থাকতে হবে তা কেউ জানেন না। কপালের ভাঁজ চওড়া হচ্ছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, এ বছর উত্তরপ্রদেশ থেকে মনিপুর পর্যন্ত বিস্তৃত নিম্নচাপ কিছুতেই পূর্বদিকে সরছে না। স্থির হয়ে রয়েছে। এই এলাকার ওপর তাতে আরো তিন-চার দিন ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘ বছর পর বর্ষার শুরুতেই এমন বিপাকে পড়েছে উত্তরবঙ্গ। তরাই-ডুয়ার্স পাহাড় রীতিমত মৃত্যুফাঁদ হয়ে রয়েছে। কোথায়, কখন ধস নামবে কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না। বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে রয়েছে। ছোট-বড় প্রতিদিনই নামছে।
শুক্রবার সকালেও একাধিক জায়গা থেকে ধস নামার খবর মিলেছে। সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্ক মিলছে না অনেক জায়গাতেই। ফলে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছেন পর্যটক থেকে সাধারণ মানুষ। বাইরে কোথাও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি চিন্তাজনক।
শিলিগুড়িতে বালাসন নদীর উপর স্থায়ী সেতু নির্মানের জন্য ডাইভারশন ব্রিজ তৈরি করে অস্থায়ী যাতায়াত চলছিল। তাও জলের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বড় গাড়ি ওই সেতু দিয়ে চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কলকাতাগামী গাড়িগুলিকে অনেকটা ঘুরপথে যেতে হচ্ছে।
অতিপ্রবল বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদীতে জলস্ফীতি। তারই মধ্যে দুই জেলার জন্য লাল সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলির জন্য কমলা সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। এই বৃষ্টি আগামী রবিবার পর্যন্ত আপাতত চলবে বলে জানানো হয়েছে। ১৯ জুনের জন্য আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আগামী ৫ দিন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে দিনের তাপমাত্রার তেমন কোনও পরিবর্তন হবে না বলে জানা গিয়েছে