প্রাণঘাতী নাইলন সুতোয় ঘুড়ি ওড়ানো কুঅভ্যাস বদলে ফেলে সাবেকি সুতির সুতো মাঞ্জা দিতে ব্যস্ত শান্তিপুরের প্রজন্মের ছেলেরা। দীর্ঘ লকডাউনে বন্ধ তাঁত ঘরের ঠকঠক শব্দ! তবে হামানদিস্তায় কাচ গুঁড়ো করার শব্দ কিছুটা হলেও উপার্জনের দুঃখ ভুলিয়ে ক্ষণিকের আনন্দ দানে সমর্থ হয়েছে।
একের পর এক ধর্মীয়-সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ হয়েছে! কর্মহীন হয়ে গৃহবন্দি অবস্থায় থেকে, একটু মানসিক অবসাদ কাটাতে ঘুড়ি ওড়ানো কার্যত উৎসবে পরিণত হয়েছিল শান্তিপুরে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবৎ চীনা মাঞ্জার সুতো জায়গা করে নিয়েছিল সাবেকি সুতোকে দূরে সরিয়ে। তবে কথা বলতে না পারা পশুপাখি বা গাছগাছালি এতদিন যাবৎ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মানুষের টনক নড়েছে নিজেদের ক্ষতিসাধনের পর!
তীক্ষ্ণ ধার যুক্ত অত্যন্ত শক্ত এই নাইলন সুতোয় গত বছরেও কারোর আঙ্গুল কারও বা কান বা অন্য কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনা সকলেরই জানা। মূলত রথ কেন্দ্রিক ঘুড়ি ওড়ানোর রীতি। এ বছর শুরুর প্রথম দিকেই ২ শিশু, ২ প্রবীণ গুরুতর জখম হওয়ার পর, আত্মসমালোচনার ঝড় সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। বিক্ষোভ ডেপুটেশন সুশীল সমাজের। প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক গাফিলতি নিয়েও।
অবশেষে নাইলন শত্রুর বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান, ধরপাকড় শুরু হয়েছে শান্তিপুর থানার পক্ষ থেকে। গ্রেফতার দুই জন। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বেশ কিছু ঘুড়ি, লাটাই। ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নাইলন সুতো।
যদিও একাংশ মনে করেন রাঘববোয়ালরা গোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের রমরমা ব্যবসা শুধু চুনোপুঁটিরা পড়েছে ধরা! তবে পুলিশি শাসনেই হোক বা নিজেদের সচেতনতায় আবারও হামানদিস্তায় কাঁচ গুড়ো, তা কাপড়ে চেলে, আতপ চালের মান্ডি করে, মোটা কাপড়ে আঙ্গুলে টিপ ধরে, রাস্তার এক লাইটপোস্ট থেকে অন্য লাইটপোস্ট পর্যন্ত লাটাই হাতে ছেলেদের আগের মত দেখা মিলছে শান্তিপুরের পথেঘাটে।
তাদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, সকলেই সুতির সুতো ব্যবহার করলে কোনও অসুবিধা নেই! তবে নাইলন সুতা ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ না হলে তাদের ঘুড়ি কাটা যাবে প্রত্যেকটি! কিছু সচেতন অভিভাবকরা অবশ্য জানান, সন্তানদের সুশিক্ষার জন্য শুধু আকাশে উড়ানোর আনন্দ পাওয়াই থাক! প্যাঁচ খেলে কেটে যাক ঘুড়ি তবুও অপরের নিরানন্দ কারণ হয়ে দাঁড়াবো না।
বিভিন্ন ঘুড়িপ্রেমীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, লাভ-ক্ষতির হিসাবের দিক থেকে অবশ্য নাইলন সুতো এগিয়ে। পচনশীল নয়, মাঞ্জা দেওয়ার সময়-শ্রম দু'টোই বাঁচতো! তাই একটু বেশি দাম হলেও পড়তা ছিল। তবে প্রাণের থেকে কখনই বেশি দাম নয়!
বিপদ যে নিজেদের আসবে না এ কথা কে বলতে পারে? তাই কুঅভ্যাস বদল। তবে শান্তিপুরের ঘুড়িপাড়া নিশ্চিন্তপুর এবং বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ি সুতো বিক্রেতাদের মাথায় হাত!
তাঁরা প্রশাসনিক দিক থেকে কোনও স্পষ্ট ধারণা পাননি। সুতির সুতোতেও মাঞ্জা দেওয়া অপরাধ কিনা সে বিষয়ে। তবে বেশ কয়েকটি দোকানে নিজেরাই সুতি সুতোতে মাঞ্জা দিয়ে বিক্রি করছেন।