বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় জেলের মেঝেতে। তারপর সাহ্যিত যে জীবনের ধ্য়ানজ্ঞান হয়ে উঠবে, কে জানত! এখন মাঝে মধ্যে ডাক পড়ে সাহিত্য সভায় অংশ নেওয়ার জন্য। তাঁর উত্তরণের কথা নতুন করে জানার জন্য।
রাজনীতির সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা নতুন কিছু নয়। বলা যেতে পারে, সাতের দশকে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এবার সরাসরি ভোটের ময়দানে।
অনুষ্ঠানে সম্বর্ধনা দেওয়ার সময় আরও অনেক জিনিসের সঙ্গে তুলে দেওয়া হয় শাল। তবে জীবন তাঁকে দেখিয়েছে, গামছার মতো বন্ধু কম আছে। শুধু গা-মোছা নয়, তা দিয়ে অনেক কাজই করা যেতে পারে। প্রবল গরম থেকে বাঁচাতে পারে। পুঁটলি বেঁধে আনা যেতে পারে জিনিসপত্র। তাঁর সম্বর্ধনা সভায় তাঁর অনুরোধ থাকে, শাল নয়, তাঁকে দেওয়া হোক গামছা।
তাঁর জীবনের ঘটনা শুনলে চমকে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। তিনি এবার হুগলির বলাগড়ের তৃণমূল প্রার্থী মনোরঞ্জন ব্যাপারী। জেল থেকে বেরিয়ে সাহিত্যচর্চা এবং তারপর দুনিয়াজোড়া খ্যাতি।
তিনি উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান। দণ্ডকারণ্যে থাকতেন। তাঁর জীবন বিচিত্র অভিমুখে ধাবিত। দিন বদলের আশায় বাবার হাত ধরে কলকাতায় আসা। তখন থাকতেন যাদবপুরে। তবে পরিবর্তন কিছু হয়নি। ফলে ফিরে যেতে হল দণ্ডকারণ্যে। পরে আবার আসতে হবে কলকাতায়।
থাকার জায়গা নেই। ফলে রাত কাটাতে হয়েছে রেল স্টেশনে। ১৯৭২-৭৭ সালে রাজ্যে যে রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছিল, সেখানে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যেতে হয়েছিল জেলের মেঝেতেই চকখড়ি দিয়ে বর্ণমালার শুরু হয়। এবং সেই সময় পান জীবনের পরম সঙ্গীকে। সেটি হল গামছা। তা দিয়ে শুধু ঘাম মোছাযায়, এমন তো নয়। আরও অনেক কাজে লাগে। অনেক কিছু করা যায়।
যাদবপুর এলাকায় রাস্তায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সে সময় এক মহিলাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে কয়েকজন গুন্ডা। তিনি রুখে দাঁড়ান। মারদাঙ্গায় ততদিনে বেশ নামডাক হয়েছে তাঁর! মনা গুন্ডা নামে পরিচিত। কেউ কেউ ডাকতেন মদনা বলে। সেদিন রাতে যে মহিলা আক্রান্ত হয়েছিলেন বা হতে যাচ্ছিলেন, পরবর্তী সময় তাঁকেই বিয়ে করেন।
একদিন মহাশ্বেতা দেবী ফিরছিলেন। তখন মনোরঞ্জন ব্য়াপারী ওই এলাকায় রিক্সা চালান। কী মনে হল, তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন একটা শব্দের অর্থ জানতে চাই। কোন শব্দ? জানতে চাইলেন মহাশ্বেতা দেবী। জবাব এল, জিজীবিষা। একটি বইতে সেই শব্দ পেয়েছেন তিনি। সেটা মহাশ্বেতা দেবীর লেখা বইতে। পরে তিনি নিজের পরিচয় দেন।
সে সময় মহাশ্বেতা দেবী বর্তিকা পত্রিকা সম্পাদন করতেন। তাঁখে সেখানে লিখতে বলে। শুরু হল লেখালেখির কাজ। এরপর প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস জিজীবিষার গল্প। স্কুলের রান্নার ফাঁকে বসে পড়েন কাগজ, পেন নিয়ে। এখন দলিত সাহিত্য নিয়ে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে ভোটের প্রচার।