Durga Puja 2022: পুজো পুুজো করে কটা দিন কেটেই গেল। সপ্তমী-অষ্টমী-নবমীও প্রায় পার। দশমীতে মন খারাপ। মা ফিরছেন কৈলাসে। আবার এক বছর অপেক্ষার পালা। মন খারাপ বাঙালির। কিন্তু কিছু গ্রামে দশমীতেও মন খারাপ নেই। বরং উৎসাহ আরও বেশি। কারণ মা এখানে দশমীতে ভাসান যান না। দুর্গাপুজোর নির্ঘন্ট মেনে এখানে মা দশমীতে ফেরেন না। এটাই রীতি উত্তরবঙ্গের তিস্তা, তোর্সা, রায়ডাক পাড়ের কয়েকটি গ্রামে।
আরও পড়ুনঃ নবমীতে ভুলেও করবেন না এই কাজগুলি, নাও মিলতে পারে কাঙ্খিত ফল
মঙ্গোলীয় ধাঁচে তৈরি এই দুর্গাপ্রতিমা। গ্রামের মেয়ের মতোই তাঁর অবস্থান। কিন্তু ডাকাবুকো, দলছুট প্রকৃতির। এখানকার প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বাঙালির সাধারণ সর্বজনীন মণ্ডপ থেকে দশমীতে বিদায় নিয়ে হিমালয়ের পথে ফেরার সময় মা এখানে কৃষক গেরস্থের বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে যান। স্থানীয়রা বলেন দেবী ঠাকুরানি। এখানে পিতৃপক্ষের অবসান, দেবীপক্ষের সূচনার রীতিা নেই। পক্ষ দুটি রয়েছে। তাকে বলে ‘যাত্রা’ ও ‘মাত্রা’। রাজবংশি সমাজের অর্থবান জোতদার শ্রেণির মানুষেরা মহানবমীতে দেবী আরাধনা করতেন। সেটি মাত্রা নামে পরিচিত। সাধারণ মানুষ দশমীতে কৃষি বন্দনা দিয়ে দেবী ঠাকুরানিকে পুজো দেন। তাকে স্থানীয়রা বলেন যাত্রা।
দশমীতে সূচনা, পুজো হয় একাদশী থেকে
কোথাও মহানবমী আবার কোথাও দশমীতে চাষের সামগ্রীর পুজো করা হয় এই অঞ্চলের গ্রামগুলিতে। এই পুজোর মধ্যে দিয়েই প্রস্তুতি শুরু হয় হেমন্তের কৃষি কাজের। নবান্নকে সফল করে তুলতেই তাঁদের আকাঙ্খা। দশমীতে প্রস্তুতির পর মূলত একাদশী থেকে ফের শুরু হয় অন্য দেবীর পুজোর। তিস্তাপাড়ের মানুষ মেতে ওঠেন দেবী ঠাকুরানির পুজোয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবী ঠাকুরাণি দশমীর পর পুজো নিতে আবির্ভূত হন অন্য রূপে।
এখানে দেবী দুর্গা কৃষক সম্প্রদায়ের অন্নদা
দেবী ঠাকুরানি শস্য-কৃষি ও প্রাচুর্যের দেবী। আদতে দেবী ঠাকুরানি অর্থাৎ উমাকে নিয়ে উত্তরে যত গল্পগাঁথা প্রচলিত হোক না কেন, সেটা খুব বেশি দিনের নয়। কারণ, তিস্তা, তোর্সা, সংকোশ নদীপাড়ের সমাজে দেবী দুর্গা আরাধনার রেওয়াজ পাঁচশো বছরের বেশি প্রাচীন নয়, এমনটাই বলছে গবেষণা। বাংলায় দুর্গাপুজোর সূচনা নিয়ে নানা মত থাকলেও আদিতে কিরাত ভূমি নামে পরিচিত উত্তরবঙ্গের হৈমবতী আরাধনার সূচনা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই।
আরও পড়ুনঃ Dashami 2022: শত্রুনাশ, ধনপ্রাপ্তি-সমৃদ্ধি, দশমীতে পুজো করুন এই দু'টি গাছ
গবেষণা কী বলছে?
ইতিহাস গবেষক আনন্দগোপাল ঘোষ তাঁর গবেষণার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিবৃতিতে জানিয়েছেন, উত্তরে দেবী আরাধনার সূচক হিসাবে কোচবিহারের রাজা বিশ্বসিংহ এবং তাঁর পুত্র নরনারায়ণের নাম পাওয়া যায়। এরপর ওই রাজ পরিবারের হাত ধরে দেবী উমা ধীরে ধীরে গাঁয়ের সাধারণ মহলেও পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করেন বলে জানা যায়। এর আগে দুর্গম ও জঙ্গলাকীর্ন ডুয়ার্সের তিস্তা, তোর্সা, রায়ডাক, জলঢাকা পাড়ের ভূমিপুত্র রাজবংশি, মেচ, রাভা জনজাতির কাছে হিমালয়কন্যা দেবী পার্বতী বা উমা অপরিচিতই ছিলেন বলে জানা যায়।