scorecardresearch
 

উনিশের ভোটে ছিলেন বঙ্গ BJP-র 'গেমপ্ল্যানার', নব্বান্ন দখলের নীলনকশা কি মুকুলের হাতেই

তৃণমূলের একদা সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জন্য রাজ্য জুড়ে ছুটে বেরিয়েছিলেন। রাজনীতির কারবারিরা মনে করেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে বিরোধীদের ‘ম্যানেজ’ করার জন্য মুকুলের বিকল্প নেতা কেউ নেই। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী রাজনীতিতে এমন নেতার গুরুত্ব রয়েছে যে কোনও দলেই। ভোটের আগে যতই কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা বারুক এরাজ্যে বিজেপি মনে করে বাংলায় তৃণমূলকে হারাতে মুকুল রায়কে তাঁদের দরকার। তাই বঙ্গ নেতৃত্বে মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠদের প্রাধ্যান্য যেমন বাড়ছে, তেমনই রায়বাবুকে ২০২১-এর আগে বড় পদ দিয়ে বিজেপি বুঝিয়ে দিয়েছে আসন্ন নির্বাচনে মুকুল রায়কে তাঁরা কতটা গুরুত্ব দিতে চাইছে।

Advertisement
Mukul Roy Mukul Roy
হাইলাইটস
  • বেশি মিডিয়া কভারেজ পাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকরী
  • সেই তুলনায় অনেকটাই মৃয়মান
  • কিন্তু তাঁর হাতেই আছে নাকি নীল বাড়ির জয় হাসিলের ছক

প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশ্ন উঠছিল তিনি কি তৃণমূলের মুকুল রায়ের অভাব পূরণ করতে পারবেন? ২০১৭ সালে নভেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায়। বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট, লোকসভা ভোটের দায়িত্বেও ছিলেন। ২০১৯-এর ভোটের আগে অর্জুন সিং, নিশীথ প্রামাণিক, সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরা, খগেন মূর্মূদের ভাঙিয়ে বিজেপিতে এনেছিলেন মুকুল। তার ফল হিসাবে বাংলায় ১৮টি আসনে ফোটে পদ্ম। সেবার  অনুপম ছাড়া সকলেই জয় নিশ্চিত করেন। মুকুলের ২০১৯ -এর লোকসভা জেতার মূল কৌশলই ছিল  তৃণমূল ভাঙা, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি নাকি একই পরিকল্পনায় জয় হাসিল করতে চাইছেন। আর সেই লক্ষ্যে মাস্টারস্ট্রোক দেওয়া কিন্তু শুরু করে দিয়েছেন মুকুল।

পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিল আনুন মোদী, ২৪ ঘণ্টায় রাজনীতি ছাড়ার চ্যালেঞ্জ অভিষেকের

তবে রাজ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া ইস্তক দলের অন্দরে মুকুলকে  নিয়ে বিতর্ক কিন্তু কম হয়নি। রাজ্য নেতাদের  কাছে দীর্ঘ দিন তিনি ‘গ্রহণযোগ্য’ ছিলেন না। দু’একটি উপনির্বাচনে তাঁর অঙ্ক মেলেনি বলেও অভিযোগ হজম করতে হয়েছিল মুকুলকে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে গেরুয়া শিবিরের সকলেই কার্যত তাঁকে ‘চাণক্য’ বলে মেনে নিয়েছিলেন। একবাক্যে স্বীকার করেছিলেন, মুকুল রায়ের অঙ্ক কাজ করেছে। ২০১৯ সালে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিলেন মুকুল। তার ফলস্বরূপ  তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার তিন বছরের মাথায় দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান মুকুল রায়। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দলের সভাপতি জে পি নড্ডা কেন্দ্রীয় পদাধিকারিদের তালিকা ঘোষণা করেন। সেখানেই দেখা যায় নাম রয়েছে মুকুল রায়ের। দলের সাংগঠনিক নিরিখে এ রাজ্যে মুকুলের পদই রাজ্য নেতাদের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

