উত্তরবঙ্গের যে ট্রেন্ড এবারের বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা গিয়েছে, তাতে গেরুয়া বাহিনীর রমরমা। রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যার একটা বড় অংশই এসেছে উত্তরবঙ্গ থেকে। দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে ভালো ভালো হয়েছে বিজেপির। কিন্তু উত্তরবঙ্গের চলতি ট্রেন্ড এর উল্টো পথে হেঁটে ইসলামপুর মহকুমায় গেরুয়া ঝড় রুখে দিয়েছে তৃণমূল বাহিনী। মহকুমার পাঁচটি বিধানসভা পাঁচটিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল।
পাঁচটি বিধানসভা
চোপড়া গোয়ালপোখর করণদিঘি ইসলামপুর এবং চাকুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে প্রত্যেকটিতে শুধু জয় নয় রীতিমতো বড় ব্যবধানে জয় এসেছে তৃণমূলের। উত্তরে মেরুকরণের হাওয়ায় অন্যরকম ভাবনা ভেবেছিল ইসলামপুর।
কোন অঙ্কে কেল্লা ফতে
মূলত রাজবংশী ভোট এবং মেরুকরণের ভোটব্যাঙ্ক সামনে রেখে বিজেপি জয়ের কৌশল নিয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইসলামপুর ও চাকুলিয়া বিধানসভায় সভা করে গেরুয়া হাওয়া তুলে দিয়েছিলেন। গোয়ালপোখরে সভা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও। কিন্তু বিজেপির তারকা প্রচারকরা এসেও ইসলামপুর মহাকুমার পাঁচটির মধ্যে একটি আসনও দাঁত ফোটাতে পারেনি। বরং এর আগের চেয়েও বড় ব্যবধানে তারা জয়ী হয়েছেন।
কে কত ভোটে জয়ী হলেন?
গোয়ালপোখর তৃণমূলের গোলাম রব্বানি ৭৪ হাজার ভোটে জিতেছেন। তিনি এই মহকুমার সবচেয়ে বড় ব্যবধানে বিজয়ী প্রার্থী। অন্যদিকে ৬৫ হাজার ভোটে চোপড়া বিধানসভা থেকে জিতে ফের বিধায়ক হওয়ার পথে হামিদুল রহমান। অন্যদিকে ইসলামপুরের তৃণমূল প্রার্থী আব্দুল করিম চৌধুরীর জয়ের ব্যবধান ৩৭ হাজার ভোট। চাকুলিয়াতে ভোটের আগে পিছিয়ে থাকা তৃণমূলের আরফিন আজাদ এবার ৩০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন।
বিজেপি আশায় জল
লোকসভায় বিজেপি ভালো ভোট পাওয়ায় গেরুয়া বাহিনীর আশা ছিল বিধানসভাতে অন্তত দুটো আসন তারা বের করতে পারবেন ইসলামপুর থেকে। সেই আশাতেই কাটমানি, সিন্ডিকেট রাজ সহ বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূলকে বিঁধেছিলেন এলাকার মানুষ। তাতে কাজ হয়নি।
সংখ্য়ালঘু ভোট বিরুদ্ধে গিয়েছে বিজেপির
তবে সংখ্যালঘু ভোট বিজেপির বিরুদ্ধে যাওয়ায় এবং বিজেপির প্রার্থী ঘোষণার পর দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব বিজেপিকে ভোট এর মুখে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। বিজেপি নিজের দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝোলানো, মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী পোষ্টারে আগুন দেওয়া মতো ঘটনাও সামনে আসে। তবে ভোটের কয়েকদিন আগে থেকেই হেভিওয়েট প্রচারে অনেকটাই অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটে গিয়েছিলো বলে মনে হচ্ছিল। যদিও শেষমেষ তা যে হয়নি তা ফলেই প্রকাশ।
দুই দলের নেতৃত্বের দাবি
উত্তর দিনাজপুর তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল এর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের উপর সাধারণ মানুষ আস্থা রেখেছে কোনরকম ধর্মীয় মেরুকরণ নয়। বিজেপির জেলা সভাপতি সুরজিত সেন অবশ্য শাসকদলের দিকেই মেরুকরণ রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন। তবে হারের কারণ পর্যালোচনা করে পদ্ধতি বদলানো দরকার বলেও তিনি স্বীকার করেছেন।