একটি ছত্রাক বা ফাঙ্গাস যা মস্তিষ্ককে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে প্রাণ নেয় তা জমি থেকে সমুদ্রে পৌঁছেছে। যার কারণে মারা গেছে ৪০টি ডলফিন ও পোরপোইস। প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এই ছত্রাক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ১৯৯৭ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে, বিজ্ঞানীরা ৪২ টি মৃত ডলফিন খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলি ছত্রাকের কারণে মারা গিয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা ওয়াশিংটন এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার আশেপাশে সালিশ সাগরে (Salish Sea) এই ৪২ টি ডলফিনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছিলেন। তাদের শরীরে যে ছত্রাক ছিল তা মাটিতে পাওয়া যায়। মাটিতে বা গাছে দেখা যায়। এই ফাঙ্গাসের সমুদ্রে যাওয়ার রহস্যের এখন সমাধান হয়েছে। এই ছত্রাকের নাম Cryptococcus gattii। এটি একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ছত্রাক (Tropical Fungus), যা ডলফিনের ফুসফুস এবং মস্তিষ্ককে খারাপভাবে প্রভাবিত করে। এটি ব্রেনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে শেষ করে দেয়, তারপরে এটি মস্তিষ্ককে কুড়ে কুড়ে খায়।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে, একই ক্রিপ্টোকোকাস গ্যাটিইয (Cryptococcus gattii) ছত্রাকের কারণে ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ২১৮ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। যার মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এই রহস্য তখন থেকেই রয়ে গেছে যে এটি সমুদ্র থেকে স্থলে এসেছে নাকি স্থল থেকে সমুদ্রে গেছে। কারণ এটি সাধারণত স্থলভাগে মাটির ভিতরে থাকে। তাহলে সামুদ্রিক প্রাণীদের ওপর কেমন ভাবে প্রভাব পড়েছে? এমনকি এটি এক জীব থেকে অন্য জীবে যায় না। যে কারণে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে এখন এই রহস্য উন্মোচিত হল।
সম্প্রতি ডিজিজেস অফ অ্যাকুয়াটিক অর্গানিজমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , ক্রিপ্টোকোকাস গ্যাটিইয়ের পরিবর্তনের কারণে এই ছত্রাকের আবাসস্থল পরিবর্তিত হচ্ছে। এটি ক্রান্তীয় এলাকা ছেড়ে উত্তর দিকে যাচ্ছে। বন উজাড় এবং ক্রমাগত শহর গড়ে তোলার কারণে ছত্রাক জমি ও গাছ থেকে বেরিয়ে বাতাসে ভাসতে ভাসতে সমুদ্রে পৌঁছেছে।
এরপর এটি সমুদ্রের ওপরের দিকে ভাসতে থাকে। যা ডলফিন এবং পোর্পোইস মাছ শ্বাস নেওয়ার সময় শরীরে নিয়েছিল। কারণ এই দুটি মাছই গভীর জলে বাস করলেও এরা বাতাসে লাফিয়ে অক্সিজেন নেওয়ার জন্য সমুদ্রের ওপরের দিকেও আসে। প্রায়শই ঢেউয়ের সাথে খেলা করে। তারা মানুষের নৌকা দেখলে চারদিকে ঘুরে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। এ কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় এই ছত্রাকের ছোট ছোট কণা শরীরে চলে গেছে।
১৯৯৭ সালে সালিশ সাগরে পাওয়া ক্রিপ্টোকোকাস গ্যাটিইয়ের (Cryptococcus gattii) প্রথম ঘটনাটি রিপোর্ট করা হয়েছিল। তারপর অনেক ডলফিন এবং পোর্পোইস মারা গিয়েছে। এর দুই বছর পর, ১৯৯৯ সালে, এই ছত্রাকের সংক্রমণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা এখনও বোঝার চেষ্টা করছেন যে ছত্রাক যেটি স্থল থেকে সমুদ্রে মাছ মেরে ফেলে তা কীভাবে মানুষকে সংক্রমিত করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জমির ছত্রাক কীভাবে তার এলাকা বাড়িয়েছে তার এটি একটি উদাহরণ মাত্র। ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে Coccidioides ছত্রাকের সংক্রমণে 2২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তিনগুণ বেড়েছে। একে ভ্যালি ফিভারও বলা হয়। ২০১৯ সালে পরিচালিত একটি মাডলিং সমীক্ষা অনুসারে , ২১০০ সাল নাগাদ , এই রোগটি কানসাস বা উত্তর ডাকোটাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
২০১৯ সালে mBio-এর একটি সমীক্ষা অনুসারে , ড্রাগ-প্রতিরোধী ছত্রাক ক্যান্ডিডা অরিস (Candida Auris) এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকায় বেশ কয়েকবার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ২০০৯ সালে টোকিওর একজন মহিলার মধ্যে এর প্রথম সংক্রমণ দেখা যায়। এই ছত্রাক মানবদেহে প্রবেশ করতে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার সাহায্য নিয়েছে। নিজেকে উচ্চ তাপমাত্রায় বসবাসের উপযোগী করে তুলেছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সারাহ টাইম্যান বলেন, যেভাবে পরিবেশের পরিবর্তন হচ্ছে, তা থেকে অনেক বিপর্যয় আসবে, তবে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো রোগ। জানি না কোন জায়গা থেকে কোন ছত্রাক, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া মানুষ ও প্রাণীকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে। আমরা এই ধরনের রোগের জন্য প্রস্তুত নই।