তীব্র দাবদাহে পুড়ছে উত্তরবঙ্গ (North Bengal)। দিনের তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। রোদের তাপে রাস্তায় বের হওয়া যাচ্ছে না। ঘরে বসে দরদর করে ঘামতে হচ্ছে। রাস্তায় পা রাখলে ঝলসে যাওয়ার অবস্থা। অত্যধিক গরমে অনেক জায়গাতেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে পড়ুয়া সহ শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
বৃহস্পতিবার দিনহাটা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী চুমকি রায় কলেজে পরীক্ষা দেওয়ার পরই তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণেই ওই ছাত্রীকে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে বলে সরব হয় বিভিন্ন মহল।
জলপাইগুড়িতেও তাপমাত্রার পারদ রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি শহরের তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা শেষ কবে জুলাই মাসে গিয়েছিল, তা মনে করতে পারেননি অতি বৃদ্ধজনেরাও।
অত্যধিক গরমের কারণে সদর উত্তর মণ্ডল অন্তর্গত নাথুয়াচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহ শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অন্যদিকে পশ্চিম কুমার পাড়া প্রাইমারি স্কুলেও প্রচণ্ড গরম এবং বিদ্যুৎ না থাকায় শুভঙ্কর দে নামে স্কুলের এক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে খবর মিলেছে। আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড উত্তাপে পরিস্থিতি বেগতিক। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা স্কুলগুলিতে বিশেষ করে প্রাইমারি স্কুলগুলিতে শিশুদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রেখে পঠনপাঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার দাবি তুলেছে এবিটিএ। অন্তত এক সপ্তাহ সকালে স্কুল চালু করার দাবি তুলে জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতিকে একটি ডেপুটেশনও দেওয়া হয়েছে।
এদিন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চিঠি দিয়ে স্কুল ছুটি বা বিকল্প বন্দোবস্ত করার দাবি তুলেছেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, আমি কলকাতায় ছিলাম, আমাকে অনেকেই ফোন করে সমস্যার কথা জানিয়েছে। দাবি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। গরমে তিষ্ঠোনো যাচ্ছে না উত্তরবঙ্গে। তাই এখন স্কুলে বাচ্চাদের যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর।
শিলিগুড়ি থেকে মালদা, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি কমবেশি একই রকম। গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার সঙ্গে জলীয় বাষ্পের আধিক্য মানুষকে পর্যুদস্ত করে ফেলেছে।
এই আবহাওয়ার ফলে বাড়ছে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডিহাইড্রেশনের সমস্যা। হাসপাতালগুলিতে ভিড় বাড়ছে। আবার ভিড়ে দাঁড়িয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে।
এদিকে তার মধ্য়ে কিছুটা আশার কথা শুনিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তারা বলছে, শনিবার উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় বৃষ্টি ফিরবে। ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এখন শান্তি বা স্বস্তি বলতে ওই পূর্বাভাসটুকুই।
পাহাড়েও দার্জিলিংয়ে ২৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছে। যা এই সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি বেশি। দার্জিলিং আর কালিম্পং জেলার পাহাড়ি এলাকাগুলিই একমাত্র সম্বল।
এর মধ্যে আবার উত্তরবঙ্গের একাধিক নদীর জল বাড়ছে। ভুটান পাহাড়ে বর্ষণ শুরু হওয়ায় একাধিক নদীর জল প্রায় বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। তিস্তা তোর্ষা নদী ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। যদিও তাতে স্বস্তি নেই উত্তরবঙ্গে।