গত সোমবার দেশের সাধারণ বাজেট পেশ হয়েছে। সেখানে সড়ক-রেল, চা-বাগান সবক্ষেত্রেই বাংলার জন্য ছিল উপহারের ডালি। সামনেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন, সেই কারণেই বাংলার প্রতি কেন্দ্রের এত নজর বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তবে রেল বাজাটে এবার বাংলার জন্য যে একাধিক উপহারের ঝুলি ছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। খড়্গপুর থেকে বিজয়ওয়াড়া পর্যন্ত ইস্ট-কোস্ট ফ্রেট করিডর নির্মাণ করা হবে। ইস্ট-ওয়েস্ট ফ্রেট করিডরে যুক্ত থাকবে খড়্গপুর এবং ডানকুনি। একইসঙ্গে ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের গোমো-ডানকুনি শাখা নিয়ে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। রেলবাজেটে বঙ্গবাসীর এই প্রাপ্তি নিয়ে এবার ট্যুইট করলেন দেশের রেলমন্ত্রী। পীযূষ গোয়েল দাবি করলেন রেলের ইতিহাসে এর আগে বাংলার জন্য কখনই এত টাকা বরাদ্দ করা হয়নি।
Allocation for West Bengal is highest ever in history of Indian Railways.
— Piyush Goyal (@PiyushGoyal) February 4, 2021
₹6,636 crore is going to be spent in 2021-22 in the state. It is 26% higher than last year.
I would urge West Bengal Govt to make land available so that Railway projects can be implemented expeditiously. pic.twitter.com/0Uz7WMePyk
বৃহস্পতিবার রেলমন্ত্রীর তরফে একটি ট্যুইট করা হয়। যেখানে ভিডিও বার্তায় মন্ত্রী জানান , এবারের রেল বাজেটে ৬৬৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বাংলাকে দেওয়ার জন্য। ট্যুইটে লেখেন, ‘ভারতীয় রেলের ইতিহাসে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ঐতিহাসিক বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। ২০২১-২২ সালের মধ্যে ৬ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা খরচ করা হবে। এটা গত বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে বলব ওই সব প্রকল্পের জন্য জমি তৈরি রাখতে যাতে তা দ্রুত শেষ করা যায়’।
রাজ্যে রেল প্রকল্পে দেরির দায় বর্তমান তৃণমূল ও অতীতের বাম সরকারের ওপরেই চাপিয়েছেন গোয়েল। তিনি বলেন যে রাজ্য সরকারদের দোষেই প্রকল্প আটকে থেকেছে। রেল মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী এখন ৫৩টি প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে আছে নতুন লাইন বসানোর কাজ, লাইন ডবল করার কাজ। সব মিলিয়ে ৪৪৬৩ কিলোমিটার লাইনের জন্য ৪৮২৭৫ কোটি টাকার প্রজেক্ট চলছে। জমি জটের কারণে চলতি বাজেটে ৩৪টি প্রকল্পকে খুব বেশি অর্থ দেওয়া হয়নি বলে জানান গোয়েল। রেলমন্ত্রীর কথায়, জমি পেলে বাংলায় প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে টাকার অভাব হবে না। রীতিমত পরিসংখ্যান দিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছেন পীযূষ গোয়েল। তিনি বলেন, ২০০৯-২০১৪ সাল অবধি যা বাংলা বরাদ্দ পেয়েছে তার থেকে এটি আড়াই গুণ বেশি। গত বারের চেয়ে ২৬ শতাংশ টাকা পেয়েছে বাংলা। তিনি বলেন, প্রথমে বাম, তারপর তৃণমূল জমি দিতে পারেনি রেলকে। ৪৫ বছরের পুরনো প্রজেক্ট এখনও অসমাপ্ত হয়ে আছে বলে জানান গোয়েল। তিনি বলেন যে, "মমতাদির কাছে আর্জি জানাচ্ছি প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করতে।"
উল্লেখ্য, এরাজ্য অতীতে অকাধিক রেলমন্ত্রী পেয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও দীর্ঘদিন সামলেছেন কেন্দ্রের রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব। রাজ্য বিধানসভা ভোটের আগে পরিসংখ্যান দিয়ে যেন তাকেই ঠুকতে চাইলেন রেলমন্ত্রী। বাংলা থেকে হওয়া রেলমন্ত্রীদের কটাক্ষ করে গোয়েল বলেছেন, যে কেউ মন্ত্রী হলেই প্রকল্প ঘোষণা করে দিত। আদৌ সেটার জন্য জমি, টাকা আছে কিনা, সেই প্রকল্পটির বাণিজ্যিক ভাবে বাস্তবসম্মত কিনা, সেসব খতিয়ে দেখা হত না। তাঁর অভিযোগ, এই কারণেই কোনও প্রকল্প সময়ে শেষ হত না ও শুধু খরচা বেড়ে যেত। জনমোহিনী রাজনীতির কারণেই রেলের ক্ষতি হয়েছে, বলে জানান গোয়েল। প্রয়োজনীয় জমি না থাকলে এখন আর কোনও প্রকল্প শুরু করা হয় না বলে দাবি করেছেন রেলমন্ত্রী। বিধানসভা ভোটের কয়েকমাস আগে রেল নিয়ে এভাবে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।