চিনে আয়োজিত SCO সামিটে এক নয়া জোট দেখল বিশ্ব। যে জোটে রয়েছে ভারত, চিন ও রাশিয়া। তিন দেশেরই এখন কমন শত্রু আমেরিকা।
SCO সামিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তিন রাষ্ট্রনেতাই বুঝিয়ে দিলেন, আমেরিকার দাদাগিরির দিন শেষ।
এদিন তিয়ানজিনে দেখা গেল, মোদী, জিনপিং ও পুতিন মিলে দেদার খোশগল্প করছেন। স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় চিনে দেখা গেল মহাশক্তিদের মহামিলন।
কখনও মোদী ও পুতিন হাসাহাসি করছেন। কখনও দেখা গেল, জিনপিং মোদীর সঙ্গে গল্প করছেন। কখনও দেখা গেল, তিনজনে মিলে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছেন। SCO দেশগুলিতে তুরস্কও রয়েছে। এই তুরস্কই অপারেশন সিঁদুর-এর সময় পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু SCO সামিটে দেখা গেল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজে গিয়ে মোদীর সঙ্গে কথা বলছেন।
নিজের এক্স (Twitter) অ্যাকাউন্ট থেকেও ছবি শেয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি লেখেন, 'তিয়ানজিনে আলোচনার মুহূর্ত। SCO সম্মেলনের ফাঁকে প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট শি-র সঙ্গে মতবিনিময়।' আরেকটি পোস্টে পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ছবি দিয়ে লেখেন, 'রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা হওয়া সবসময়ই আনন্দদায়ক।'
SCO সম্মেলনের উদ্বোধনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করলেন। তাঁর অভিযোগ, বিশ্বব্যবস্থায় কিছু দেশ 'ধমকানো' বা 'বুলিং' করার মতো আচরণ করছে। যদিও সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম নেননি, কিন্তু তাঁর বার্তা স্পষ্টভাবে ওয়াশিংটনের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
শি বলেন, 'SCO-এর দেশগুলির সম্মিলিত অর্থনীতি এখন প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এই সংগঠনের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে।' একটি SCO ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার, এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি নতুন কেন্দ্র তৈরির করারও প্রস্তাব দিলেন শি জিনপিং।
চিনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে উঠে আসে বিনিয়োগের প্রসঙ্গও। বললেন, SCO দেশগুলিতে চিনের বিনিয়োগ ইতিমধ্যেই ৮৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তাঁর কথায়, 'আমরা সবাই বন্ধু এবং অংশীদার। পার্থক্যকে সম্মান করতে হবে, কৌশলগত যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে এবং ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।'
প্রধানমন্ত্রী মোদী যদিও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি আমেরিকা বা পশ্চিমি দুনিয়ার বিরুদ্ধে, কিন্তু তাঁর অ্যাটিটিউড অনেক কিছু বলে দিল। ভারত পশ্চিমি ব্লক এবং রাশিয়া-চিন ব্লক, দুটি ক্ষেত্রেই কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ, ইন্দো-প্যাসিফিক সংঘাত এবং মার্কিন-চিন দ্বন্দ্বের আবহে মোদী,জিনপিং ও পুতিনের এই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতীকী দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত এখনও কোয়াড-এর (Quad) সক্রিয় সদস্য, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া রয়েছে। আবার অন্যদিকে, SCO এবং ব্রিকস-এর (BRICS) মতো সংগঠনে চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখছে। ফলে মোদীর এই উপস্থিতি ভারতের বহুমুখী কূটনৈতিক কৌশলেরই প্রতিফলন।
বিশ্বের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি যখন একই মঞ্চে এতটা উষ্ণ পরিবেশে কথা বলে, তখন স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন প্রশাসনের মাথাব্যথা বাড়ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মোইজ্জুও মোদীর সঙ্গে গল্পে মাতলেন। সেই মলদ্বীপ, যারা কিছু বছর আগে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছিল।
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে গল্প করছেন। মত বিনিময় করছেন। বস্তুত, আমেরিকা বহুদিন ধরেই চেষ্টা করছে রাশিয়া-চিন ঘনিষ্ঠতাকে ভাঙতে এবং ভারতকে পুরোপুরি নিজের দিকে টানতে। কিন্তু মোদীর এই অবস্থান স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ভারত নিজের স্বার্থকে সবার উপরে রেখে কূটনৈতিক চাল চালছে।
SCO সম্মেলন থেকে যে ছবি উঠে এল, তা নিছক কোনও একটি মূহূর্তের ছবি নয়। বরং আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার ইঙ্গিত। যেখানে পশ্চিমি আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে উঠে আসছে চিন-রাশিয়া-ভারতের সমীকরণ। যদিও বাস্তবে তিন দেশের স্বার্থ একেবারে এক নয়, কিন্তু কূটনৈতিকভাবে এই বার্তাই যথেষ্ট, এশিয়ার শক্তিধররা চাইলে জোট গড়তে পারে।