ছবি: শেরনি
কাস্ট: বিদ্যা বালন, ব্রিজেন্দ্র কালা, শরৎ সাক্সেনা, নীরজ কবি, বিজয় রাজ, ইলা অরুণ
পরিচালক: অমিত মাসুরকর
রেটিং: ৩.৫/৫
মানুষ আর জন্তুর ক্রমবর্ধমান অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে অবশ্যম্ভাবী জয় হচ্ছে মানুষেরই। কিন্তু মানুষ সত্যিই জিতছে? জঙ্গল ধ্বংস করে জনবসতি গড়ে মানুষ নিজেও ধ্বংস হচ্ছে না? নির্বাচারে পশু-পাখি মেরে কো সিস্টেমের বারোটা বাজিয়ে মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে? এ সব জ্বলন্ত প্রশ্ন তুলেই নজর কাড়বে বিদ্যা বালন অভিনীত শেরনি।
নারী কেন্দ্রীক সিনেমায় বিদ্যা যে বরাবরই অনবদ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শান্ত, সংযত অথচ প্রতিবাদী, সৎ একজন ডি এফ ও-র ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। যিনি মানুষখেকো প্রাণীর প্রাণ নাশের চেয়ে তাকে জীবিত ধরে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে চান। অন্য দিকে একেবারে নির্লজ্জ পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের জেরে শিকার উৎসবে পরিণত হয় বাঘ-বন্দি খেলা। অফিসের বস বিদ্যার দক্ষতার চেয়ে তাঁর নারী হওয়াকেই বেশি বড় করে দেখেন। তার সঙ্গে চড়া দাগের দুর্নীতি এবং রাজনীতির প্রবেশ। সব মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় বিদ্যাকে।
বাঘিনীকে জীবন্ত ধরার কাজে সাহায্য মেলে গ্রামেরই অধ্যাপক নুরানী-র। বাঘিনীর আক্রমণ নিয়ে গ্রামবাসীদের অসন্তোষ ক্রমে বাড়ে। তার আঁচ এসে পড়ে বনদফতরের কর্মীদের উপরেও। প্রাইভেট শিকারির বন্ধুকের গুলি না বন্যপ্রাণ বাঁচিয়ে রাখার অদম্য ইচ্ছা, কে শেষ পর্যন্ত জিতবে, সেটাই ক্লাইম্যাক্স। রিভিউতে সবটা বলে দিলে তা সম্ভাব্য দর্শের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
সিনেমা দেখতে গিয়ে দর্শকরা যেটা বেশি করতে বুঝতে পারবেন, তা হল সমাজে পুরষতন্ত্রের বীজ কোন গভীরে প্রথিত রয়েছে। পরিচালক অমিত মাসুরকরের এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য। তিনি সহজ অথচ কদর্য সত্যিটা সকলের সামনে অন্য আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন। খানিকটা প্রতীকী ভাবে। অভিনয়ের দিক থেকে ব্রিজেন্দ্র কালা, শরৎ সাক্সেনা, নীরজ কবি, বিজয় রাজ, ইলা অরুণ এঁদের নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। এঁদের অভিনয় দক্ষতা সম্পর্কে দর্শকরা ভালোই জানেন। কিন্তু একজনের বিষয়ে এখানে না বললে রিভিউ অসমাপ্ত থেকে যাবে। তিনি শম্পা মণ্ডল। জ্যোতির চরিত্রে তিনি যেন অদ্ভূত বৈপরীত্য তৈরি করেছেন পুরুষশাসিত সমাজে।
সিনেমা বা বিনোদনের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তা সকলেই স্বীকার করবেন। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে সে কথা সকলেই ভালো বুঝতে পেরেছেন। একটা সুখের বিষয়, রাধে-র চেয়ে শেরনিকে সকলে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এ দেশে অন্তত এমন ঘটনা বিরল। তাই ভরসা হয়, ভালো সিনেমা ভবিষ্যতে আরও বেশি করে প্রশংসা, যোগ্য মর্যাদা পাবে।