scorecardresearch
 

Survival Of Economic Recession: আর্থিক মন্দা শুরু হয়ে গিয়েছে, কীভাবে বাঁচবেন? রইল ৭ উপায়

আর্থিক মন্দার সামনে বিশ্ব, কীভাবে বাঁচাবেন নিজেকে। এই সাত উপায়ে আগামী ৬ মাস নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন, জেনে রাখুন, নইলে পড়তে পারেন বিপদে।

Advertisement
মন্দার মার, সঙ্কট ঘনিয়ে এসেছে মন্দার মার, সঙ্কট ঘনিয়ে এসেছে
হাইলাইটস
  • আর্থিক মন্দার সামনে বিশ্ব
  • প্রভাব ভারতের বাজারেও
  • কীভাবে বাঁচাবেন নিজেকে

দু-দশক পরে ফের চারদিকে আর্থিক মন্দা (Economic Recession) চর্চা শুরু হয়েছে। ইকোনোমিস্ট (Economist) অথবা বিজনেসম্যানরা (businessman) এমনকী বহু দেশের সরকারও (Government) মেনে নিয়েছে যে, আর্থিক মন্দা আগামী কয়েক মাসে তাদের দেশকে আক্রান্ত করবে। জনজীবনে এটি ব্যাপক প্রভাব তৈরি হতে শুরু করেছে। বেশ কিছু বার আর্থিক মন্দার প্রভাব থেকে বের হতে অনেক সময় লেগে গিয়েছে। বহুবার তো ৭০-৮০ বছর পর্যন্ত লেগে গিয়েছে মন্দা থেকে বেরোতে। এটাই নয়, শুধু জিডিপির (GDP) আকার কমাতে হবে। পাশাপাশি রোজকার খরচেও নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। কারণ এইগুলো বেড়ে যায় এবং তা আমদানির (Income) সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে না। কোম্পানি পয়সা বাঁচানোর জন্য ভারী সংখ্যায় লোকেদের চাকরি থেকে বের করে দেয়। আসুন আজকে জেনে নিই। মন্দার প্রভাব কতটা গভীর এবং যদি সত্যি হয় তাহলে এর প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কী উপায় করা উচিত?

জানুন মহামন্দা, মন্দা এবং আর্থিক গতিহীনতার মধ্যে পার্থক্য

সবচেয়ে আগে আমাদের বুঝতে হবে যে মন্দা আসলে কী? এটা সাধারণ মানুষের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলে? যদি কোনও দেশের ঘরোয়া উৎপাদন অর্থাৎ জিডিপি ৬ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ দুটি ত্রৈমাসিকে পতনমুখী থাকে, তাহলে এই সময়কে অর্থশাস্ত্র এবং আর্থিক মন্দা বলা হয়। যদি জিডিপি গ্রোথ রেট (GDP Growth Rate) লাগাতার কম হতে থাকে, ইকোনমিক্স স্লোডাউন (Economic Slowdown) অর্থাৎ আর্থিক গতিহীনতার সময় বলা হয়। এখন সময় হচ্ছে, ডিপ্রেশন (Depression) অর্থাৎ মহামন্দার বিষয়। সবচেয়ে গম্ভীর এবং ভয়াবহ পরিস্থিতি হল এটি। যদি দুটি ত্রৈমাসিক-এর সময়, কোনও দেশ জিডিপিতে ১০ শতাংশের বেশি পতন হলে তখন সেটিকে ডিপ্রেশন বলা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৩০ এর দশকে সবচেয়ে ভয়ানক মহামন্দা এসেছিল। যাকে দ্য গ্রেট ডিপ্রেশনThe Great Depression বলা হয়। এখনও পর্যন্ত হিস্ট্রিতে পৃথিবী একবারই মহামন্দার সামনে পড়তে হয়েছে।

