সে বছর ১৭-র আগের কথা। ডিসেম্বরের একটা দিন তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল তামাম বিশ্বকে। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর। সুনামি।
তারপর রয়ে গেল ধ্বংসাবশেষ। কত যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার ঠিক নেই। অজস্র মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মাইলের পর মাইল ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সে সময় সরকার, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজে নেমে পড়েছিল। তাঁদের মধ্যে একজন যোগ শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষ। প্রথমে তামিলনাড়ু, পরে আন্দামানে। এবার নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা থেকে ভোটে লড়েছেন।
তাঁর কাজের ধরনটা ছিল একটু আলাদা। মা-বাবা, বাড়িঘর হারিয়ে প্রবল মুষড়ে পড়েছিল সেখানকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। মানসিক ভাবে প্রবল ভেঙে পড়েছিল। যোগ ব্যায়ামের সাহায্যে তাদের চাঙা করার কাজে লেগেছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি যোগের লোক। যোগ নিয়ে লেখাপড়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ বছর অধ্যাপনা। তার আগে বেঙ্গালুরুতে স্বামী বিবিকানন্দ যোগ আকাদেমির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।
তা হলে ভোটের ময়দানে কী করে? তাঁর মতে, বাংলায় পরিবর্তনের ঢেউ উঠেছে। সে কাজে যদি কোনও সহযোগিতা করতে পারি। সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পুরোপুরি নেমে গিয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রথম ভোটে দাঁড়াচ্ছি। তবে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে কল্যাণ চৌবের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলাম।
সুনামির সময় উদ্ধার কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন। তিনি জানান, রেড ক্রসের সঙ্গে উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েন। প্রথমে তামিলনাড়ুতে, পরে আন্দামানে। সেখানকার আদিবাসীদের সঙ্গে কাজ করি।
তিনি বলেন, স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে মানসিক অবসাদ দূর করতে যোগাসন এবং সেই সম্পর্কিত অন্যান্য প্রশিক্ষণ খুব কাজে দিয়েছিল। তখন পড়ুয়াদের বিভিন্ন স্কুল, স্টেডিয়ামে রাখা হত। ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা ছিল। তারা হামেশাই কান্নাকাটি করত। তবে যোগব্যায়াম শুরু করার ১৫ দিনের পর অনেকটাই ভাল হয়ে ওঠে। পরে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেরও কথা বলেছিলেন সেখানকার প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।
বিজেপি প্রার্থী আরও বলেন, এখন আন্দামানের সব স্কুলে যোগ ব্যায়াম শেখানো হয়। সে সময় দিলীপ দা(বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ)-র সঙ্গে পরিচয়। তিনি অনেক সাহায্য করেছিলেন। মোটরসাইকেল, স্কুটি করে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে নিয়ে যেতেন। আন্দামানের অভিজ্ঞতা ভোলার নয়।
রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কারণ আরও খোলসা করেন। বলেন, রাজনীতিতে এসে আমাদের মূল লক্ষ্য যোগ, ওষধি গুণসম্পন্ন গাছ নিয়ে কাজ করা। রাজনীতি একটা বড় মঞ্চ কোনও কিছু চালানোর জন্য। মানুষের রোগ যাতে না হয়, সেদিকে জোর দেওয়া হবে। এখন আমরা করি ঠিক উল্টোটা। রোগ হলে সারাই। যে চিন্তাধারা নিয়ে চলি তাতে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দরকার নেই। খালি কাজ করার দরকার।
তাঁর বাড়ি নদিয়ার পলাশির কাছে। কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে লেখাপড়া। এরপর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে যোগাযোগ। জানাচ্ছেন, শুধু চাকরির করতে দক্ষিণ কোরিয়া যাননি।
সেখানে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রচার, দুর্গাপুজো, গণেশপুজো চালু করেছেন। গ্রামীণ অর্থনীতি পাল্টাতে কোরিয়ার প্রযুক্তি কী করে কাজে লাগানো যায়, সেদিকে নজর থাকবে। কালীগঞ্জ বিধানসভার জন্য তৈরি হয়েছে ইস্তাহারও।