কথাছিল রাতটা নন্দীগ্রামে কাটাবেন। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের ইস্তেহার প্রকাশ রয়েছে কলকাতায়। তার আগেই ফিরে আসবেন শহরে। কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। বুধবার রাতেই গ্রিন করিডোর করে কলকাতায় নিতে আসতে হল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বুধবার হলদিয়ায় মনোনয়ন পেশের পর নন্দীগ্রামে ফিরে তিনি যখন মন্দিরে মন্দিরে ঘুরছেন তখনি তাঁর ওপর হামলা চালান হয়েছে বলে খোদ অভিযোগ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা যাচ্ছে , মনোনয়ন পেশের পর নন্দীগ্রামের রানিচকে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ফেরার সময় গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। সেসময় প্রচুর লোক তাঁকে ঘিরে ছিলেন। সেসময় আচমকা কয়েকজন ধাক্কা মারেন বলে অভিযোগ খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ধাক্কায় গাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েন তিনি। বাঁ পায়ে গুরুতর চোট লেগেছে তাঁর। মুখ থুবড়ে পড়ায় হাতে মাথাতেও চোট পেয়েছেন তিনি। যন্ত্রণা এতটাই বাড়ে যে সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করে কলকাতা ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মমতা। বেশ কিছুটা রাস্তা আসার পর যন্ত্রণায় এতটাই ছটফট করতে থাকেন নেত্রী, যে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে পাঁজাকোলা করে তুলে গাড়ির পিছনের সিটে নিয়ে আসেন। নেত্রীর পা সাংঘাতিক ফুলে গিয়েছে বলেই খবর। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নন্দীগ্রামে গিয়ে এভাবে আঘাত পাওয়ার ঘটানকে রাজনৈতিক ভণ্ডামি বলেই কটাক্ষ করছে বিরোধী শিবির।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ
আঘাত পাওয়ায় প্রচার বন্ধ রেখেই কলকাতায় ফিরে আসতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে ৪-৫ জন বাইরে থেকে ঢুকে পড়েছিল। ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আমাকে। ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা মারা হয়। এর পিছনে ষড়যন্ত্র ছিল।’’ পড়ে গিয়ে পা ফুলে গিয়েছে বলেও জানান মমতা। গাড়ির দরজা খুলে সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, ‘‘দেখো কিতনা ফুল গয়া।’’ ঘটনার সময় স্থানীয় পুলিশের কেউ ঘটনাস্থলে ছিল না বলেও অভিযোগ করেন মমতা।
বিজেপির প্রতিক্রিয়
রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জেডপ্লাস নিরাপত্তাও পান। সেই মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। গোটা ঘটনাকেই নাটক মনে করছে বিজেপি। নন্দীগ্রামে ভোটে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি শিবিরের দাবি এখানে ভোটে হেরে যাবেন মমতা। তাই সহানুভূতি আদায় করতেই মমতা আক্রান্ত হওয়ার গল্প ফেঁদেছেন বলে দাবি করছে গেরুয়া শিবির। গোটা ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হোক বলে দাবি তুলেছেন বাংলার বিজেপির প্রধান কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। মমতার দ্রুত সুস্থতা কামনা করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যও। মমতা হেরে যাবেন জেনেই রাজনীতি করছেন বলে কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। 'মমতার খেল এবার খতম', এমন কথাই শোনা গেছে পীযূষের গলায়। বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং পুরো বিষয়টিকে ভাওতাবাজি কথা বলে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, হামলা যদি হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর যোগ্য নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের সাসপেন্ড করা উচিত। হামলাকারীদের ফাঁসি দেওয়া হোক। মুখ্য়মন্ত্রী যেখানে যান, তার ২ কিমির মধ্যে সব আটকে দেওয়া হয়। এসব তিনি সহানুভূতি আদায় করার জন্য করছেন।
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া
মোদী নটাক করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যাও একই রকম নাটক করেন। আর তৃণমূলনেত্রীর আঘাত রাজনৈতিক ভণ্ডামি বলেই কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য। জেড প্লাস নিরাপত্তা পাওয়া মুখ্যমন্ত্রী যদি আক্রান্ত হন তাহলে রাজ্যের সাধারণ মানুষের কী অবস্থা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের বহরমপুরের সাংসদ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, পুলিশমন্ত্রী বলছেন পুলিশ ছিল না। পুলিশ না থাকা অবস্থায় হামলা হল। এটা অসম্ভব। এটা নির্বাচনী গিমিক। একটা সমবেদনা আদায় করার চেষ্টা। আর বাংলার পুলিশমন্ত্রী যদি পুলিশ না পান, তাহলে বাংলার সাধারণ মানুষের কী হবে? তাহলে মমতা স্বীকার করুন যে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি একেবারে ভেঙে পড়েছে। "
বামেদের প্রতিক্রিয়া
নন্দীগ্রাম আসনে বুধবার নিজেদের প্রার্থী হিসাবে বামেদের নাম ঘোষণা করেছে মীনক্ষা মুখোপাধ্যায়ের। নন্দীগ্রামে তৃণমূলনেত্রীর আক্রান্ত হওয়ার বিষটিতে এবাক বাম শিবিরও। ভোটে সহানুভূতি আদায় করতেই মমতা আক্রান্ত হওয়ার নাটক করছে বলে দাবি করছে বাম শিবিরও।