এই সমস্ত সময়ের ভারত মন্দা মুখে পড়েছিল

Advertisement

ভারতের কথা বলতে গেলে স্বাধীনতার পরে আমাদের দেশকে এখনও পর্যন্ত দুবার মন্দার মার সহ্য করতে হয়েছে। ভারতে প্রথম বার ভয়ানক আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয় ১৯৯১ সালে। ওই সময় ভারতের স্থিতির সঠিক ছবি বোঝার জন্য এখন শ্রীলংকার উদাহরণ দিতে পারি। ১৯৯১ সালে সংকটের কারণে ভারতের কাছে সেই সময়ে মাত্র তিন সপ্তাহ চালানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা বেঁচেছিল। ভারতে ঋণে ডুবেছিল এবং তা শোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছিল। দেশের সোনা বিক্রি হচ্ছিল। যদিও তখন নরসিংহ রাও সরকার আর্থিক উদারিকরণের মত বড় পদক্ষেপ নিয়ে দেশকে সঙ্কট থেকে বাইরে বের করে। দ্বিতীয়বার ২০০৮ সালে ভারত একইভাবে মন্দার মুখে পড়েছিল। সেই সংকটে থেকে বাইরে বেশকিছু ফ্যাক্টর দায়ী ছিল। তখন ভারতে আর্থিক মন্দার আসেনি, কিন্তু আমেরিকার অন্য দেশের সংকট থেকে ভারত বাঁচতে পারেনি।

এই কারণে মহামন্দার ভয় দেখাচ্ছে

বর্তমান সংকটের কথা বলতে গেলে ভারতের ওপর মন্দার সরাসরি কোনও ভয় নেই। যদিও আমেরিকা, ইউরোপ এবং চিনের মতো অর্থব্যবস্থার মহাকাশে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং জানিয়েছেন যে আগামী দুই বছর পর্যন্ত গোটা পৃথিবী মন্দার মুখে পড়বে। এর আগে পৃথিবীতে সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী এলন মাস্ক ইন্টারভিউতে বলেছেন যে এই বছর শেষ পর্যন্ত এবং আগামী বছরের শুরুর পর্যন্ত আমেরিকাতে মন্দার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এখনও করোনা মহামারীর নতুন ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই চলছে এবং এ কারণে সেটাকে প্রতিহত করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গোটা দুনিয়ার ফ্যাক্টরি বলা চিনের কোভিড পলিসিতে হাজার হাজার কলকারখানার শাটডাউন করতে বাধ্য করেছে। এটি এমন সময় হয়েছে যখন গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন এর উপরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খারাপ প্রভাব পড়ছে। এনালিস্টরা এই পরিস্থিতিকে গ্রেট ডিপ্রেশনের সময়ের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। যা বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে পৃথিবীকে প্রভাবিত করেছিল।

আর্থিক মন্দার পদক্ষেপ হলের কী প্রভাব পরে

যখন আর্থিক মন্দার সময় আসে, তখন বেশ কিছু সারভাইভালের প্রয়াস শুরু হয়ে যায়। ইনভেস্টরসরা বাজার থেকে পয়সা বের করতে শুরু করে। কোম্পানিগুলির সামনে কাঁচামালের দাম বেড়ে যায় এবং যে কোনও জিনিসের বিক্রয় মূল্য কমে যায়। খরচ করার পয়সা থাকে না। স্বাভাবিক ব্যাপার-এর ডিমান্ড ও পড়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর এবং বড় সংখ্যায় ছোট কোম্পানিগুলি মন্দার সামনে অনেক ক্ষেত্রেই ঝাঁপ গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

এখন কীভাবে বাঁচবেন মন্দার মার থেকে?

১. ছয় মাসের খরচের সমান এমার্জেন্সি ফান্ড

সেন্টার ফর ইকনোমিক পলিসি এন্ড পাবলিক ফাইন্যান্স সিইপিএফ জানিয়েছেন যে মন্দা থেকে বাঁচতে হলে সবচেয়ে আগে আমাদের অনাবশ্যক খরচ কমিয়ে ফেলতে হবে। খরচ করতে হলে এমার্জেন্সি ফান্ড তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়টির হিসাব বের করে প্রতিমাসের জন্য কমসে কম খরচের জন্য ইমার্জেন্সি ফান্ড বের করে রাখুন। ধরুন আপনার আপনার খাওয়া-দাওয়ার জিনিস, ইএমআই, মাসিক নিয়মিত খরচগুলি এগুলো মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে আপনি কম সেকম ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ইমারজেন্সি ফান্ড তৈরি করে রাখুন।

