২৪ ঘণ্টার জন্য প্রচার করতে পারবেন না তৃণমূলনেত্রী। নিষেধাজ্ঞা জারি করল নির্বাচন কমিশন। আজ রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার রাত ৮ টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কমিশন। কমিশনকে তৃণমূলনেত্রী যে উত্তর দিয়েছেন তা সন্তোষজনক নয় বলেই জানা যাচ্ছে। সেই কারণে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৫ পাতার একটি নোটিস দিয়েছে কমিশন। সেখানেই তৃণমূলনেত্রীকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।
মুসলিম ভোটারদের নিয়ে তৃণমূলনেত্রীর মন্তব্যের জেরে প্রথমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিস পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। হুগলির তারকেশ্বরে নির্বাচনী সভায় মুসলিম ভোটারদের উদ্দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার বার্তা দেন মমতা। তৃণমূলনেত্রীর এই মন্তব্যের জেরেই প্রথমবার নোটিস পাঠায় কমিশন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মমতার থেকে জবাব তলব করেছিল কমিশন। ১০ বার শো-কজ করলেও তাঁর জবাব যে একই হবে এরপরেই কমিশনকে নির্বাচনী প্রচারমঞ্চে বার্তা দিয়েছিলেন মমতা।
এরপরেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়কে দ্বিতীয় নোটিস পাঠায় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের জন্য গত শুক্রবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দ্বিতীয়বার নোটিস পাঠায় কমিশন। কেন গত ২৮ মার্চ এবং ৭ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছিলেন তিনি তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ওই নোটিসে। ১০ এপ্রিল অর্থাৎ গত শনিবারের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নোটিসের যে উত্তর দিয়েছে তা কমিশনকে সন্তুষ্ট করতে পারনি বলেই জানা যাচ্ছে। কমিশনের একাধিক প্রশ্নের উত্তরও নাকি তৃণমূলনেত্রী স্পষ্ট করে দেননি। উল্টে তাঁর বক্তব্য রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে বলে মনে করছে কমিশন। সেই কারণেই এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বলে জানা যাচ্ছে।
কোচবিহারের জনসভা থেকেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে একহাত নেন তৃণমূল নেত্রী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘নির্দেশে’ই সিআরপিএফ-এর একাংশ বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সিআরপিএফকে ঘেরাও করার কথাও বলেন মমতা। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার এই মন্তব্য নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং কোচবিহারের জেলা শাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছিল কমিশন। তার জন্য মমতাকেও নোটিস পাঠানো হয়।
চতুর্থ দফা ভোটের দিন শীতলকুচিতে সিআইএসএফ-এর গুলি চালনায় ৪ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চক্রান্তেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন তৃণমূলনেত্রী। রবিবার শীতলকুচি যাওয়ার ঘোষণাও করেন মমতা। তারপরেই কমিশন ৭২ ঘণ্টার জন্য কোচবিহারের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিষয়টি নিয়ে কমিশনকে তোপ দাগেন মমতা। জানিয়ে দেন আগামী বুধবার তিনি শীচলকুচি যাবেন। এবারের ভোটে কার্যত কমিশনের সঙ্গে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছে তৃণমূলনেত্রীর। আদর্শ নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত অভিযোগের নোটিসের যে জবাব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন সে ব্যাপারে কমিশন জানিয়েছে, তৃণমূলনেত্রী আদর্শ নির্বাচন আচরণবিধি, সেইসঙ্গে ১৯৫১-র জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩ (৩) ও ৩ এ ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৬,১৮৯ ও ৫০৫ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। তিনি উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির পক্ষে ক্ষতিকারক এবং তা নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যহত করার সামিল। নিজের মন্তব্য় থেকে মমতাকে বিরত থাকার পরামর্শও দিয়েছে কমিশন।