তৃণমূলের একদা সেকেন্ড-ইন-কমান্ড  ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জন্য রাজ্য জুড়ে ছুটে বেরিয়েছিলেন। রাজনীতির কারবারিরা মনে করেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে বিরোধীদের ‘ম্যানেজ’ করার জন্য মুকুলের বিকল্প নেতা কেউ নেই। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী রাজনীতিতে এমন নেতার গুরুত্ব রয়েছে যে কোনও দলেই। তবে লোকসভা ভোটের পর পরিস্থিতি কিন্তু বদলেছিল। এমনও কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল, বিজেপির অন্দরে মুকুল রায়ের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের। মুকুল খানিকটা পার্শ্বচরিত্রই হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি তাঁর পুরনো দলে ফেরার জল্পনাও চলছিল। যদিও অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি দিলীপ বা মুকুল কেউই। কিন্তু দিল্লি মুকুল রায়কে বরাবরই প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। ভোটের আগে যতই কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা বারুক এরাজ্যে বিজেপি মনে করে বাংলায় তৃণমূলকে হারাতে মুকুল রায়কে তাঁদের দরকার। তাই বঙ্গ নেতৃত্বে মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠদের প্রাধ্যান্য যেমন বাড়ছে, তেমনই রায়বাবুকে ২০২১-এর আগে বড় পদ দিয়ে বিজেপি বুঝিয়ে দিয়েছে আসন্ন নির্বাচনে মুকুল রায়কে তাঁরা কতটা গুরুত্ব দিতে চাইছে।

Advertisement

গোবলয়ের ভোটরঙ্গ বাংলাতেও! একুশের নির্বাচনের চালিকাশক্তি কি জাতপাত?

মুকুল রায় প্রায় গোটা ২০২০ সালই বিজেপিতে নির্লিপ্ত ছিলেন। সেভাবে সক্রিয় হননি করোনার বাজারে।  কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি হওয়ার পর থেকেই ফের পাল্টা দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন মুকুল। ২০১৯-এর ছকেই তৃণমূলকে ভাঙা শুরু করেছেন ২০২১-এর নির্বাচনের আগে। ২০২১-এর ভোটের আগে বিজেপিতে সক্রিয় হয়েই তিনি বড় থাবা বসিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপিতে নিয়ে এসে। শুভেন্দুর অনুগামী হিসেবে অনেকেই যোগদান করেছেন বিজেপিতে। সাম্প্রতিক যোগদানের তালিকায় রয়েছেন এতদিন তৃণমূলে থেকে যাওয়া মুকুল অনুগামীরাও। শীলভদ্র দত্তের মতো নেতারাও তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েছেন মুকুলের জন্যেই তাতে কোনও সন্দেহ নেই। শুভেন্দুকে বিজেপিতে যোগদান করিয়েও বসে নেই মুকুল। তৃণমূলের কোমর ভেঙেছেন, এবার হাত-পাও গুঁড়িয়ে দিতে তিনি পরিকল্পনা কষছেন। দিল্লিতে বসেই তিনি বেসুরো হয়ে ওঠা শতাব্দী রায়কে দলে টানার চেষ্টা চালিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। তিনিই অমিত শাহের সঙ্গে শতাব্দী রায়ের বৈঠকের মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন। অর্থাৎ ভিতরে ভিতরে খেলা চালিয়েই যাচ্ছেন মুকুল রায়।

তৃণমূল ছাড়লেও এখনও পুরনো দলের অনেক নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গেই ব্যক্তিগত সম্পর্ক বর্তমান মুকুল রায়ের। তাঁর হাত ধরেই লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিজেপিতে এসেছেন সব্যসাচী দত্ত, শোভট চট্টোপাধ্যায়রাও। এই অবস্থায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর ফের একবার রাজ্য সফরে আসছেন অমিত শাহ। অমিতের বঙ্গ আগমনে একাধিক তৃণমূল নেতা-নেত্রীর বিজেপি যোগের গন্ধও পাচ্ছেন অনেকেই। কোনও সন্দেহ নেই  তৃণমূলকে নিজে হাতে গড়েছিলেন মুকুল। দলের সংগঠন ২০ বছর ধরে সামলেছেন তিনি। ফলে সেই যোগাযোগ কাজে লাগিয়েই তৃণমূলের হেভিওয়েটদের টার্গেট করতে সমর্থ হচ্ছেন তিনি। বলা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকেও তৃণমূলে থাকাকালীন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ ছিল মুকুল রায়ের। সেই যোগাযোগ মুকুল রায় বিজেপিতে গেলেও বন্ধ করেননি। তাই মুকুল রায় যে খেল দেখাচ্ছেন তাতে ২০২১-এর ভোটের আগে আর কী কী চমক তিনি দেন সেদিকেই তাকিয়ে বঙ্গবাসী। 

 

Advertisement