scorecardresearch
 

জাপান থেকে ফিরিয়ে আনা হোক নেতাজির ভস্ম, দাবি নেতাজির নাতির

প্রখ্যাত সাংবাদিক তথা নেতাজি গবেষক আশিস রায় জানালেন জাপানের রেনকোজি টেম্পল থেকে কেন কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজির ছাইভস্ম দেশে ফিরিয়ে আনতে চায়। আপনাদের জন্য রইল সেই সাক্ষাৎকারের সারাংশ।

Advertisement
আজ়াদ হিন্দ ফৌজ বাহিনীর সামনে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আজ়াদ হিন্দ ফৌজ বাহিনীর সামনে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু
হাইলাইটস
  • জাপানের রেনকোজি মন্দিরে রাখা আছে নেতাজির ছাইভস্ম
  • জাপান থেকে ফিরিয়ে আনা হোক নেতাজির ভস্ম, দাবি নেতাজির নাতির
  • রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই ভারতে আনা সম্ভব হয়নি নেতাজির দেহাবশেষ, দাবি আশিস রায়ের

প্রশ্ন : আমরা সবাই মিলে নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন করলাম। কিন্তু, আজ ৭৫ বছর পরেও তাঁর মৃত্যু একটা রহস্য হয়েই রয়ে গেছে। তাইওয়ানে বিমান দূর্ঘটনায় আদৌ কি মৃত্যু হয়েছিল নেতাজির? যদি তাই হয়, তাহলে সেটা নিয়ে এত বিতর্ক কেন?

উত্তর : খুব সম্ভবত ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট একটি বিমান দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তাইপেই-এ ওই দূর্ঘটনার পর তাঁকে জাপানের সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে ছ'ঘণ্টা জীবনযুদ্ধে লড়াই করার পর তিনি প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে যে ঠিক এমনই ঘটনা ঘটেছিল। মর্মান্তিক হলেও এটাই সত্যি। ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর ভস্ম টোকিওয় নিয়ে যাওয়া হয়। আজও সেটা রেনকোজি মন্দিরে সংরক্ষিত রয়েছে। আজ ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলেও ভারত এখনও তাঁর ছাইভস্ম ফিরিয়ে আনার উপযুক্ত বলে মনে করেনি।

আরও পড়ুন :

নেতাজি @ ১২৫ : পন্ডিত নেহরুর মৃতদেহের সামনে উনি কে? সুভাষ, গুমনামী বাবা নাকি অন্য কেউ!

প্রশ্ন :  কেন? ওনার ছাইভস্ম দেশে ফিরিয়ে আনতে সমস্যাটা কোথায়? তবে এটাও অনস্বীকার্য যে রেনকোজি মন্দিরে ওই ছাইভস্মটি সংরক্ষণ করার জন্য ভারতের বিদেশ মন্ত্রক অর্থ সরবরাহ করেন।

উত্তর : ১৯৫০ সালের শুরুর দিকে জাপানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক তখনও মজবুত হয়নি। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু দেশের কার্যনির্বাহী সাধারণ কৌঁসুলিকে টোকিওর ওই মন্দিরে পাঠিয়েছিলেন। বেশ কয়েকটা তদন্ত করার পরে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে নেতাজির সত্যিই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, তিনি সেটাকে জনসমক্ষে আনতে চাননি। সেইসঙ্গে এও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অবশিষ্ট অংশটুকু ওই মন্দিরেই রেখে দেওয়া হবে এবং ভারত সরকার এই ব্যাপারে আর্থিকভাবে পূর্ণ সহযোগিতা করবে। আর তারপর থেকেই অর্থাৎ পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক ওই মন্দিরে আর্থিক অনুদান পাঠায় এবং যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে ওই ভস্মটি সংরক্ষণ করা হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন : 

Bring Netaji’s ashes back from Japan, says Bose’s grandnephew

প্রশ্ন : ঠিক কোন কারণে সরকার ওই ভস্মটি দেশে ফেরাতে পারছে না? এরমধ্যে কি কোনও রাজনীতি জড়িয়ে রয়েছে?

