১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে লোকসভা ভোট। ওই দিনই দেশজুড়ে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে হয়, সেজন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কমিশন। এ ব্যাপারে ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদেরও তলব করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি মেরঠে একটি ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের ডিউটির জন্য তাঁর প্রাইভেট গাড়ি দিতে চাননি এক ব্যক্তি। তখন সিটি ম্যাজিস্ট্রেট এটি আইনের লঙ্ঘন বিবেচনা করেছেন এবং একটি এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেন। তাহলে কি আমাদের এবং আপনার প্রাইভেট কারও কিছু সময়ের জন্য নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারে কমিশন?
সরকারি নিয়ম বলছে, ভোটের ডিউটির জন্য দরকার পড়লে, কারও ব্যক্তিগত গাড়িও চালক সহ ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্প্রতি গাজিয়াবাদেও একই ধরনের নোটিশ এসেছে। জেলা নির্বাচন অফিসারের পক্ষ থেকে, চিহ্নিত গাড়ির মালিকদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য রিজার্ভ পুলিশ লাইনে নির্বাচন অফিসার ইনচার্জ (পরিবহণ) এর কাছে তাদের গাড়ি হস্তান্তর করতে বলা হয়েছিল। মালিককে গাড়ির শেডের জন্য টারপলিন ইত্যাদির ব্যবস্থাও করতে হবে (যদি প্রয়োজন হয়)।
বিনিময়ে গাড়ির মালিক কী পায়?
যে কদিনের জন্য গাড়ি নেওয়া হচ্ছে, সেই অনুযায়ী গাড়ির মালিককে ভাড়াও দেবে জেলা প্রশাসন। এই ভাড়া যা খুশি হবে না।এটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা হবে, যা নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করবে। যদি কোনও গাড়ির মালিক তাঁর গাড়ি হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন তবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পার। যেমন ঘটেছে মেরঠে। সেখানে গাড়ির মালিকরা কিছুক্ষণ পর না জানিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান, যাঁর কারণে অপেক্ষা করতে হয় ফ্লাইং স্কোয়াডের কর্মকর্তাদের। এই স্কোয়াড নির্বাচনের সময় ভোটারদের ঘুষ দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা নজর রাখে।
কেন যানবাহন প্রয়োজন?
নির্বাচনের সময় অনেক রকমের কাজকর্ম হয়। এর মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তার জন্য পর্যবেক্ষণ। নিরাপত্তা বাহিনী, ফ্লাইং স্কোয়াড এবং নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যান্য কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য ভারী ও হালকা সব ধরনের যানবাহন নেওয়া যাবে। ব্যালট বাক্স এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্যও যানবাহনের প্রয়োজন হয়।
কীভাবে তথ্য দেওয়া হয়?
যানবাহন মালিকদের এ বিষয়ে আগে থেকেই ডাকযোগে অবহিত করা হয়। গাড়ি কোথায় জমা দিতে হবে, কত দিন লাগবে, এসব বিষয় বিস্তারিত। পরে, একটি নোটিশও জারি করা হয় যাতে যানবাহন মালিকরা নির্ধারিত তারিখের মধ্যে তাদের গাড়ি জমা দেন।
কোন সরকারি নিয়মে এমনটা হয়?
এটি জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫১ এর ১৬০ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে গাড়ি চাওয়া যাবে। এই দাবি শুধু সরকারই করতে পারে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দলগুলি নয়। যানবাহন ছাড়াও প্রশাসন ব্যালট বাক্স পরিবহন বা নির্বাচনের সময় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য জায়গাও দাবি করতে পারে। তবে এটি শুধুমাত্র লিখিত নির্দেশেই ঘটে। মৌখিক কথা বলে কারও কাছ থেকে কিছু নেওয়া যাবে না।
কখন যানবাহন নেওয়া যাবে না?
এটি ধারা ১৬০ এর উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে প্রশাসন গাড়ি নিতে পারবে না। গাড়িটি আগে থেকেই বৈধভাবে কোনও প্রার্থী বা দলের ব্যবহার করা হলে প্রশাসন সেই গাড়ি নিতে পারবে না।
আপনি অস্বীকার করতে পারেন?
প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করে প্রথমে সরকারি বা বাণিজ্যিক যানবাহন ব্যবহার করে ভোটপ্রক্রিয়া কাজটি সম্পন্ন করতে। এগুলো কম হলে ব্যক্তিগত যানবাহনের বিষয়টি প্রশ্নে আসে। আইন বলছে, আপনাকে সরকারি আদেশে নির্বাচনের জন্য একটি গাড়ি সরবরাহ করতে হবে, তবে যদি আপনার কাছে বৈধ কারণ থাকে তবে আপনি তা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারও কাছে একটি মাত্র গাড়ি থাকে এবং তা দিয়ে গৃহস্থালীর কাজ করা হয়, তবে সে তা অস্বীকার করতে পারে। অথবা বাড়িতে গুরুতর রোগী থাকলে এবং একটি মাত্র গাড়ি থাকলেও এটি করা যেতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রামাণ্য নথি দিতে হবে।
গাড়ি দিতে মৌখিক অস্বীকার যথেষ্ট নয়। গাড়ির মালিককে জেলা নির্বাচন অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং গাড়ি ছাড়ার কারণে তার রুটিন লাইফকে কীভাবে প্রভাবিত করবে তার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। কারও বাড়িতে গাড়ি থাকলে তা যেন নির্বাচনী কাজে ব্যবহার না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসন নিজেই চেষ্টা করে।
যানবাহনের সঙ্গে কাগজ, ত্রিপলের ব্যবস্থা করতে হয় এবং মাঝে মাঝে চালকেরও ব্যবস্থা করতে হয়। বিনিময়ে তাদের নির্ধারিত ভাড়া দেওয়া হয়। গাড়ি ফেরত দেওয়ার প্রায় এক মাসের মধ্যে এই পরিমাণ অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায়।