গত লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের বড় অংশের আশীর্বাদ পেয়েছিল বিজেপি (BJP)। সেই ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে বিধানসভা ভোটেও চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না গেরুয়া শিবির। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই আদিবাসী অধ্যুষিত ওই সমস্ত অঞ্চলে বারেবারেই দেখা গিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের। এমনকি আদিবাসী পরিবারে মধ্যাহ্নভোজনও সেরেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। অন্যদিকে আবার হারানো জমি পুনরুদ্ধারের লড়াইতে নেমেছে তৃণমূলও (TMC)। কিন্তু যাঁদের ভোটকে টার্গেট করে দু পক্ষের এত রণকৌশল, সেই আদিবাসীরা কী বলছেন?
শিক্ষার অধিকার এবং ধর্মের স্বীকৃতির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আদিবাসীদের সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল (Bharat Jakat Majhi Pargana Mahal)। রাজ্য সরকার তাঁদের দাবি দাওয়া পূরণ করেনি, মূলত সেই অভিযোগেই লোকসভায় বিজেপিকে সমর্থন করেছিল আদিবাসীদের সমাজের একটি বড় অংশ। এমনকি দাবি পূরণ না হলে বিধানসভা ভোটেও লোকসভার ফলাফলের পুনরাবৃত্তির হুঁশিয়ারী দিয়েছেন একাংশের আদিবাসীরা। তবে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সকলে কিন্তু সেই কথা বলছেন না। সংগঠনের রাজ্যস্তরের নেতা তথা পনত পারগানা রবীন টুডু জানাচ্ছেন, "শিক্ষার যে দাবি ছিল তা পূরণ হয়েছে। স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশনা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এমনকি শিক্ষক শিক্ষিকার যে চাহিদা ছিল তাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মিটে গিয়েছে।" আর এর জন্য রাজ সরকারকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা।
তবে শিক্ষার দাবি পূরণ হলেও ধর্মের স্বীকৃতি এখনও মেলেনি বলেই জানাচ্ছেন রবীন টুডু। তাঁর অভিযোগ, "সারি ধরমের স্বীকৃতির জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র এখনও ভ্রূক্ষেপ করেনি। উলটে আদিবাসীদের হিন্দু বলে প্রচার করে বিজেপি সর্বনাশ করছে। বিজেপি আদিবাসীদের জন্য ক্ষতিকারক।" রবীনবাবুর আরও অভিযোগ, "গত লোকসভা ভোটে জেতার পর আর বিজেপির সাংসদদের এলাকায় দেখা যায়নি। বিশেষত করোনাকালে বিজেপির কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। কিন্তু তৃণমূল বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছে। মানুষের বাড়িতে রেশন পৌঁছে দিয়েছে।" এক্ষেত্রে আদিবাসীদের স্বার্থ যদি কেউ রক্ষা করে থাকে তবে তা একমাত্র তৃণমূলই করেছে বলে দাবি তাঁর।
তাহলে এখনও কেন সংগঠনের কেউ কেউ লোকসভা ভোটের ফলাফলের পুনরাবৃত্তির কথা বলছেন? তবে কি সংগঠনের অন্দরেই কোথাও মতপার্থক্য রয়েছে? উত্তরে কোনওরকম রাখঢাক না করেই রবীনবাবু জানান, "এটা নতুন কিছু নয়। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়েই বিজেপি কিছু আদিবাসীকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যায়। তারপর থেকেই সংগঠন দুভাগে বিভক্ত।" তবে মানুষের এখন মোহভঙ্গ হয়েছে, তাই আদিবাসী সমাজ তৃণমূলের পক্ষেই ভোট দেবে এবং আগামী বিধানসভা ভোটে তা প্রমাণ হয়ে যাবে বলেই দাবি রবীন টুডুর। সংগঠনের আরও এক নেতা রবীন সরেনও জানান, আসন্ন নির্বাচনে উন্নয়নের পাশেই থাকবেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে এখন দেখার তৃণমূল না বিজেপি, 'দুভাগে বিভক্ত' ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সমর্থন কারা বেশি পায়।