উত্তর : একটা ব্যাপার আমাদের প্রত্যেকের কাছেই বেশ স্পষ্ট। আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান এবং ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট বৈপরীত্য রয়েছে। সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিবারের একাংশই চায় না যে ওই ছাইভস্ম দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। অন্যদিকে, বেশকিছু রাজনৈতিক দলও এই ভস্ম দেশে আনার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছে। প্রধানত এই কারণের জন্যই নেতাজির ছাইভস্ম দেশে ফিরিয়ে আনা এখনও সম্ভব হয়নি।  প্রধানমন্ত্রী নেহরু এবং নরসিমা রাও দুজনেই নেতাজির ছাইভস্ম ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে বিরোধী দলগুলোর অনড় মনোভাবের কারণেই শেষপর্যন্ত সেটা করা সম্ভব হয়নি। আজ আমরা এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছি যেখানে সুভাষ চন্দ্র বসুর পার্থিব দেহের অবশিষ্ট অংশের উপরে শুধুমাত্র তাঁরা মেয়ে প্রফেসর অনিতা পাফের আইনত এবং নৈতিক অধিকার রয়েছে। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একবার আবেদন করলেই ওটা ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জাপান সরকারকে একটা মাত্র ফোন করলেই ব্যাপারটা মিটমাট হয়ে যায়। কিন্তু, সেটাই সম্ভব হচ্ছে না। আর সেকারণেই আজও রেনকোজি মন্দিরে পড়ে রয়েছে নেতাজির ছাইভস্ম। তবে সেটা যথেষ্ট ভালোভাবে এবং সম্মানের সঙ্গে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন :

নেতাজি @ ১২৫ : তাইহোকু বিমান দূর্ঘটনায় তবে কি মারা যাননি সুভাষ! এ কী বলছেন ফরাসি গবেষক...

প্রশ্ন : তাহলে DNA পরীক্ষা নিয়ে কী বলবেন? এই পরীক্ষার মাধ্যমে কি জানা যেত না যে ওই অবশিষ্ট অংশটা সুভাষচন্দ্র বসুরই?

উত্তর : সবথেকে বড় কথা, ওই ছাইভস্ম নিয়ে এত প্রমাণ আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে যে আর DNA পরীক্ষা করাটাই বাতুলতা। আসলে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার পর তার DNA পরীক্ষা করাটা যথেষ্ট কঠিন একটা ব্যাপার। যেটা সম্ভব, তা হল যে সুভাষ চন্দ্র বসুর একটা কী দুটো দাঁত ওই ভস্মের মধ্যে অক্ষত অবস্থায় থাকতে পারে। কারণ সেটা সুভাষ বোসের ADC কর্নেল হাবিবুর রহমানই সরিয়ে রেখেছিলেন। তিনিও ওই একই দূর্ঘটনার কবলে পড়লেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। ওই দাঁত থেকেই একমাত্র DNA পরীক্ষা করা সম্ভব।

আরও পড়ুন :

নেতাজি @ ১২৫ : হেমন্ত কুমারের পাল্লায় পড়েই রাজনৈতিক চেতনা জাগে 'দামাল ছেলে সুভাষের', সেই শুরু...

প্রশ্ন : সামনেই বাংলার বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে নেতাজিকে নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে দড়ি টানাটানি চলছে। আপনার কী মনে হয়, এই ধরনের ঘটনা বিতর্ক ছাড়া আর কিছু কী তৈরি করতে পারে?

উত্তর : আমি একান্তভাবেই মনে করি এটা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক যে সুভাষ চন্দ্র বসু বাংলায় আজ রাজনৈতিক ফুটবল হয়ে গেছেন। বিশেষ করে এই নির্বাচনের মরশুমে। কারণ তিনি একজন ঐতিহাসিক চরিত্র এবং তাঁকে সেভাবেই রাখা উচিত। আমার মতে, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু গোটা দেশের, কোনও একটি রাজনৈতিক দলের নন। যদিও এটাও জানিয়ে রাখি, তাঁকে নিয়ে কথা বলার যথেষ্ট অধিকার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রয়েছে। কারণ তিনি সারাজীবন INC-র সদস্য ছিলেন। কখনই তিনি এই দল ছেড়ে যাননি। যদিও তিনি INA দল গঠণ করে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন এবং ভারতকে স্বাধীন করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু, পাশাপাশি এটাও আপানাকে মনে রাখতে হবে যে তিনি দু'বার INC-র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফলে এটা খুব স্পষ্টই বোঝা যায় যে বেঁচে থাকার সময় তিনি ঠিক কতটা জনপ্রিয় ছিলেন যে আজও তাঁকে নিয়ে বর্তমান রাজনীতিতে আলোচনা হচ্ছে। তাঁর শরীরের অবশিষ্ট অংশ দেশে ফিরিয়ে আনতে এতটা বেগ পেতে হচ্ছে। এটা খুবই দূর্ভাগ্যজনক যে তাঁর উত্তরাধিকারীরাই নেতাজির ছাইভস্ম দেশে ফেরাতে দিচ্ছেন না। এটা নেতাজিকে যথাযথ সম্মান দেখানো হচ্ছে না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি নেতাজির শরীরের অবশিষ্ট অংশ দেশে নাই ফেরানো যায়, তাহলে তাঁর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

Advertisement

Advertisement