জাপানের মানুষের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু নিয়ে ভাল রকম সুখ্যাতি আছে। নিয়মানুবর্তিতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সুখাদ্য খাবার গ্রহণ করে থাকে, যার জন্যই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। তারা খাবারে এমন উপকরণ ব্যবহার করে যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনায়াসে বেড়ে যায়। তাদের মধ্যে ফার্মেন্টেড খাবার খাওয়ার প্রচলন আছে। এই ফার্মেন্টেড খাবারই দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
ফার্মেন্টেড খাবার বলতে ইস্ট জাতীয় খাবারকে বোঝানো হয়। সারারাত বা কয়েক ঘণ্টা সাধারণ তাপমাত্রায় খাবার সামগ্রীগুলি রেখে দেওয়া হয়। খাবার ফার্মেন্টেশন ব্যাকটেরিয়া বা জৈব ছত্রাকে পরিণত হওয়ার পর তা অ্যাসিডে পরিণত হয়। এই অ্যাসিড প্রাকৃতিক সংরক্ষণের কাজ করে। এই খাবারগুলির স্বাদ টক হয়।
ফার্মেন্টেড খাবার শরীরের জন্য খুবই উপকারী হয়। জাপানে এই রেওয়াজ যুগের পর যুগ চলে আসছে। কফি ও চকোলেটের বিনসগুলিকেও ফার্মেন্টেশন করে নানারকম সুস্বাদু খাবার বানানো হয়। দুধ পাস্তুরাইজ করে, ছোট ছোট আকারে চিকেন কেটে ফার্মেন্টেড খাবার বানানো হয়। এটিকে প্রসেসড খাবারও বলা যেতে পারে। যা দীর্ঘদিন রাখলেও নষ্ট হয় না। তাদের কাছে এই খাবারগুলির স্বাদই স্বর্গীয়।
জানলে হয়রান হয়ে যাবেন, জাপানের বিখ্যাত খাবার সুসি তৈরির চাল দু-তিনবছরের জন্য ফার্মেন্টেশন করা হয়। ফলের তৈরি ওয়াইন বানানোর জন্য আঙ্গুরগুলিকে সপ্তাহ দুয়েকের জন্য ফার্মেন্টেশন করা হয়। পরম্পরা ধরে যে খাবারগুলি জাপানে প্রচলন আছে তা ফর্মেন্টেশন ছাড়া ভাবাই যায় না।
জাপানে এই ফার্মেন্টেশনকে 'হক্কো' বলা হয়। যা তাদের খাবারকে আরও সুস্বাদু করে তোলে। জাপানের কন্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এরিক রথ জানিয়েছেন,"সুকেমোনো, মিসো, সয়া সস সমস্ত খাবারই ফর্মেন্টেশন করা হয়। নট্ট, জাপানের একটি বিখ্যাত অ্যালকোহল ড্রিংক , রুচু সবকিছুর ক্ষেত্রেই ফর্মেন্টেশন করা হয়। এধরণের খাবারের তালিকা অতি দীর্ঘ।
জাপানের কোজি মোল্ড বিশেষজ্ঞ শিওরি কাজিওয়ারা জানান, ফার্মেন্টেড খাবার জাপানিদের খুবই প্রিয়। এখন শুধু জাপান নয় সারা বিশ্বের মানুষ এই ধরণের খাবারের দিকে ঝুঁকছে। ফর্মেটেড খাবার মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ থেকে রক্ষা করে। এর কারণ, এই ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন থাকে। মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর চাপ ঠিক রাখতে খুবই উপকারী।
জাপানের একজন বিশেষজ্ঞ জানান, এই খাবারগুলিতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম থাকে। এধরণের খাবার পাচনক্রিয়াকে সুলভ করে। ভিটামিন বি ওয়ান কম থাকলে তা পূরণ করে।
তবে ফার্মেন্টেড খাবার ছাড়াও কম পরিমাণ খাবার খাওয়ার কারণে তাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো রোগ কম হয়। তাছাড়াও, জাপানের মানুষ অন্য দেশের লোকেদের থেকে শারীরিক পরিশ্রম করে বেশি। এসব কারণেই তারা দীর্ঘায়ু ও সুস্থ থাকতে সক্ষম হয়।