এক যুবকের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে উঠলো পূর্ব বর্ধমানের গলসির সন্তোষপুর গ্রাম। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো একটি বাইক, একটি চারচাকা গাড়ি, দুটি ট্রাক্টর ও খড়ের পালুইসহ একাধিক বাড়িতে। ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাতে। পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর মাথায় কুড়ুল গাঁথা অবস্থায় ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
জানা গিয়েছে, নিহত যুবকের নাম উৎপল ঘোষ। পেশায় মাছ চাষী ছিলেন উৎপল। ঘটনার ব্যাপক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। তদন্তে নেমে প্রতিবেশী যুবক মনোজ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয়দের থেকে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত আনুমানিক ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। তাঁরা জানাচ্ছেন, উৎপল ঘোষ গ্রামেরই পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করতেন। এদিন সন্ধা বেলায় তিনি বাড়িতে নিজের ৬ বছরের সন্তানকে পড়াচ্ছিলেন। অভিযোগ, ওই সময় তাঁকে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশী আনন্দ বাগদির ছেলে গেরা বাগদি। এর কিছুক্ষণ পরেই গ্রামের মানুষ দেখতে পান পুকুর পাড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে রয়েছেন উৎপল। তাঁর মাথায় আটকে রয়েছে আস্ত একটি কুড়ুল। মুখেও রয়েছে আঘাতের দাগ। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গলসি থানার পুলিশ। রক্তাক্ত অবস্থায় উৎপলকে স্থানীয় পুরসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
ঘটনার তদন্তে নেমে মনোজ ঘোষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিহতের মাসতুতো দাদা শম্ভুনাথ পান্ডে জানান, উৎপল ঘোষের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা রয়েছে মনোজ ঘোষের। মনোজ চাষের কাজ করে। দুজনেই প্রতিবেশী। কিছুদিন আগে উৎপলের স্ত্রীকে মনোজ কটূক্তি করায় তার সঙ্গে বচসা বাঁধে উৎপলের। থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় বিষয়টি। এরপর পুলিশের মধ্যস্থতায় মিটমাট হয় বিষয়টি। কিন্তু দুজনের মধ্যে মনোমালিন্যের থেকেই যায়। প্রাথমিক অনুমান, সেই রাগ থেকেই উৎপলের উপর আক্রমণ চালিয়েছে মনোজ ঘোষ। একইসঙ্গে রবিবার রাতে যে যুবক উৎপলকে বাড়ি থেকে ডাকতে গিয়েছিল সেও এই খুনের ঘটনায় যুক্ত কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে সোমবার ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছাতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত মনোজ ঘোষের বাড়ির একটি মোটর বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়। মনোজের এক আত্মীয়র একটি মারুতি গাড়ি এবং বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মনোজের এক কাকা হারাধন ঘোষের বাড়ির দুটি ট্রাক্টরে ও খড়ের পালুইতেও আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল পুলিশ বাহিনী ও দমকল। প্রায় ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে গোটা ঘটনার নেপথ্যে ব্যবসায়িক কারণ বাকি পুরনো শত্রুতা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
আরও পড়ুন - কেদারনাথ খুলছে ৬ মে, কোথায়-কীভাবে বুকিং?