বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (Burdwan Medical College And Hospital) কোভিড ওয়ার্ডে (Covid Word) ভর্তি রোগীচিকিৎসা নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ পরিবার পরিজনদের। করোনা রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রাধারানি ওয়ার্ডকে কোভিড ওযার্ড করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। কিন্তু রোগীদের পরিবার পরিজনদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এল অন্য চিত্র।
করোনা (Corona) ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক রোগিনীর পরিবারে লোকেদের অভিযোগ, কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি হলেও বিভিন্ন রোগীর আলাদা আলাদা সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তাঁদের দেখভালের জন্য পর্যাপ্ত নার্স নেই। এমন অনেক রোগী ভর্তি রয়েছেন যাঁদের নড়াচড়াও ক্ষমতা নেই। নিজের থেকে ওষুধ খাওয়ার ক্ষমতা নেই। এমনকী কারও যদি অক্সিজেনের মাক্স খুলে যায় তো সেটা পরিয়ে দেওয়ার লোক পর্যন্ত নেই ওয়ার্ডে। রোগীনির পরিবারের অভিযোগ নার্সরা সহযোগিতা করছেন না, আবার বাড়ির লোকেদের ভিতরে যাওয়ার অনুমতিও মিলছে না। রোগীর সম্পর্কে কোনও তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। ওই রোগীনির পরিবারের দাবি, সোমবার থেকে ভাল পরিষেবা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেটাও হয়নি।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার রাত্রি ১২টা নাগাদ মৃত্যু হয়েছে ফণীভূষন বর্মন নামে ব্যক্তির। সেই থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত ওয়ার্ডেই পড়ে দেহ। আর ওয়ার্ডের সামনে বাবার ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষায় বসে ছেলে পুরুষোত্তম বর্মন। কারণ মৃতদেহ বাড়ির লোককে দেওয়া হবে না জানিয়েছে কতৃপক্ষ। এক্ষেত্রে হাসপাতালের গাফিলতিতেই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পুরুষোত্তমের। তিনি জানান, কাটোয়া হাসপাতালে কোভিড ধরা পড়ার পর সেখান থেকে রেফার করা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের। কিন্তু এখানে পরিষেবা ঠিকমতো না পাওয়ার জেরেই মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। পুরুষোত্তমবাবুর অভিযোগ, তাঁর বাবার শ্বাসকষ্ট ছিল, কিন্তু রোগীকে দেখাশোনা করার জন্য কেউ ছিলেন না। প্রথমে শুধু একবার নাকে অক্সিজেন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকে আর নার্সর কিছু করেননি। এক্ষেত্রে অনেক সময় অক্সিজেন মাক্স তিনি লাগিয়ে দিয়েছেন বলে জানান মৃতের ছেলে।
একই অভিযোগ ওয়ার্ডের সারি (SARI) ওয়ার্ডে ভর্তি কুমকুম ধারার স্বামী তপন ধারারও। তিনি জানান, একবার করে ভেতরে যাচ্ছি। নার্সরা দূর থেকে বলে দিচ্ছেন অক্সিজেন মাস্ক বাড়ির লোকদের লাগিয়ে দিতে। মাস্কের ভিতরে যে দুটো লিকুইড দিতে হচ্ছে সেটাও আমাকেই খুলে কেটে সেট করে দিয়ে দিতে হচ্ছে।
নিলিমা সেন নামে এক রোগিনীর মেয়ে অপর্ণা দত্তগুপ্তের অভিযোগ, ৫ তারিখ থেকে তাঁর মা কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি। অবস্থা গুরুতর। তাঁর পক্ষে উঠে নিজের হাতে খাওয়া সম্ভব নয়। ৮৩ বছর বয়স। কিন্তু তাঁকে খাইয়ে দেয়ার লোক নেই। তিনি খেতে পারছেন না। অক্সিজেন মাস্ক খুলে যাচ্ছে। পরিয়ে দেওয়ার লোক নেই। এক্ষেত্রে অপর্ণা দত্তগুপ্তের দাবি, নার্সদের জানালে তাঁরা বলছেন এটা ওয়ার্ড বয়ের কাজ। আর ৩০টা বেড পিছু একজন ওয়ার্ড বয়। ওয়ার্ড বয়কে বলেও কাজ হচ্ছে না। প্রায় একই অভিযোগ অন্যান্য রোগীর আত্মীয়দেরও ।