সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ঘোষণা থেকে শুরু, তারপর গোটা নির্বাচন পর্বে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল নন্দীগ্রাম (Nandigram)। এমনকী ফলাফল ঘোষণাকে ঘিরেও হল বিস্তর জলঘোলা। জয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেও পরাজিত হলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikary) মুখে। পালটা আবার আদলতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। সেক্ষেত্রে ভোট মিটলেও নন্দীগ্রামের আলোচনা যে মিটছে না তা বলাই যায়। কিন্তু সবকিছুর মাঝেও ঘুরেফিরে আসছে একটাই প্রশ্ন, এত ঘটনার পরে আদতে ঠিক কী পেল নন্দীগ্রাম?
সেক্ষেত্রে এই আলোচনায় যেতে গেলে আরও একবার ফিরে যেতে হবে নন্দীগ্রামের ইতিহাসে। একসময় এই নন্দীগ্রামেই শিল্পস্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করে রাজ্যের পূর্বতন বাম সরকার। কিন্তু তীব্র প্রতিরোধ ও আন্দোলনের মুখে পড়ে থমকে যায় সেই প্রকল্প। এক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন, সেই শিল্প শেষ পর্যন্ত নন্দীগ্রামে না হওয়ায় সিঙ্গুরের মতো সেখানকার মানুষের বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
পরবর্তী কালে রাজ্যে পালাবদল হয়, ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। কিন্তু তারপরেও নন্দীগ্রামের তেমন কোনও উন্নতি হয়নি বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। এমনকী এক সময়ের তৃণমূল নেতা তথা বর্তমানে নন্দীগ্রামের বিজেপির জয়ী প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীরও অভিযোগ, ক্ষমতায় আসার পর সেখানকার জন্য কিছুই করেনি রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, ক্ষমতায় আসার পর মমতা নন্দীগ্রামে খুব একটা যাননি বলেও দাবি শুভেন্দুর।
এবার অবশ্য নন্দীগ্রাম থেকেই লড়াই করেন মমতা। তাঁর নির্বাচনী কাজ পরিচালনার জন্য সেখানে বাড়িও নেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রচারের সময় মমতাকে বহুবার বলতেও শোনা গিয়েছে যে, জিতলে সেখানে গিয়ে মাঝেমধ্যে থাকবেন তিনি। এমনকী সেখানে একটি সিএমও-র দফতরও খুলবেন। নন্দীগ্রামকে নিজের 'মেজ বোন' বলে আখ্যা দেন মমতা। কিন্তু ফলাফলে দেখা গেল সেখানে পরাজিত হয়েছেন তিনি। এরপরেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, "আমি বেঁচে গিয়েছি, বরং ভাল হয়েছে, না হলে আমায় অত দূরে বারবার করে যেতে হত।" আর মমতার এই মন্তব্যের পরেই বিভিন্নমহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি না জেতার কারণে নন্দীগ্রামের দিকে নজর দেবেন না মমতা? তবে কি এবারেও কাঙ্খিত উন্নয়ন পাবেন না নন্দীগ্রামবাসী?
অন্যদিকে কেউ কেউ এবার বলছেন, শুভেন্দু অধিকারী জিতলেও বিজেপি (BJP) সরকার গড়তে না পারায় নন্দীগ্রামের উন্নয়নের জন্য বাস্তবে তিনি কতটা কী করতে পারবেন না নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ সরকারে তরফে সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলে প্রায়শই অভিযোগ তোলেন বিরোধী সাংসদ বিধায়করা। সেক্ষেত্রে এখন দেখার আদতে আগামী ৫ বছরে কতটা উন্নয়নের সিঁড়ি চড়তে পারে নন্দীগ্রাম।