২.অযথা খরচ আটকে দিতে পারেন

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইমারজেন্সি ফান্ড কীভাবে বানাবেন। এই প্রশ্ন যতটা স্বাভাবিক জবাব ততটাই সহজ। অযথা খরচ বন্ধ করে দিন। রেস্তোরাঁ, আউটিং, ঘুরতে যাওয়া, নতুন জামা-কাপড় কেনা এ সমস্ত আপাতত বন্ধ করে দিন। এর সঙ্গে আরও বেশ কিছু জিনিস আপনি বন্ধ করতে পারেন। গাড়ি কম চালিয়ে পেট্রোল-ডিজেলের খরচ বাঁচানো, রোজ মাছ, মাংস, ডিম খাওয়ার খরচ বাঁচিয়ে আপনি ফান্ড তৈরি করতে পারেন।

৩. এখন লোন নেবেন না

বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা লোন নিই। কিন্তু এই মুহূর্তে আগামী কয়েক মাস এ সমস্ত নন ক্রেডিট কার্ডের খরচ কমিয়ে ফেলুন। কারণ এগুলি আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। আচমকা কিছু টাকা আয় করলেও, সেটি জমিয়ে রাখুন। যা আপনার এমার্জেন্সি ফান্ড তৈরি করতে পারে।

Advertisement

৪. হেলথ ইন্সুরেন্স নিতে দেরি করবেন না

রোগজীবাণু কখনও সমস্যা দেখে আসেনা। কেউ জানে না যে কখন এটি আসবে? তাই হেলথ ইন্সুরেন্স নিয়ে নিন। কারণ এখানে আপনার বাজেট ফেল হয়ে যেতে পারে। আপনি যত টাকা জমিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যেতে পারে। তাই এই মুহূর্তে ইন্সুরেন্স নিয়ে নিন আগামী কয়েক মাস আপনি অন্তত সুরক্ষিত থাকবেন। পরবর্তীতে চালাতে না চাইলেও বন্ধ করতে পারেন। কিন্তু আপাতত ইনসুরেন্স বলয় যেন আপনাকে ঘিরে থাকে। তবে হেলথ ইন্সুরেন্স সারা জীবনের জন্য অত্যন্ত ভালো পদক্ষেপ।

৫. মন দিয়ে অফিসের কাজ করুন

যেমন আপনার আগে বলে দিয়েছি যে, মন্দার সময় কোম্পানির বিভিন্ন নিজেদের বাঁচানোর জন্য ছাঁটাই পর্ব শুরু করে। তাই এখানে প্রথমেই ছাঁটাই করতে গেলে কোম্পানিগুলি সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্সের কর্মী ছাঁটাই করে। তাই আপনি এতই খারাপ পারফরম্যান্সের মধ্যে না থাকেন, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে মন দিয়ে কাজ করুন এবং নিজেকে ভালো কর্মী বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করতে থাকুন।

৬. শেয়ার মার্কেট এবং ক্রিপ্টো থেকে দূরে থাকুন

এই মুহূর্তে শেয়ার মার্কেট এবং কেন্দ্র থেকে দূরে থাকাই ভাল। ইনভেস্টমেন্ট থাকলে আলাদা কথা। নতুন করে ইনভেস্টমেন্টের ঝুঁকি নেবেন না এবং যারা নতুন করে ইনভেস্টমেন্ট করতে চলেছেন, তাঁরা ওই ধরনের ফাটকাবাজি থেকে এই মুহূর্তে বিরত থাকুন। কারণ লাভের জায়গায় ক্ষতি হয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হবে।

৭. সোনায় লগ্নি করে রাখুন

মন্দার সময় সোনার ঔজ্জ্বল্য বেড়ে যায়। সোনাতে লগ্নি করে রাখলে অসুবিধা নেই। এতে ইনভেস্টমেন্ট আপনাকে এই সময় আপনাকে অত্যন্ত ভালো রিটার্ন দেবে। কিন্তু ভাল ইনভেস্টমেন্ট আর্থিক সংকটের সময়ে গোল্ড ভ্যালু বেড়ে যায়। আপনি বিপদে পড়লে পড়াশোনা বিক্রি করে ক্যাশ ঘরে আনতে পারবেন, এখন ফিজিক্যাল গোল্ডের বদলে ভার্চুয়াল সোনার মত বিকল্প মজুত রয়েছে।

 

Advertisement