ভুটান পাহাড়ে লাগাতার ডলোমাইট মাইনিংয়ের জেরে চোখে ছানি পড়ে অন্ধত্বের পথে যাত্রা শুরু করেছিল বিশ্বের লুপ্তপ্রায় আদিম জনজাতি টোটো সমাজ। একটি জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় সেই গ্রামকে অবশেষে অন্ধত্ব মুক্ত গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করলো আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন।
এই ঘটনায় আবেগঘন মুহূর্ত। বিশ্বের আদিমতম জনজাতি টোটোদের গ্রামে। গ্রামের শুকরা টোটো। ১৯ বছর পর নিজের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেয়েছেন। দীর্ঘ ২০ বছর বাদে ময়না টোটোকে দেখলেন নিজের নতুন দৃষ্টিতে। ময়নাকে দেখেই শুকরারর প্রতিক্রিয়া আরে তুমি তো বুড়ি হয়ে গিয়েছ। ময়নার পালটা জবাব আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখ।
বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় এই টোটোদের গ্রামে গোটা বিশ্বে মাত্র ১৬০০ জন টোটো জনজাতি বেঁচেবর্তে আছে। ভুটান পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা আদিম জনজাতির পাহাড়ি এই গ্রামটির অধিকাংশ মানুষ ভুটান পাহাড়ে লাগাতার ডলোমাইট মাইনিংয়ের জেরে চুনাপথরের ধুলোয় প্রায় সকলের চোখেই ছানি পড়ে। এর জেরে অন্ধত্বের শিকার হয় গোটা টোটো সমাজ।
স্বাধীনতার আগে পরে প্রথমবার আলিপুরদুয়ার জেলার প্রথম গ্রাম হিসেবে দুর্গমতম গ্রামটি রবিবার বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে। রীতিমতো ছোট্ট একটি অনুষ্ঠান করে আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলা দাসসরকার এদিন টোটাপাড়ায় গিয়ে নতুন স্বীকৃতির কথা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল থেকে আলিপুরদুয়ার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সহযোগিতায় শিলিগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের তিনটি প্রতিষ্ঠান টোটোপাড়াকে অন্ধত্ব মুক্ত করতে এগিয়ে আসে।
শুরু হয় টোটোপাড়াকে সামনে রেখে পাইলট প্রজেক্টের কাজ। স্বাস্থ্য দপ্তর ও এনজিও প্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্ভে করা শুরু করেন। যাদের ছানি রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করা শুরু হয়।চলে চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দের নজরদারি। যেমন রোগ, তেমন চিকিৎসা।
এইভাবে গত ৩ বছর কাজ চলেছে। শেষ অবধি ২০২১ সালে এক্কেবারে শেষ ধাপে ২৭ জনের ছানি অপারেশন করা হয়। আর তার জেরেই প্রথমবার এশিয়ার ক্ষুদ্রতম জনজাতিদের মধ্যে আর কেউ ছানি জনিত কারনে চোখের সমস্যায় রইলেন না টোটোপাড়ায়।
শিলা দাসসরকার বলেন, আজ আমরা গর্বিত।রাজ্যের ইতিহাসে প্রথমবার টোটোপাড়া বিশেষ স্বীকৃতি পেল। এই স্বীকৃতি জেলার বাকি সব গ্রাম,জনপদকে পথ দেখাবে।
টোটোপাড়া বল্লালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, আশা এস টোটো বলেন, অন্ধ হয়ে থাকাটা মানুষের জীবনে একটা অভিশাপের মত। আমরা চাই সবাই আলোতে থাকুক।
স্বাস্থ্য দপ্তর,বাকি সকল প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, মাদারিহাট ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সাফল্য এসেছে।